Advertisement
E-Paper

চাষিদের মন পেতে পরিবার পিছু থোক টাকা দেওয়ার ঘোষণা বাজেটে

সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম হিসেব দিলেন, এতে আধ কাপ চা জুটবে বড়জোর। ‘নির্মম রসিকতা, ঘোর অপমান’— বললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী

শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪১
চাষিদের মন পেতে পরিবার পিছু বছরে ৬,০০০ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। ছবি: পিটিআই।

চাষিদের মন পেতে পরিবার পিছু বছরে ৬,০০০ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। ছবি: পিটিআই।

প্রায় হুবহু মিলে গেল চিত্রনাট্য। শাসক শিবিরের তুমুল ‘জোশ’ আর টেবিল চাপড়ানির মধ্যে চাষিদের মন পেতে পরিবার পিছু বছরে ৬,০০০ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র। ভোটের মুখে তার প্রথম কিস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হল ৩১ মার্চের মধ্যেই। কিন্তু পরে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম হিসেব দিলেন, এতে আধ কাপ চা জুটবে বড়জোর। ‘নির্মম রসিকতা, ঘোর অপমান’— বললেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও।

যে ভাবে মরিয়া হয়ে ১ ডিসেম্বর থেকেই ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী পীযূষ গয়াল প্রকল্প চালুর ঘোষণা করলেন, তাকে ঘুরিয়ে টাকা দিয়ে ভোট কেনার চেষ্টা বলে মনে করেন চিদম্বরম। একই সঙ্গে এমন একগুচ্ছ প্রশ্ন এই ঘোষণাকে তাড়া করল যে, তার জুতসই জবাব খুঁজে পেলেন না পীযূষও।

যেমন প্রশ্ন উঠছে, এক দিকে চাষিদের আয় দ্বিগুণ হতে চলেছে বলে বাজেটে বলছে সরকার। অথচ তাঁদের ক্ষোভে জল ঢালতে বলতে হচ্ছে বছরে তিন বার থোক টাকা দেওয়া হবে। বিরোধীদের প্রশ্ন, আয় যদি দ্বিগুণই হয়, তবে তাদের আর্থিক সাহায্য করার প্রয়োজন কেন পড়ছে? অনেকের আবার প্রশ্ন, এই টাকা তো পাবেন শুধু সেই চাষিরা, যাঁদের নিজের জমি রয়েছে। কিন্তু যে সমস্ত হতদরিদ্র মানুষ অন্যের জমিতে কাজ করেন, তাঁরা তো প্রকল্পের বাইরেই থাকলেন। মন্ত্রীর যুক্তি, কিছু করার নেই। জমির রেকর্ড না থাকলে, প্রকল্পে শামিল করা শক্ত।

আরও পড়ুন: ৯ গ্লাস জলে ‘হিংরেজি’ ভোট-ভাষণ পীযূষের

প্রশ্ন উঠছে, অনেক জমির মালিক শহরে থাকেন। গ্রামে তাঁদের জমি চাষ করেন ভূমিহীন মজুর বা ভাগচাষিরা। এই টাকা মালিক পাবেন। যাঁরা সত্যিই চাষ করেন, কিছুই জুটবে না তাঁদের? মন্ত্রীর আশা— মালিক জমিতে চাষ করা কর্মীদের সঙ্গে ওই টাকা ভাগ করে নেবেন!

অনেক চাষি পরিবারের ২ হেক্টরের কিছু বেশি জমি থাকতে পারে। কিন্তু হয়তো ভাগ-বাঁটোয়ারা না করেই তা চাষ করেন পরিবারের অনেকে মিলে। তাঁরাও বঞ্চিত হবেন নতুন প্রকল্প থেকে।
বাজেট বক্তৃতায় এই প্রকল্পের নাম বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ‘কিসান সম্মান নিধি’। সংক্ষেপে পিএম-কিসান। অথচ বাজেট নথিতে তার উল্লেখ রয়েছে ‘আয় সহায়তা যোজনা’ হিসেবে। বিরোধীদের কটাক্ষ, রাহুল আগে আয় সহায়তা প্রকল্পের কথা বলেছেন বলেই কি তার উল্লেখ করা হয়নি বাজেটে? অন্য নাম বলা হয়েছে, যাতে নকলের অভিযোগ না ওঠে?

আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী বাজেটেও ১২ বছরের স্বপ্ন ফেরি গয়ালের

উঠছে তেলঙ্গানার ‘রায়তু বন্ধু’ প্রকল্পের কথাও। ওই প্রকল্পে একর-পিছু ৪০০০ টাকা করে দেয় ওই রাজ্যের সরকার। তা-ও আবার দুই মরসুমের জন্য। অনেকের কটাক্ষ, তার তুলনায়ও এই অঙ্ক অনেক কম। পীযূষের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘দেশে প্রায় সওয়া সাত কোটি ছোট চাষি রয়েছেন, যাঁদের জমি আধ হেক্টর বা তার কম। তাঁদের কাছে ৬০০০ টাকার মূল্যটা ঠান্ডা ঘরে বসে বোঝাটা কঠিন।’’

কংগ্রেসের অভিযোগ, ডিজেলের দাম বৃদ্ধি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারণে পাঁচ বছরে ছোট চাষিদের বোঝা বেড়েছে বছরে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। সেখানে মাত্র ৬ হাজারে কী হবে? রাহুল টুইটে বলেছেন, পরিবার পিছু দিনে ১৭ টাকা খয়রাতি দিয়ে চাষিদের অপমানই করেছেন মোদী। বিজেপি পাল্টা টুইটে বলেছে— ‘ভাগ্য ভাল আপনি ঘণ্টায় ৭০ পয়সা বলেননি। এই ৬০০০ টাকা যে তাদের নিট লাভ নয়, তার ওপর সহায়তা, সেটা আপনি বোঝেননি।’
পিএম-কিসান প্রকল্প নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন যে আছে, সরকারও তা জানে। কিন্তু ভোটের মুখে চাষিদের ক্ষোভ সামলাতে তাদের হাতে থোক টাকা তুলে দেওয়াটাই লক্ষ্য মোদীর।

Narendra Modi Budget 2019 Union Budget
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy