Advertisement
E-Paper

রেখেছ বাঙালি করে, বাঙালি করোনি! ভুলে গিয়ে পদ্মের দিল্লিজয়ের লাভের গুড় খেতে ব্যস্ত বাংলার বিজেপি

দিল্লির চারটি বিধানসভায় বাঙালিদের আধিক্য রয়েছে। সেগুলি হল করলবাগ, গ্রেটার কৈলাস, গোন্ডা এবং নজ়ফগড়। এর মধ্যে করোলবাগ বাদ দিয়ে তিনটিতে জিতেছে বিজেপি।

শুভেন্দু অধিকারী।

শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩২
Share
Save

দিল্লির ভোটে বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি। সেই জয়ে জুড়ে রয়েছেন রাজধানীর অধিবাসী বাঙালি ভোটারেরাও। ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যেতেই বঙ্গ বিজেপির একটি অংশ জয়ের নেপথ্যে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার, অগ্নিমিত্রা পালেদের ‘কৃতিত্ব’ প্রচার করতে শুরু করেছে। কারণ, বাংলার এই তিন নেতানেত্রী দিল্লির বাঙালি-অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে প্রচার করেছিলেন।

ভিন্‌ রাজ্যের বাঙালি মহল্লায় বাংলার নেতাদের প্রচারে পাঠানো সব দলই আবহমান কাল ধরে করে আসছে। কংগ্রেস করে। বিজেপিও করে। বাংলাভাষী ত্রিপুরায় তৃণমূলের নেতাদের যাতায়াতও নতুন নয়। এমনকি, বাংলার শাসকদল তৃণমূল বাঙালি মহল্লায় দলের ‘তারকা’ প্রচারকদেরও নিয়মিত পাঠিয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট প্রার্থী জিতলে কৃতিত্ব নেওয়াও দস্তুর। তবে হারলে ‘দায়’ নেওয়ার জন্য তাঁদের পাওয়া যায় না। সেই ‘রীতি’ মেনেই শনিবার বাংলার বিজেপি নেতাদের একটি অংশ তিন নেতানেত্রীর ‘প্রচারমাহাত্ম্য’ প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে দিল্লির রাজনীতি এবং ভোটারকুল সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের বক্তব্য, এই জয়ের সঙ্গে বাংলাভাষা বা বাঙালিয়ানার সম্পর্ক তেল এবং জলের মতো। কারণ প্রথমত, দিল্লির বাঙালি ভোটারেরা বাঙালি হলেও অধিকাংশই ‘বাঙালি’ নন। দুর্গাপুজোর মতো সার্বজনীন উৎসব, আচারবিচার বা খাদ্যাভ্যাসের মতো দীর্ঘদিন ধরে লালিত বাঙালি অভ্যাস তাঁদের জীবনে রয়েছে ঠিকই। কিন্তু এর সঙ্গে বাংলার রাজনীতি বা বাঙালি হিসেবে রাজনৈতিক আদর্শের কোনও সম্পর্ক নেই। দ্বিতীয়ত, বাঙালিরা একজোট হয়ে কোনও রাজনৈতিক দলকে ভোট দিয়েছেন বা দিচ্ছেন, এমন দৃষ্টান্তও কেউ মনে করতে পারছেন না। এক প্রবাসী বাঙালির কথায়, ‘‘দিল্লির মতো একটা কসমোপলিটান শহরে ভোট হয় যার যার রাজনৈতিক মতামত, পছন্দ বা অপছন্দের দলের নীতি অনুযায়ী। এর সঙ্গে বাঙালি-অবাঙালির কোনও সম্পর্ক নেই।’’

তবে শুভেন্দু-শিবিরের তরফে দিল্লি বিজয় নিয়ে বাড়তি প্রচারের কারণ রয়েছে। ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোটের দায়িত্বে ছিলেন শুভেন্দু। বাঙালি মহল্লাতেও প্রচারেও গিয়েছিলেন শুভেন্দু এবং অগ্নিমিত্রা। হেমন্ত সোরেনের কাছে ঝাড়খন্ডে বিজেপির হারের পরে তৃণমূল বলতে শুরু করে, শুভেন্দু বাংলায় বিজেপিকে ডুবিয়েছেন। ঝাড়খণ্ডেও তিনি ব্যর্থ। দিল্লির জয় তার ‘পাল্টা’ বক্তব্য হিসেবে বিতর্কের টেবিলে রাখা হচ্ছে।

দিল্লিতে ‘বাঙালি অধ্যুষিত’ চারটি বিধানসভা আসনের মধ্যে তিনটিতে জিতেছে বিজেপি। যে চারটি বিধানসভায় বাঙালিদের আধিক্য রয়েছে, সেগুলি হল করোলবাগ, গ্রেটার কৈলাস, গোন্ডা এবং নজ়ফগড়। এর মধ্যে করোলবাগ ছাড়া তিনটিতেই জিতেছে বিজেপি। তার পরেই বঙ্গ বিজেপির একটা অংশ বলতে শুরু করেছে, এ বার বাংলার বাঙালিরাও ‘মন’ বদলাবেন। যে বক্তব্যকে ‘শিশুসুলভ চপলতা’ বলে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল।

উল্লেখ্য, গত বার ভোটে গোন্ডা ছিল বিজেপির দখলে। এ বার দু’টি আসন আপের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। রাজধানীর বাঙালি মহল্লায় দু’দিন থেকে প্রচার করেছিলেন শুভেন্দু। দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ভোট চেয়েছিলেন সুকান্ত, অগ্নিমিত্রারা। দিল্লি জয়ের পরে সুকান্ত বলেছেন, ‘‘এ বার লক্ষ্য বাংলা। ২০২৬ সালের নির্বাচনে তৃণমূলের হার শুধু সময়ের অপেক্ষা। মুখে যতই বিশ্ব বাংলা বলা হোক। আসলে এটা নিঃস্ব বাংলা। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাংলায় আমরা খুব শীঘ্রই গেরুয়া পতাকা তুলব।’’ শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘দিল্লির বাঙালিরা বাংলার দুর্দশা, বেকারদের দুরাবস্থা, আরজি করের ঘটনায় মায়ের চোখের জলের প্রতিশোধ নিয়েছেন।” অগ্নিমিত্রার বক্তব্য, ‘‘কেজরীওয়ালের দুর্নীতি সহ্য না করতে পেরেই দিল্লির বাঙালি ভোটাররা বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাই আমাদের আশা, তৃণমূল সরকার যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে, তা দেখে ২০২৬ সালে বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ক্ষমতাচ্যূত করবেন।’’

তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘এগুলো শিশুসুলভ চপলতা। এই নেতারাই তো ঝাড়খণ্ডের বাঙালি মহল্লায় প্রচারে গিয়েছিলেন। সেখানে কী হল? এর সঙ্গে বঙ্গ রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’ রসিকতার সুরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এর পর শুভেন্দুরা না দাবি করে বসেন, আমেরিকার যে বাঙালিরা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, সেটাও তাঁদের কৃতিত্ব!’’

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ‘বাংলা ও বাঙালি-বিরোধী’ দল বলে প্রচার করে তৃণমূল। সেই ভাষ্যেই ২০২১ এবং ২০২৪ সালের ভোটে সাফল্য পেয়েছিল জোড়াফুল শিবির। ২০২১ সালের ভোটে বিজেপি প্রচারে সাড়া জাগালেও ভোটে তার প্রভাব পড়েনি। আসন বাড়িয়ে তৃতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা। সেই ফলাফলের পরে প্রবীণ বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেছিলেন, হিন্দিভাষী নেতাদের আস্ফালনের জন্যই বাঙালি বিজেপিকে গ্রহণ করল না। প্রচারেও বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিল তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটেও তৃণমূলের স্লোগান ছিল ‘জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন।’ অনেকের মতে, সে সব মাথায় রেখেই রাজ্য দিল্লির বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় বিজেপির জয়কে ‘বাঙালিদের জয়’ হিসাবে দেখাতে চাইছে। সেই সূত্রেই ঝেড়ে ফেলতে চাইছে ‘বাংলা-বিরোধী’ তকমাও।

Delhi Election Results 2025 BJP Suvendu Adhikari

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}