কোথাও অভিযোগ, পুলিশই মারধর করে বিক্ষোভকারীদের উত্তেজিত করেছে। কোথাও আবার ভিডিয়োতে পাথর ছোড়া, গাড়ি ভাঙচুরের মতো কাজ করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। সব মিলিয়ে নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের মোকাবিলা নিয়ে বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, কর্নাটকের মতো বেশ কয়েকটি রাজ্যের পুলিশ।
দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া ও উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বিক্ষোভের সময়ে পুলিশি হামলার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। তার পরের ঘটনাপ্রবাহ নিয়েও উঠেছে অনেক প্রশ্ন। আমদাবাদে বিক্ষোভের সময়ে এক পুলিশকর্মীকে মারধরের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু সেখানেও অভিযোগ উঠেছে, পুলিশই প্রথমে এক বয়স্ক বিক্ষোভকারীকে মারধর করে তাঁর পা ভেঙে দেওয়ায় উত্তেজনা বেড়েছিল। শুক্রবার রাজধানীতে দিল্লি গেট ও জামা মসজিদের কাছে প্রতিবাদ আন্দোলন প্রথমে শান্তিপূর্ণই ছিল। পরে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেখানেও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে।
আইনজীবী ও সমাজকর্মীদের একাংশ সাম্প্রতিক বিক্ষোভের মোকাবিলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন তুলেছেন।
প্রথমত, অশান্তির নির্দিষ্ট সম্ভাবনা না থাকলে ১৪৪ ধারা জারি করা যায় না বলে জানাচ্ছেন আইনজীবীরা। সে ক্ষেত্রেও গোটা রাজ্য বা শহরে তা জারি করা যায় না বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। সে ক্ষেত্রে কী ভাবে গোটা দিল্লি-উত্তরপ্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হল? এ নিয়ে বিভিন্ন আদালতে আবেদন পেশ হয়েছে। তবে এখনও কোনও নির্দেশ দেয়নি আদালত। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের বক্তব্য, ‘‘গোটা উত্তরপ্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। সে রাজ্যের সব বড় শহরে ইন্টারনেট বন্ধ। পুলিশের গুলিতে অনেকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। দেশের পরিস্থিতি ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার চেয়েও খারাপ।’’
দ্বিতীয়ত, জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পায়ের নীচের অংশ ও পিঠে লাঠিচার্জ করার কথা বলা হয়েছে পুলিশ ম্যানুয়ালে। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ করে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া ও পা ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তৃতীয়ত, অভিযোগ উঠেছে কেতাদুরস্ত পোশাক পরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে পুলিশ। কিন্তু অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও গালিগালাজের অভিযোগ উঠেছে। এর সমর্থনে কয়েকটি ভিডিয়োর কথা উল্লেখ করছেন অনেকে। তার মধ্যে একটিতে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি বাড়ির ছাদে উঠে ভাঙচুর করছেন পুলিশকর্মীরা। অভিযোগ, ওই ভিডিয়ো দিল্লির। দিল্লি পুলিশের এমন আচরণের জন্যই গোলমাল শুরু হয়। অন্য একটি ভিডিয়োয় মুখে রক্ত মাখা অবস্থায় এক বালককে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরে বিক্ষোভ দমনের সময়ে ওই বালককে মারধর করেছে পুলিশ। আবার কোনও ভিডিয়োয় বৃদ্ধকে মাটিতে ফেলে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে পুলিশকর্মীদের।
চতুর্থত, গত কয়েক দিনে পুলিশের রাজনীতিকরণ প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ।
পঞ্চমত, দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের সন্ধ্যার পরে থানায় আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। যা সুপ্রিম কোর্টের স্থির করে দেওয়া বিধির বিরোধী। উত্তরপ্রদেশেই নিরপরাধ যুবককে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও তাঁর বোনকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও আছে। প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট অভিযোগের জবাব দেয়নি সংশ্লিষ্ট পুলিশ। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দাবি, প্রথমে তাদের লক্ষ্য করে আক্রমণ ও হিংসাত্মক কাজকর্মের ফলে পদক্ষেপ করতে হয়েছে।