—প্রতীকী চিত্র।
‘সুআচার-ব্যবহার’ই বিলকিস বানো মামলায় ১১ জন অপরাধীকে মেয়াদ শেষের আগে মুক্তি দেওয়ার ‘অন্যতম কারণ’ বলে আদালতে জানিয়েছিল বিজেপি পরিচালিত গুজরাত সরকার। কিন্তু সেই ‘সুআচারের’ খতিয়ান পেশ করতে নারাজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য। তথ্যের অধিকার আন্দোলনের কর্মী পঙ্কটি যোগের তরফে এ বিষয়ে আরটিআই আইনে যে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল, তা প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে গুজরাত সরকারের তরফে।
গত ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা অমৃত মহোৎসবের আগে বিলকিসকে ধর্ষণ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের খুনের দোষীদের মুক্তির সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল গুজরাত। এর পর আদালতের সম্মতিতে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। সরকারি তরফে জেলে ওই ১১ অপরাধীর ‘সুআচার-ব্যবহারে’র যুক্তি দেওয়া হলেও ‘তথ্য’ অন্য কথা বলছে বলেই অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে কী কী মানদণ্ড বিবেচনা করে ওই ১১ অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তথ্যের অধিকার আইনে তা জানতে চেয়েছিলেন পঙ্কটি। কিন্তু মুক্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্যানেলের বৈঠকের আলোচ্য বিষয় নিয়ে তথ্য দিতে চায়নি গুজরাত সরকার।
প্রসঙ্গত, ওই ১১ জন যখন বিভিন্ন সময় প্যারোলে জেলের বাইরে ছিল, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। দু’জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জমা পড়েছে। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করেছে। নিয়মভঙ্গের জন্য বেশ কয়েক জন জেলে শাস্তিও পেয়েছে। এই সব তথ্য জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়া গুজরাত সরকারের হলফনামা থেকেই।
অপরাধীদের মুক্তির বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা হয়েছিল, সেখানে বিচারপতিরা গুজরাত সরকারের কাছে নথিপত্র চেয়ে পাঠিয়েছিলেন। সেখানেই দেখা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকও অপরাধীদের মুক্তিতে সায় দিয়েছিল। কিন্তু যে ‘সুআচার-ব্যবহারে’র যুক্তি দেখিয়ে সেই মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে সরকারের জমা দেওয়া নথি খতিয়ে দেখলে। যদিও শেষ পর্যন্ত গত শনিবার বিলকিসের পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে ১১ ধর্ষক ও খুনির মুক্তির সিদ্ধান্তও বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গোধরা-কাণ্ডের পর গুজরাতে সাম্প্রদায়িক হিংসা চলাকালীন, ৩ মে দাহোড় জেলার দেবগড় বারিয়া গ্রামে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। গ্রামের বাসিন্দা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বিলকিসকে গণধর্ষণ করা হয়। বিলকিসের চোখের সামনেই তাঁর ৩ বছরের মেয়েকে পাথরে আছড়ে মারে হামলাকারীরা। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। তাঁর পরিবারের আরও কয়েক জন সদস্যকে হত্যা করা হয়। এই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়ে মুম্বইয়ের সিবিআই আদালতে কঠোর সাজার পক্ষে সওয়াল করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল ওই বিশেষ আদালত। মামলা চলাকালীন ১ জনের মৃত্যু হয়। বাকি ১১ জন ধর্ষক ও খুনি অগস্টে মুক্তি পাওয়ার পরে গোধরার বিজেপি নেতৃত্বের তরফে তাদের সংবর্ধনারও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
মুক্তি পাওয়া ১১ জন অপরাধী ১৪ বছরেরও বেশি জেলে থেকেছে বলে জানিয়েছে গুজরাত সরকার। কিন্তু নথি বলছে, তারা প্রায় সকলেই হাজার দিনেরও বেশি প্যারোলে থাকার সুযোগ পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই প্যারোলের নিয়মভঙ্গ করে নির্দিষ্ট দিনের চেয়ে অনেক দেরিতে জেলে ফিরেছে। ১০ দিন বা তার কম দেরি হলে তাদের সাবধান করা হয়েছে, কখনও এক মাসের জন্য ক্যান্টিনের সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে আরও অনেক বেশি দেরি করলে ‘আর্নড রেমিশন’-এর সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের সাজাপ্রাপ্তরা জেলে নিয়মানুবর্তিতা পালনের বিনিময়ে মুক্তি এগিয়ে আনার সুবিধা পেয়ে থাকেন। তাকেই আর্নড রেমিশন বলা হয়।
বিলকিস-কাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত রাজুভাই বাবুলাল সোনি ২০১৫ সালে ১৯৭ দিন দেরিতে জেলে ফিরে ‘আর্নড রেমিশন’-এর সুবিধা হারিয়েছিল। যশবন্তভাই চতুরভাই রাওয়াল ৭৫ দিন দেরিতে ফিরে ৩৭৫ দিনের জন্য আর্নড রেমিশন খুইয়েছিল। অর্থাৎ জেলেও নিয়মভঙ্গের জন্য শাস্তি পাওয়ার নজির রয়েছে এই অপরাধীদের। অথচ সেগুলো দৃশ্যতই তাদের ‘সুআচার’ প্রমাণে কোনও বাধা হয়নি। এ ছাড়া শৈলেশ চিমনলাল ভাট, গোবিন্দ নাই-সহ একাধিক সাজাপ্রাপ্তের বিরুদ্ধে প্যারোলে জেলের বাইরে বেরিয়ে বিলকিস মামলার সাক্ষীদের ভয় দেখানো এবং খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগও ওঠে বিভিন্ন সময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy