Advertisement
E-Paper

নজরে সোশ্যাল মিডিয়া, নতুন দায়িত্ব বৃন্দাকে

মার্ক জুকেরবার্গ ফেসবুক তৈরি করেছিলেন ২০০৪-এ। তার দু’বছর পরে তৈরি হয় টুইটার। ২০১৫-য় এসে সিপিএম সিদ্ধান্ত নিল, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য পার্টির তরফে বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলা দরকার। এত দিন পার্টির ওয়েবসাইট ছিল।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৭

মার্ক জুকেরবার্গ ফেসবুক তৈরি করেছিলেন ২০০৪-এ। তার দু’বছর পরে তৈরি হয় টুইটার।

২০১৫-য় এসে সিপিএম সিদ্ধান্ত নিল, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য পার্টির তরফে বিশেষ বাহিনী গড়ে তোলা দরকার। এত দিন পার্টির ওয়েবসাইট ছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় দলের কর্মীরা সক্রিয় ছিলেন, বহু নেতাও অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। কিন্তু সাংগঠনিক ভাবে পার্টির তরফে কিছু করা হয়নি। বেশ খানিকটা দেরি যে হয়ে গেল, তা সিপিএম নেতৃত্ব স্বীকার করছেন। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য এ বার আলাদা করে মাঠে নামছেন তাঁরা। লক্ষ্য, মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছনো এবং সোশ্যাল মিডিয়ার নানা বিতর্কে দলের মতামত তুলে ধরা। এ জন্য দেড়শো জনের একটি বাহিনী তৈরি হয়েছে। যার দায়িত্বে রয়েছেন বৃন্দা কারাট।

তবে ফেসবুক-টুইটারে আসার পাশাপাশি ভাষার পরিবর্তন ঘটানো যে দরকার, তা-ও সিপিএমের নেতারা মানছেন। তাঁদের বক্তব্য, দল এখনও যে ভাষায় কথা বলে চলেছে, এই হোয়াটসঅ্যাপের যুগে তা সিংহভাগেরই মগজে ঢোকে না। শ্রেণি সংগ্রাম, নয়া-সাম্রাজ্যবাদ বা বুর্জোয়া-জমিদার রাষ্ট্রের মতো শব্দব্রহ্ম আজকের দিনে অচল। দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর শেষ সর্বভারতীয় সম্মেলনেও বলা হয়েছিল, তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছতে তত্ত্বের কচকচানি বা গুরুগম্ভীর স্লোগান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কৃষক নেতারাও মানছেন, ‘বহুজাতিকের শোষণ থেকে কৃষকের মুক্তি চাই’-এর বদলে ‘কলকাতা হবে লন্ডন, কৃষকের হাতে লণ্ঠন’-এর মতো স্লোগান অনেক কার্যকরী।

যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে তাই প্রকাশ কারাটের সিদ্ধান্ত, মধ্যবিত্ত বা তরুণ প্রজন্মের উচ্চাশার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্লোগান তৈরি করতে হবে। নব্বইয়ের দশকে আর্থিক উদারীকরণের ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় কী পরিবর্তন এসেছে, তা দেখে রিপোর্ট তৈরি হয়েছে। ওই রিপোর্টকে ভিত করেই সিপিএম নেতৃত্ব বুঝতে চাইছে, কোন ভাষায় কথা বললে মানুষের কাছে পৌঁছনোর রাস্তা সহজ হবে। পার্টি কংগ্রেসের পরে সাংগঠনিক প্লেনামে তৈরি হবে নয়া স্লোগান, আন্দোলনের সহজ ও স্মার্ট ভাষা। যে ভাষায় ফেসবুক-টুইটারে কথা বলবে সিপিএম।

এক সময় সিপিএম কলকাতায় কম্পিউটার বসানোর বিরোধিতা করেছিল। যুক্তি ছিল, কম্পিউটার বসলে অনেকে চাকরি খোয়াবেন। পরে আবার সেই সিপিএমের সরকারই শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের চাকরির বন্দোবস্ত করতে সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে ডেকে এনেছিল। ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে ততটা শুচিবায়ু অবশ্য ছিল না। কিন্তু পার্টি কংগ্রেসের সাংগঠনিক রিপোর্টের পর্যালোচনায় স্বীকার করা হয়েছে, ‘যোগাযোগের এই সব নতুন মাধ্যমের গুরুত্ব বুঝতে পার্টি দেরি করেছে। আমাদের লক্ষ লক্ষ সমর্থক সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে এক সূত্রে বাঁধার কোনও ব্যবস্থা নেই।’

দলের নেতারা মানছেন, এ ক্ষেত্রে বিজেপি অনেক এগিয়ে। নরেন্দ্র মোদীর হয়ে প্রচার বা তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার জবাব দিতে বিজেপির নিজস্ব বাহিনী ফেসবুক-টুইটারে সদাই তৎপর। সিপিএমের অনেক নবীন-প্রবীণ নেতা এখন ফেসবুক-টুইটারে রয়েছেন ঠিকই। দলের কর্মী-সমর্থকরাও ফেসবুক-টুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করছেন বা মোদী সরকারের সমালোচনা করছেন। কিন্তু সংগঠিত ভাবে তা হচ্ছে না। সাংগঠনিক রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে, ‘এখন শুধুই দলের বিবৃতি বা আন্দোলনের খবর পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও বিতর্কে দলীয় মত তুলে ধরার প্রচেষ্টা এখনও হয়নি। জরুরি ভিত্তিতে এ দিকে নজর দেওয়া দরকার।’

এই ঘাটতি মেটাতে বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসকেই মহড়া হিসেবে বেছেছেন বৃন্দা কারাট। সিপিএমের ওয়েবসাইট ঢেলে সাজা হয়েছে। ফেসবুক ও টুইটারে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। দিল্লি-সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকেও বাছাই করা তরুণ তুর্কি বিশাখাপত্তনমে উপস্থিত। কেউ এসএফআই নেতা বা দলের কর্মী, কেউ শুধুই পার্টির সমর্থক। পার্টি কংগ্রেসে কী সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তাঁরা তা টুইট করছেন, ফেসবুকে পোস্ট করছেন।

ঠিক হয়েছে, এই বাহিনীতে আরও নতুন তরুণ-তরুণীকে নিয়ে আসা হবে। পার্টি কংগ্রেসের পরেই জাতীয় স্তরে ওয়র্কশপও হবে। কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বললেন, ‘‘আগে দলে নতুন ছেলে এলে হাতে রং-তুলি দিয়ে পোস্টার অথবা দেওয়াল লিখতে বলা হত। এ বার ওরা ফেসবুক-টুইটারে হাত পাকাবে।’’

brinda karat left front facebook twitter cpm social media visakhapatnam premangshu chowdhury
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy