Advertisement
E-Paper

মেঙ্গালুরু-লখনউয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত ৩, বাধা ভেঙে ভারত উদয়

বেঙ্গালুরুতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে জমায়েত থেকে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৬
লখনউয়ে পর পর গাড়িতে আগুন বিক্ষোভকারীদের। বাদ যায়নি সংবাদ মাধ্যমের গাড়িও। ছবি: এপি

লখনউয়ে পর পর গাড়িতে আগুন বিক্ষোভকারীদের। বাদ যায়নি সংবাদ মাধ্যমের গাড়িও। ছবি: এপি

দিন শুরু হয়েছিল ১৪৪ ধারা ভাঙার শপথ নিয়ে। সেই শপথ থেকেই এল নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ। উত্তাল হল রাজধানী দিল্লি-সহ অন্তত দশটি রাজ্যের তেরোটি শহর। চলল পুলিশের গুলি। মেঙ্গালুরুতে দু’জন, লখনউয়ে এক জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন। কার্ফু হল মেঙ্গালুরুতে।

আজ দেশ জুড়ে আটক ও গ্রেফতার হন বহু মানুষ। বেঙ্গালুরুতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে জমায়েত থেকে ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। দিল্লিতে আটক হন সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, নীলোৎপল বসু, বৃন্দা কারাট, যোগেন্দ্র যাদব, উমর খালিদের মতো নেতারা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে শিল্পপতি রাহুল বজাজ সম্প্রতি বলেছিলেন, ‘‘প্রকাশ্যে আপনাদের সমালোচনা করার দরকার হলে আপনারা সেটা যে ভাল ভাবে নেবেন, সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের নেই।’’ দিনটা অবশ্য দেখাল, আত্মবিশ্বাসে ফুটছে আমজনতা। গত রাত থেকেই বেঙ্গালুরু-সহ কর্নাটকের অন্তত তিনটি শহরে ছিল ১৪৪ ধারা। উত্তরপ্রদেশে সেই কড়াকড়ি ছিল গোটা রাজ্যে।

ভাঙছে ভয়?

আমাদের প্রাচীন গ্রন্থরাজিতে বলা আছে, ব্যক্তি এবং জাতির সবচেয়ে বড় ঐশ্বর্য হল অভয়... কিন্তু ব্রিটিশ শাসনে ভারতের অন্তঃকরণে চেপে বসেছিল ভীতি...সেই সর্বব্যাপ্ত ভয়ের বিপ্রতীপেই গাঁধীর শান্ত অথচ দৃঢ় কণ্ঠ ধ্বনিত হল— ভীত হোয়ো না।... ভয়ের কালো চাদরটা হঠাৎই মানুষের কাঁধের উপর থেকে সরে গেল।

আজ সব চেয়ে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হয়েছে ওই দুই রাজ্যেই। লখনউয়ের মাদেগঞ্জে জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ বাধে। একটি পুলিশ ফাঁড়ির বাইরে একাধিক গাড়িতে আগুন লাগানো হয়। লখনউয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মহম্মদ উকিল (২৫) নামে এক যুবক। পরিবারের অভিযোগ, সংঘর্ষের এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময়ে পুলিশ তাঁকে গুলি করে। যদিও ডিজি-র দাবি, এই মৃত্যুর সঙ্গে বিক্ষোভের আদৌ যোগ নেই। উত্তরপ্রদেশের সম্ভলেও আক্রান্ত হয়েছে থানা। জ্বালানো হয়েছে সরকারি বাস। বন্ধ হয়েছে ইন্টারনেট। বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, ‘‘সিসিটিভি এবং ভিডিয়োতে এদের দেখা গিয়েছে। এর বদলা নেওয়া হবে।’’ তাঁর হুঁশিয়ারি, সরকারের ক্ষতি পূরণ করতে প্রয়োজনে বিক্ষোভকারীদের সম্পত্তি নিলাম হবে।

মেঙ্গালুরুতে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটাচ্ছে পুলিশ। ছবি: পিটিআই

সূত্রের খবর, মেঙ্গালুরুতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জলিল (৪৯) এবং নৌশিন (২৩)। পুলিশের দাবি, বিক্ষোভকারীরা মেঙ্গালুরু নর্থ থানা দখল করতে এলে গুলি চালানো হয়। বরং বেঙ্গালুরুর টাউন হলের সামনে দাঁড়িয়ে একটি চ্যানেলকে রামচন্দ্র গুহ বলছিলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলছিল। বেচারা পুলিশকে দিল্লির সরকার নির্দেশ দিচ্ছে। পুলিশ সবাইকে তাড়াচ্ছে, জেলে নিয়ে যাচ্ছে।’’ সে সময়ে তিন পুলিশকর্মী তাঁকে টেনে বাসে তোলেন। ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে রামচন্দ্রকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

রামচন্দ্র গুহকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।

বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ ছিল কলকাতা, চেন্নাই ও মুম্বইয়েও। ‘‘আমরা কি সমান? ধর্মনিরপেক্ষ? হ্যাঁ’’— স্লোগান ওঠে মুম্বইয়ের অগস্ট ক্রান্তি ময়দানে। গুজরাতের আমদাবাদে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ হয়। তেলঙ্গানায় বামেরা, সংখ্যালঘুদের সংগঠন-সহ বহু মিছিল হয়। হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র আটক হন। পটনায় বাসে-গাড়িতে আগুন লাগায় জন অধিকার পার্টির কর্মীরা। বাম ছাত্র সংগঠনগুলি রেল অবরোধ করে। মধ্যপ্রদেশের ১২টি জেলায় বিক্ষোভ হয়। কংগ্রেসের প্রশ্ন, আজ শুধু বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতেই হিংসা ছড়াল কেন?

Mangaluru Lucknow CAA NRC Ramachandra Guha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy