Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Sonia Gandhi

প্রশ্ন তুলেও ঐক্যের সুর সর্বদলে, দৃঢ় ভাবে পাশে আছি, বললেন মমতা

শুরুতেই গলওয়ানের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করান প্রধানমন্ত্রী মোদীকে।

সর্বদল বৈঠকে প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এনআই।

সর্বদল বৈঠকে প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এনআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ২১:০৭
Share: Save:

দেশজোড়া রাজনৈতিক ঐক্যের সুর নিয়ে শেষ হল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা সর্বদল বৈঠক। বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারকে একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করালেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। চিন যে এত বড় সৈন্য সমাবেশ করছে, সরকার কি সে খবর পায়নি? উপগ্রহ চিত্রে কি নজর রাখা হয়নি? প্রশ্ন করেন তিনি। পরিস্থিতি সম্পর্কে নিয়মিত বিরোধীদের অবহিত করার অনুরোধও প্রধানমন্ত্রীকে সনিয়া জানান। তবে চিনকে যোগ্য জবাব দেওয়ার প্রশ্নে সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জোগানোর বার্তা দিয়েছেন তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একনায়কতান্ত্রিক চিনের বিরুদ্ধে লড়তে গেলে আমাদের সবাইকে এক হতে হবে, মন্তব্য তাঁর। বামেরা অবশ্য আমেরিকার জোটে যোগ না দেওয়ার এবং পঞ্চশীল নীতি না ভোলার পরামর্শ দিয়েছেন।

২০টি দলকে নিয়ে এ দিন বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। শুরুতেই লাদাখের পরিস্থিতি তথা গলওয়ানের ঘটনা নিয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী একগুচ্ছ প্রশ্নের মুখে দাঁড় করান প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। ‘‘কবে চিনা বাহিনী লাদাখে আমাদের এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছিল, ৫ মে, নাকি তার আগে? সরকার কি সীমান্ত এলাকার উপগ্রহ চিত্রের উপর নিয়মিত নজর রাখেনি? এলএসি বরাবর কোনও অস্বাভাবিক কার্যকলাপের খবর কি আমাদের গোয়েন্দারা দেননি? ভারতীয় এলাকায় হোক বা চিনের দিকে, এলএসিতে বড় সৈন্য সমাবেশ যে চিন করেছে, তা কি আমাদের সামরিক গোয়েন্দারা সতর্ক করেননি? সরকার কী মনে করছে, গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল?’’— শুক্রবারের বৈঠকে মূলত এই প্রশ্নগুলোই তোলেন সনিয়া গাঁধী। উত্তর সীমান্ত সুরক্ষিত রাখার জন্য ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কোর’ নামে যে বাহিনী গড়ার কাজ শুরু হয়েছিল, সেই বাহিনী এখন কী অবস্থায়? তা-ও কংগ্রেস সভানেত্রী জানতে চান। লাদাখের পরিস্থিতি সম্পর্কে এখন থেকে প্রতি সপ্তাহে বিরোধীদের অবহিত করা হোক— এমন দাবিও করেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণে অবশ্য পুরোপুরিই ঐক্যের আহ্বান শোনা গিয়েছে এ দিন। তিনি বলেন, ‘‘চিনে গণতন্ত্র নেই, সেখানে একনায়কতন্ত্র চলে। তারা যা খুশি করতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’’ অর্থাৎ গণতন্ত্র না থাকা বা একদলীয় শাসন থাকার সুবাদে চিনের সরকারকে যে কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না, সে কথাই এ দিনের বৈঠকে মনে করিয়ে দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতন্ত্র থাকার কারণে আমাদের দেশের সরকারের অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং সেই কারণে আপাতত বিভেদ ভুলে সবাইকে সরকারের পাশে থাকতে হবে— এই বার্তাই তিনি দিতে চেয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এক হয়ে কথা বলুন, এক হয়ে ভাবুন, এক হয়ে কাজ করুন। আমরা দৃঢ় ভাবে সরকারের পাশে রয়েছি।’’

আরও পড়ুন: কেন গেল ২০ প্রাণ? বিরোধীদের প্রশ্নের মুখেই মোদী সর্বদল বৈঠকে

চিনের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ভাবে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সামরিক পদক্ষেপই বা কী ভাবে করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর জন্যই এই সর্বদল বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বাণিজ্যিক হোক বা সামরিক, সরকারের যে কোনও পদক্ষেপকে সমর্থনের কথা বলেছে অধিকাংশ দলই। ভারতের রেল, টেলিকম এবং অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে চিনকে কোনও ভাবে ঢুকতে না দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তাতে প্রাথমিক ভাবে ভারতের কিছু সমস্যা হতে পারে, কিন্তু সেই সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে, চিনকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না— এমনই কঠোর অবস্থানের পক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সওয়াল করেছেন।

আরও পড়ুন: পাঠানো হল যুদ্ধবিমান, চূড়ান্ত সতর্কবার্তা বায়ুসেনাকে​

গলওয়ানের ঘটনার পর থেকে বার বার প্রশ্ন উঠেছে, ভারতীয় বাহিনী নিরস্ত্র ভাবে সীমান্তে গিয়েছিল কি না? যদি নিরস্ত্র ভাবে গিয়ে না থাকে, তা হলে আক্রান্ত হয়েও বাহিনী গুলি চালাল না কেন? এই প্রশ্নও তোলা হয়েছে কংগ্রেস-সহ বেশ কয়েকটি দলের তরফ থেকে। তবে কংগ্রেসের শরিক দল এনসিপি এ দিন অন্য সুরে কথা বলেছে। দলের প্রধান তথা দেশের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী শরদ পওয়ার বলেছেন, বাহিনী অস্ত্র নিয়ে সীমান্তে যাবে কি না, তা নির্ভর করে নানা আন্তর্জাতিক চুক্তির উপরে। সেই চুক্তিগুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতেই হয় বলে পওয়ার মন্তব্য করেছেন।

তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী তথা টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও এ দিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাশ্মীর নীতির প্রশংসা করেছেন। কাশ্মীর সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট অবস্থান এবং আত্মনির্ভর ভারত গড়ার আহ্বানই চিনের ক্রোধের কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী তথা সিকিম ক্রান্তিকারী মোর্চার প্রধান প্রেম সিংহ তামাং বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি পূর্ণ আস্থা রয়েছে। অতীতেও যখনই জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ আর মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি প্রধান কনরাড সাংমা উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ ও মায়ানমারের উপরে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে।

সিপিআই নেতা ডি রাজা সতর্ক করেছেন সরকারকে। চিনের সঙ্গে সঙ্ঘাতে যেতে গিয়ে যেন আমেরিকার জোটে যোগ না দেয় ভারত, পরামর্শ তাঁর। আর সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি জোর দিয়েছেন পঞ্চশীল নীতির উপরে। ওই নীতির ভিত্তিতেই চিনের সঙ্গে সুসম্পর্কের উপরে জোর দিয়ে এসেছে অতীতের বিভিন্ন সরকার। এ দিনের বৈঠকে ইয়েচুরি ওই নীতিকে গুরুত্ব দেওয়ার উপরেই জোর দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi PM Sonia Gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE