Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Assembly By Elections

ইন্ডিয়া-৪, এনডিএ-৩: ত্রিপুরার ক্ষতি বাংলায় পূরণ, বাকি উপনির্বাচনে সব যার-যার তার-তার

সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে বিজেপির দখলে ছিল তিনটি। উপনির্বাচনেও তিনটি আসনেই জিতেছে। তবে বাংলার ধূপগুড়ি খুইয়েছে কেন্দ্রের শাসকদল। দখল করেছে ত্রিপুরায় বামেদের জেতা বক্সনগর।

BJP wins 3, INDIA 4 in the by elections of 7 assembly seats in 6 states

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৯:১০
Share: Save:

ধুপগুড়িতে জয়ের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এটা ইন্ডিয়ার জয়।’’ যা ধুপগুড়ি ছাড়িয়ে সারা দেশের পক্ষেও তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, ছ’রাজ্যের সাতটি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে এনডিএ তথা বিজেপিকে পিছনে ফেলেছে ‘ইন্ডিয়া’। তা-ও আবার ‘পূর্ণ ঐক্য’ ছাড়াই। সাতটির মধ্যে চারটি কেন্দ্রে জিতেছে ‘ইন্ডিয়া’র চার শরিক— কংগ্রেস, তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। তিনটি পেয়েছে বিজেপি। বাংলার ধূপগুড়ির জেতা আসন তৃণমূলের কাছে খোয়ালেও ত্রিপুরায় বামেদের জেতা একটি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি।

আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে হিন্দি বলয়ের তিন গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানের পাশাপাশি দাক্ষিণাত্যের তেলঙ্গানা এবং উত্তর-পূর্বের মিজোরামে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। তার আগে উপনির্বাচনের এই ফল বিজেপিকে কিছুটা চাপে রাখবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। বিশেষত উত্তরপ্রদেশ লাগোয়া মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ড ও বাঘেলখণ্ড এবং পূর্ব রাজস্থানের জাঠ বলয়ে বিরোধী ঐক্য হলে ‘ঘোসী’-কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

গত ১ সেপ্টেম্বর মুম্বইয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘যত দূর সম্ভব ঐক্যবদ্ধ লড়াই’-এর প্রতিশ্রুতি দিলেও উপনির্বাচনের কার্যক্ষেত্রে তা পূরণ করতে পারেনি ‘ইন্ডিয়া’। ধূপগুড়িতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়েছেন বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী। উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বরে কংগ্রেসে বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়েছেন সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব। আবার কেরলে দেখা গিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএমের কার্যত দ্বিমুখী লড়াই। সেখানে তৃতীয় স্থানাধিকারী বিজেপি প্রার্থীর ঝুলিতে ভোট নেহাতই অকিঞ্চিৎকর।

বিজেপির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ধূপগুড়ির ‘ক্ষতি’ পূরণ হয়েছে ত্রিপুরার বক্সনগর বিধানসভায়। উপনির্বাচনে ত্রিপুরার ওই কেন্দ্রে ৩০ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। অথচ, মাত্র সাত মাস আগে ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি ভোটে ওই কেন্দ্রে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। তাঁর মৃত্যুতে ওই আসনে উপনির্বাচন হয়। জলপাইগুড়ি জেলার জেতা আসন ধূপগুড়ি হারানোর ‘ক্ষতি’ বিজেপি এ ভাবেই পূরণ করেছে আর এক বাঙালি প্রধান রাজ্য ত্রিপুরায়। ত্রিপুরার আর এক বিধানসভা কেন্দ্র ধনপুরে গত ফেব্রুয়ারির বিধানসভা নির্বাচনে সাড়ে তিন হাজার ভোটে জিতেছিলেন বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক। সাংসদ পদ ধরে রাখতে তিনি বিধায়ক পদে ইস্তফা দেওয়ায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কেন্দ্র উপনির্বাচন হয়েছে। সেখানে এ বার বিজেপির জয়ের ব্যবধান বেড়ে প্রায় ১৯ হাজারে পৌঁছেছে। যদিও সাত মাস আগে আলাদা ভাবে লড়ে সাড়ে ৮ হাজার ভোট পাওয়া জনজাতি দল তিপ্রা মথা এ বার সিপিএমকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু তাতে বিজেপির জয় আটকানো যায়নি।

একই ভাবে বাংলার পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের ডুমরি বিধানসভা আসনে কাজে দেয়নি ‘আজসু’ প্রার্থীকে বিজেপির সমর্থন। কংগ্রেস সমর্থিত জেএমএম প্রার্থী সেখানে ১৭ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেএমএম প্রার্থী ৭১ হাজার ভোট পেয়ে সেখানে জিতেছিলেন। বিজেপি এবং আজসুর দুই প্রার্থীই ৩৬ হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন। অর্থাৎ ভোটের পাটিগণিতের হিসাব সেখানে কাজে লাগেনি।

বামশাসিত কেরলের পুথুপল্লিতে মূল লড়াই ছিল ‘ইন্ডিয়া’র দুই শরিক কংগ্রেস এবং সিপিএমের মধ্যে। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডির মৃত্যুতে খালি হওয়া এই আসনে এ বার প্রায় ৩৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন কংগ্রেস প্রার্থী চান্ডি উম্মেন। তিনি প্রয়াত চান্ডির পুত্র।

বিদায়ী বিধায়কের দলবদলের পরেও উত্তরপ্রদেশের ঘোসি আসনটি দখলে রেখেছে সমাজবাদী পার্টি। প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিএসপির প্রাক্তন পরিষদীয় নেতা দারা সিংহ চৌহান ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী হিসাবে সেখানে ২২ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। কিন্তু কয়েক মাস আগে দল বদলে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। উপনির্বাচনে দারাকেই প্রার্থী করেছিল বিজেপি। কিন্তু কংগ্রেস সমর্থিত সমাজবাদী প্রার্থী সুধাকর সিংহের কাছে দারা হেরেছেন ৪২ হাজারেরও বেশি ভোটে।

উত্তরাখণ্ডে গত চারটি বিধানসভা ভোটে জেতা বাগেশ্বর বিধানসভায় এ বারও জিতেছে বিজেপি। প্রভাবশালী মন্ত্রী চন্দনরাম দাসের প্রয়াণে শূন্য হওয়া ওই আসনে উপনির্বাচনে ২ হাজারের সামান্য বেশি ভোটে হেরেছে কংগ্রেস। অথচ ২০২২-এ বিজেপি মন্ত্রী চন্দনরামের জয়ের ব্যবধান ছিল ১২ হাজারের বেশি। পাশের রাজ্য উত্তরপ্রদেশের ঘোসিতে কংগ্রেস সমর্থন করেছিল অখিলেশের দলকে। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে উত্তরাখণ্ডের বাগেশ্বরে প্রার্থী দিয়ে সমাজবাদী পার্টি বিজেপির জয়ের পথ সুগম করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE