সিঙ্গাপুরের শাংগ্রি লা বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে বাগ্যুদ্ধে জড়ালেন ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বা সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহান এবং পাকিস্তানের সেনা কর্তা জেনারেল সাহির শমশাদ মির্জ়া। সাম্প্রতিক সংঘাতের কথা ফিরিয়ে এনে দু’জনেই একে অন্যকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন। তবে কেউই কারও সঙ্গে মুখোমুখি পার্শ্ববৈঠকে বসেননি।
সপ্তাহান্তে শাংগ্রি লা বৈঠকে ‘আঞ্চলিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাকর্তা। আঞ্চলিক সঙ্কট এবং ভারত-পাক কৌশলগত স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গে জেনারেল চৌহান বলেন, ‘‘দুই হাত জোড়া লাগলে তবেই তালি বাজে। আশা করি, ওরা সেটা বুঝবে।’’ কড়া ভাবে তিনি বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ ভারতের সহ্যের সীমার লাল দাগটি টেনে দিয়েছে। এর থেকে পাকিস্তান আগামী দিনে শিক্ষা নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন চৌহান। অন্য দিকে পাক সেনা কর্তা তাঁর বক্তৃতায় কাশ্মীরকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসে তাঁর উদ্বেগ জানিয়েছেন।
ভারতের সেনা সর্বাধিনায়কের কথায়, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সহ্যের সীমার লাল দাগ টেনে দিয়েছে অপারেশন সিঁদুর। এই অভিযান থেকে আমাদের প্রতিপক্ষ কিছু শিক্ষা নেবে, আশা রাখছি। তাদের এটা বোঝা উচিত যে, ভারতের সহ্যক্ষমতার একটা সীমা আছে।’’ ভারতে পর পর সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং সীমান্ত সন্ত্রাসের উল্লেখ করে জেনারেল চৌহান বলেন, ‘‘গত দু’দশকের বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ছায়াযুদ্ধ (প্রক্সি ওয়ার) চলছে। এর ভুক্তভোগী আমরা। এতে ভারতের বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ বার আমরা এটা বন্ধ করতে চাই।’’
অন্য দিকে পাকিস্তানের সেনাকর্তা জেনারেল মির্জ়া বলেছেন, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভারত ব্যর্থ হচ্ছে। আর এই প্রসঙ্গেই কাশ্মীর প্রসঙ্গ টেনে এনে তাঁর বক্তব্য, সংঘর্ষ বা সংঘাত কোনও সমস্যার চূড়ান্ত সমাধানের রাস্তা নয়। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এর পর মধ্যস্থতার সুযোগও পাওয়া যাবে না বলে দাবি করেছেন তিনি। মোদী সরকারকে নিশানা করে মির্জ়া বলেন, ‘‘ভারতে একটি চরমপন্থী রাজনীতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সঙ্কট মোকাবিলার কোনও ব্যবস্থা সেখানে নেই।’’ এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে এর পর সংঘাত এবং ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। তাঁর দাবি, তখন বিশ্বশক্তিগুলি চাইলেও মধ্যস্থতা করতে পারবে না। সন্ত্রাসবাদের কারণে পাকিস্তানেরও বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেনারেল মির্জ়া।
প্রসঙ্গত সিঙ্গাপুর থেকেই একটি সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহান মেনে নিয়েছিলেন, পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল। জানিয়েছিলেন, ভারত তার ত্রুটি শুধরে নিয়ে একই কৌশলে আবার হামলা চালায় এবং সাফল্য পায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)