Advertisement
E-Paper

ঝাঁকে ঝাঁকে তির, সেনাপতি অবিচল

বস্তুত, প্রবল আক্রমণাত্মক বিজেপি-র মোকাবিলায় মানিকবাবুর অস্ত্র এখন ‘সৌজন্য’। বিজেপি-র এক ঝাঁক নেতা-মন্ত্রী দেশের নানা জায়গা থেকে আসছেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমকে তুলোধোনা করছেন, চলে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ হলেও তাঁদের আতিথেয়তায় কোনও কার্পণ্য করছে না মানিকবাবুর সরকার।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৫১
মানিক সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

মানিক সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

তাঁর পাঞ্জাবির কাপড় নাকি আসে অমদাবাদ থেকে। চোখের চশমা থেকে পায়ের জুতো, সবই নাকি মহার্ঘ। ভিন্ রাজ্যে ট্রেনে সফর করে যতই তিনি ‘দরিদ্র মুখ্যমন্ত্রী’র ভেক ধরে থাকুন, ত্রিপুরার এক জেলা থেকে অন্য জেলায় চপারে উড়ে যান! কমিউনিস্ট পার্টিসুলভ কায়দায় মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে তাঁর একটা ভাবমূর্তি নির্মাণ করা আছে, যা নাকি আসলে একেবারেই বাস্তব নয়!

ভোটের হাওয়া যত উত্তপ্ত হচ্ছে ত্রিপুরায়, তত মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে এ ভাবেই নিশানা করছে বিজেপি। রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক থেকে শুরু করে অন্য রাজ্য থেকে আসা নেতারা আক্রমণ শুরু করে দিয়েছেন ব্যক্তি মানিককে। যুদ্ধক্ষেত্রে এমন সব আক্রমণে ব্যথিত হলেও ত্রিপুরার বিধানসভা ভোটকে গুজরাতের নির্বাচন হয়ে উঠতে দিতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী। কিছু ক্ষেত্রে মানহানির মামলা গড়িয়েছে আদালতে। কিন্তু নীরবতার মন্ত্রে আপাতত লক্ষ্যে স্থির থাকতে চাইছেন মানিকবাবু। প্রশ্ন করলে এখন তাঁর একটাই জবাব— ‘‘যা বলার, দল বলবে।’’

বস্তুত, প্রবল আক্রমণাত্মক বিজেপি-র মোকাবিলায় মানিকবাবুর অস্ত্র এখন ‘সৌজন্য’। বিজেপি-র এক ঝাঁক নেতা-মন্ত্রী দেশের নানা জায়গা থেকে আসছেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং সিপিএমকে তুলোধোনা করছেন, চলে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ হলেও তাঁদের আতিথেয়তায় কোনও কার্পণ্য করছে না মানিকবাবুর সরকার। বিজেপি বা তার নানা সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা এলে তাঁদের থাকার জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে আগরতলায় রাজ্য অতিথিশালার ভিভিআইপি স্যুইট। যা সাধারণ ভাবে সংরক্ষিত থাকে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিদেশি অভ্যাগতদের জন্য। কেন্দ্রীয় শাসক দল বা তাদের কোনও সংগঠনের অতিথি নেতাদের জন্য নিরাপত্তা বন্দোবস্তের দাবি জানানো হলে তা-ও বিনা বিতর্কে মঞ্জুর। এই মুহূর্তে যেমন আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের ‘ত্রিপুরা প্রবাসে’র জন্য নিরাপত্তার আয়োজনে ফাঁক রাখছে না রাজ্য।

দলের প্রতিও সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মানিকবাবুর পরামর্শ, বিজেপি নেতাদের আক্রমণের জবাব অবশ্যই দিতে হবে। কিন্তু গুজরাতে ভোটের বৈতরণী পার হতে প্রধানমন্ত্রী মোদী যে ভাবে তাঁর পূর্বসূরি মনমোহন সিংহকে পাকিস্তানের সঙ্গে জড়িয়ে কাঠগড়ায় তুলেছেন, আবার মোদীকে বিঁধতে গিয়ে মণিশঙ্কর যা করেছেন, এর কোনওটাই করার দরকার নেই! ঘনিষ্ঠ মহলে মানিকবাবুর মন্তব্য, দেশের প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই এ দিকে আসবেন। আরএসএসের প্রধানও আসছেন। ওঁরা আসুন, যা প্রাণে চায়, বলুন। যত বলবেন, মানুষের বিচার করতে তত সুবিধা হবে!

ত্রিপুরায় বাম শাসনের প্রাণভোমরা মানিকবাবুই, এটা মাথায় রেখে গেরুয়া শিবির যত তাঁকে ঘোড়া থেকে ফেলার চেষ্টায় শান দিচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী ততই স্বাভাবিক থাকছেন। ফি সোম, বুধ ও শুক্রবার বাড়িতে আম দরবার যেমন বসতো, বসছে। ভোট সামনে বলে আলাদা করে রাজ্য সফরও শুরু করেননি। ভোট ঘোষণা হলে প্রচারে যাবেন। এমন কোনও কিছুই তিনি করতে নারাজ যাতে বার্তা চলে যায় যে, মুখ্যমন্ত্রী বিচলিত! ঘনিষ্ঠ মহলে মানিকবাবু বলছেন, ‘‘সারা বছরই জেলায় জেলায় যাই। যা বলার বলি। মানুষ শোনেন। যা ভরসা করার, করেন। আলাদা করে কিছু করার কী আছে?’’

Manik Sarkar CPM Tripura Chief Minister BJP মানিক সরকার
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy