Advertisement
E-Paper

মাঠে যেতে আপত্তি, শ্বশুরবাড়ি ছাড়লেন বধূ

সাত বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে ঘর করছেন। কিন্তু সাহসটা দেখিয়েছেন এত দিনে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে শত অনুরোধ করেও এত বছরে যা আদায় করতে পারেননি, অবশেষে সেই অধিকার পেতে স্বামীর ঘর ছাড়লেন ঝাড়খণ্ডের গুমলার জেলার বাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা সীমা সাউ। তাঁর দাবি একটাই।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৭

সাত বছর ধরে স্বামীর সঙ্গে ঘর করছেন। কিন্তু সাহসটা দেখিয়েছেন এত দিনে। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে শত অনুরোধ করেও এত বছরে যা আদায় করতে পারেননি, অবশেষে সেই অধিকার পেতে স্বামীর ঘর ছাড়লেন ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার বাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা সীমা সাউ। তাঁর দাবি একটাই। শুধু নিজেদের বাড়িতে একটা শৌচাগার তৈরি করা।

ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারবার জোর দিয়েছেন স্বচ্ছ ভারত অভিযানের উপর। আর এই অভিযানের প্রচারের মুখ হিসেবে কেন্দ্র বেছে নিয়েছে বিদ্যা বালনের মতো অভিনেত্রীকে। টিভিতে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনী প্রচারেও দেখানো হচ্ছে বাড়িতে শৌচাগার তৈরির উপকারিতা। একটি বিজ্ঞাপনে যেমন দেখানো হয়, বাড়িতে শৌচাগার নেই বলে সদ্য বিবাহিতা কনেকে ঘোমটা খুলে ফেলার কথা বলছেন বিদ্যা। সেই সঙ্গে কনের শাশুড়িকে শৌচাগার তৈরির পরামর্শ দিচ্ছেন।

সাত বছর আগে যেটা করে দেখানোর সাহস পাননি, টিভিতে এখন এই সব বিজ্ঞাপন দেখে দিন কয়েক আগে সেই কাজটা করে ফেলেছেন সীমা। শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে দুই সন্তানকে নিয়ে সটান রাঁচির বাপের বাড়িতে এসে উঠেছেন। তাঁর গোঁ একটাই। বাড়িতে শৌচাগার তৈরি না হলে বাসিয়ায় আর পা দেবেন না তিনি। শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছেন রাজ্য মহিলা কমিশনের কাছেও।

কমিশনের চেয়ারপার্সন মহুয়া মাজির কাছে লিখিত অভিযোগ করে সীমা জানিয়েছেন, বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁর স্বামী তাঁর কথায় কান দেননি। তাই এত বছরেও তাঁর শ্বশুর বাড়িতে একটা শৌচাগার তৈরি হয়নি। প্রাকৃতিক কাজ সারতে খোলা মাঠে যেতে অস্বস্তি বোধ করেন সীমা।

তাঁর কথায়, “আমার বাপের বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে। আমি তাতেই অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ভীষণ সমস্যায় পড়ি। প্রত্যন্ত ওই গ্রামে সকলেই প্রাকৃতিক কাজ সারতে মাঠে বা জঙ্গলে যান। আমার অস্বস্তি হত। রাতবিরেতে মাঠ বা জঙ্গলে যেতে খুব ভয়ও করে। আর সে জন্যই আমি স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে এসেছি। তা ছাড়া, এই ব্যবস্থাটা খুব অস্বাস্থ্যকরও।”

সীমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি যা করেছেন সেটা তো অনেকটা সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের বিজ্ঞাপনের মতো। আপনি কি সেই বিজ্ঞাপন দেখেই উৎসাহিত হয়েছিলেন? গুমলার এই গৃহবধূর জবাব, “ওই বিজ্ঞাপনটি যথার্থ। এমন ঘটনার প্রতিবাদ হওয়া উচিত। প্রকাশ্যে মহিলাদের প্রাকৃতিক কাজ সারাটা যে অসম্মানের সেটা আমি আমার স্বামী আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের বোঝাতে পারিনি।”

গত কাল রাজ্য মহিলা কমিশনের অফিসে এসেছিলেন সীমার স্বামী ভুগুন সাউ। বসেছিলেন কাঁচুমাচু মুখে। গ্রামে নিজেদের খেত রয়েছে। স্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে ফিরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিতে অনুরোধ করছিলেন চেয়ারপার্সন মহুয়াদেবীকে। পাল্টা ধমক দেন চেয়ারপার্সন। প্রকাশ্যে প্রাকৃতিক কাজ সারতে গিয়ে স্ত্রীর বিপদ হলে তার দায় যে ভুগুন এড়াতে পারবেন না এমনটাও জানান মহুয়াদেবী। দ্রুত বাড়িতে শৌচাগার তৈরির জন্য ভুগুনকে নির্দেশও দেন তিনি। পরে হাসতে হাসতে মহুয়াদেবী বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদের ঘটনার মিটমাট আমরা করে দিই। কিন্তু এমন ঘটনা আগে দেখিনি।”

ভুগুন জানিয়েছেন, তাঁদের গ্রামে পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু সকলেই বাড়ির বাইরে প্রাকৃতিক কাজ সারেন। উল্লেখ্য এ বছরের বাজেটে ঝাড়খণ্ড সরকার প্রত্যন্ত গ্রামে শৌচাগার তৈরির জন্য একটি বৃহৎ পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু তাতেও যে খুব একটা লাভ কিছু হয়নি, তা সীমার এই আচরণেই স্পষ্ট।

সীমার এই প্রতিবাদ অবশ্য মনে করিয়ে দিয়েছে আরও এক জনের নাম। উত্তরপ্রদেশের গৃহবধূ প্রিয়ঙ্কা ভারতী। বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে এসে দেখেছিলেন শৌচাগার নেই। সঙ্গে সঙ্গেই স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন প্রিয়ঙ্কা। ফিরেছিলেন বাড়িতে নতুন শৌচাগার তৈরি হওয়ার পরে। বিদ্যা বালনের মতো কেন্দ্রীয় সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযানের আর এক মুখ প্রিয়ঙ্কাও।

সেই তালিকায় বোধহয় আরও একটা নাম জুড়তে চলল।

ranchi prabal ganguly bride House wife sanitation system Jharkhand Gumla
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy