E-Paper

ই-পিণ্ডদান ‘অনাচার’, সরগরম ভোটের বিহার

পিতৃপক্ষ মেলাকে ঘিরে পান্ডা-পুরোহিত থেকে শুরু করে অজস্র দোকানির রোজগার হয়। তাঁরাও অনলাইন পরিকল্পনায় প্রমাদ গুনছেন। আসরে নেমে গিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ০৬:৪৯
ফল্গুর তীরে পূর্বপুরুষের তর্পণ করে পিণ্ডদানের জন্য গয়ায় ভিড় করেন দেশের নানা প্রান্তের মানুষ।

ফল্গুর তীরে পূর্বপুরুষের তর্পণ করে পিণ্ডদানের জন্য গয়ায় ভিড় করেন দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। —প্রতীকী চিত্র।

কথায় আছে, মূল্য ধরে দিলে নাকি হাসিল হয় সব কাজই। হয়ে যায় প্রায়শ্চিত্তও। কিন্তু মূল্যের বিনিময়ে দূর থেকে এক খণ্ড পুণ্য অর্জনের সুযোগ করে দিতে গিয়ে গেরোয় পড়েছে বিহার সরকার! ‌ধর্মীয় আচারকে ব্যবসার হাঁড়িকাঠে চড়ানোর অভিযোগে ক্ষিপ্ত হচ্ছে পুরোহিত সমাজ, রুষ্ট হিন্দুত্ববাদী সংগঠনও। ভোটের মরসুমে সরগরম পাপ-পুণ্যের বিতর্ক।

ফল্গুর তীরে পূর্বপুরুষের তর্পণ করে পিণ্ডদানের জন্য গয়ায় ভিড় করেন দেশের নানা প্রান্তের মানুষ। আসেন বিদেশ থেকেও। ফি বছর পিতৃপক্ষে মেলা বসে এই কর্মকাণ্ডের জন্য। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর, পিতৃপক্ষের সূচনায় এই বছর যে মেলার সূচনা হবে। আর ঠিক এই সময়ে বিহার সরকারের পর্যটন দফতরের উদ্যোগে খুলে দেওয়া হয়েছে ই-পিণ্ড দানের পোর্টাল। যেখানে নাম নথিভুক্ত করে মূল্য ধরে দিলে আবেদনকারীর হয়ে স্থানীয় পুরোহিত পিণ্ড দান করবেন। সেই পর্ব সম্পন্ন হওয়ার ভিডিয়ো ফুটেজ সরকারি ব্যবস্থাপনায় পেন ড্রাইভ-বন্দি হয়ে পৌঁছে যাবে যথাস্থানে। অর্থাৎ শারীরিক ভাবে হাজির না-হয়েও কেউ দূর থেকে পিণ্ড দান সমাধা করতে পারবেন। গোল বেধেছে এখানেই। প্রশ্ন উঠেছে, এক জনের হয়ে পূর্বপুরুষের প্রতি পিণ্ড কী ভাবে অন্য কেউ দান করতে পারেন! এ তো ঘোর অনাচার!

গয়াপাল পান্ডারা (বংশানুক্রমে যাঁরা পিণ্ড দান করিয়ে আসছেন) আবেদন করতে শুরু করেছেন, অনলাইনের এই ‘ফাঁদে’ পা দেবেন না। তাঁদের মতে, বিষ্ণুপাদ মন্দিরে, অক্ষয়বটে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়া না-সারলে পিণ্ড দান সম্পূর্ণ হয় না। মোক্ষ লাভও হয় না। এই কাজ কিছুতেই অনলাইনে সম্ভব নয়। বিষ্ণুপাদ প্রবন্ধকারিণী সমিতির সভাপতি শম্ভুলাল বিট্টল গয়ার জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে আর্জি জানিয়েছেন এই অনলাইন উদ্যোগ বন্ধ করার। তাঁর মতে, ‘‘এতে ধর্মীয় আচারের অবমাননা হচ্ছে। সরকারের ব্যবসায়িক মনোভাবের কারণে পিণ্ড দানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হতে বসেছে।’’ তাঁর দাবি, ইতিপূর্বে বেসরকারি ভাবে যখন ই-পিণ্ড দানের ব্যবস্থার চেষ্টা হয়েছে, তখনও তাঁরা বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু গয়ায় সশরীরে হাজির হতে যাঁদের অসুবিধা আছে অথচ পি‌ণ্ড দানে ইচ্ছুক, তাঁদের জন্য দূর থেকে কাজ সারার সুযোগ থাকলে ক্ষতি কী? শম্ভুলালদের ব্যাখ্যা, পিণ্ড দানের নিয়ম মেনে চলাই বিধেয়। সেখানে অনলাইনের প্রশ্ন আসে না। ‘অস্মত পিতা’ বলে যে মন্ত্রোচ্চারণ করতে হয়, সেই কাজ এক জনের হয়ে অন্য কেউ করে দিলে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপার মতো ব্যাপার হয়! গোটা প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্যই জলে যায়।

পিতৃপক্ষ মেলাকে ঘিরে পান্ডা-পুরোহিত থেকে শুরু করে অজস্র দোকানির রোজগার হয়। তাঁরাও অনলাইন পরিকল্পনায় প্রমাদ গুনছেন। আসরে নেমে গিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদও। তাদের অভিযোগ, গরুড় পুরাণে যা লেখা আছে, মহাভারতে যে কাহিনি আছে, সব কিছুকে নস্যাৎ করে সনাতন ধর্মের অমর্যাদা করা হচ্ছে। তাদের আরও দাবি, প্রয়াত পরিজনদের নামে পিণ্ড দান করার জন্য সন্তান বা অন্যেরা বরাবরই সময়-সুযোগ মতো গয়ায় এসে থাকেন। অনলাইন পরিষেবা না-থাকলে কোনও মহাভারতই অশুদ্ধ হবে না! হাওয়া বুঝে গয়া জেলার কংগ্রেসও এই নিয়ে সই সংগ্রহ অভিযানের পরিকল্পনা নিচ্ছে।

বিতর্ক ধূমায়িত দেখে নড়ে বসেছেন গয়া টাউনের বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী প্রেম কুমারও। তিনি মানছেন, ‘‘প্রশ্নগুলো গুরুতর। ধর্মীয় আচারের প্রশ্ন, সেই সঙ্গে অনেকগুলো মানুষের রুজি জড়িত। এখন মনে হচ্ছে, অনলাইনের চেয়ে অফলাইনই ভাল।’’ মন্ত্রীর বক্তব্য, প্রশাসনিক স্তরে এই সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা হবে। জেলাশাসকের দফতর (প্রকল্পের নোডাল দফতর) সূত্রে অবশ্য খবর, এখনও মত বদলের কোনও নির্দেশ সরকারি স্তরে আসেনি।

কয়েক দিন আগেই গয়ায় গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আরজেডি-র লালুপ্রসাদ তখন ঠাট্টা করে বলেছিলেন, আসলে নীতীশ কুমারের পতন আসন্ন বুঝে মোদী পিণ্ড দান করে গেলেন! তাতে বিতর্ক বেধেছিল। গয়া এখন বুঝিয়ে দিচ্ছে, পিণ্ড নিয়ে তারা কোনও মশকরা চায় না! অনলাইনেও না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

vhp gaya Bihar Vishva Hindu Parishad

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy