E-Paper

পাক সেনার অস্তিত্ব বাঁচাতেই হামলা, ধারণা নয়াদিল্লির

কোনও রকম প্রত্যাঘাতের আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ মুনিরের রাজনৈতিক মতিগতিকে আতস কাচের তলায় ফেলে দেখছে নয়াদিল্লি। রণনৈতিক শিবির মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রাচীন চিনা প্রবাদটিকে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৫ ০৭:৫১
শ্রীনগরে নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে জম্মু ও কাশ্মীরে আরও কড়া হয়েছে নিরাপত্তা। বুধবার।

শ্রীনগরে নিরাপত্তা বাহিনীর পাহারা। পহেলগামে জঙ্গি হামলার পরে জম্মু ও কাশ্মীরে আরও কড়া হয়েছে নিরাপত্তা। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

পহেলগাম কাণ্ড ঘটানো হয়েছে পাকিস্তানি সেনার অস্তিত্ব রক্ষার কারণেও। ঘটনার এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার পর এমনটাই মনে করছে নয়াদিল্লি। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্তাদের চুলচেরা আলোচনা হয়েছে বলে খবর। ঠিক কীসের ভরসায় পাকিস্তান এই ঝুঁকিটা নিল সেই প্রশ্ন উত্তর খুঁজতে গিয়ে ভারতীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট, চূড়ান্ত কোণঠাসা ইসলামাবাদ দ্বিজাতি তত্ত্বের তাস খেলে ভারতকে যেমন এক দিকে ভাঙতে চাইছে, অন্য দিকে নিজেদের ছত্রভঙ্গ সেনা মনোবলকে এক মঞ্চের তলায় নিয়ে আসতে চাইছে।

কোনও রকম প্রত্যাঘাতের আগে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ মুনিরের রাজনৈতিক মতিগতিকে আতস কাচের তলায় ফেলে দেখছে নয়াদিল্লি। রণনৈতিক শিবির মনে করিয়ে দিচ্ছে প্রাচীন চিনা প্রবাদটিকে। সেটি হল, ‘তুমি যদি নিজেকে এবং শত্রুকে জানো, হারার ভয় নেই। যদি শুধু নিজেকে জানো, শত্রুকে নয়, তাহলে জয়ের সঙ্গে পরাজয়ও আসবে। আর যদি এই দুইয়ের কোনওটাকেই না-জানো তা হলে প্রতিটি লড়াইয়েই পরাজয়।’

সেই সূত্রকে অনুসরণ করে পাকিস্তানের দিক থেকে গোটা ঘটনাটিকে সাজিয়েছেন ভারতীয় কর্তারা। দেখা যাচ্ছে, জেনারেল আসিফ মুনির নিজেদের দেশের জাতীয় নিরাপত্তা নীতি প্রণয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। দেশের ভিতর জনপ্রিয়তা বাড়ছে কারাবন্দি ইমরান খানের। আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের এতটা অবনতি এর আগে কখনও হয়নি। তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে উদ্যত। খাইবার পাখতুনখোয়া, বালুচিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ইসলামাবাদের সরকারের বিরুদ্ধে সংঘাতে লিপ্ত। এই পরিস্থিতিতে মুনির জুয়া খেলার মতো করে পহেলগামের মতো কাণ্ডে আস্কারা দিয়েছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। পাক সেনাবাহিনীকে মনোবল টিঁকিয়ে রাখার জন্য এখন মাত্র একটাই বিষয় বেঁচে রয়েছে, এবং তা হল নিয়ন্ত্রণরেখা।

ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই ‘জুয়া খেলার’ যুক্তি রয়েছে পাকিস্তানের দিক থেকে। ভারতের সঙ্গে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হলে পাক সেনাকে এক মঞ্চে নিয়ে আসা সম্ভব। পহেলগামের হত্যা যে ইচ্ছাকৃতভাবে হিন্দুদেরই করা হয়েছে এই ঘটনায় দ্বিজাতি তত্ত্বকে হিমঘর থেকে টেনে আনলে ঘরোয়া রাজনীতিতে তাদের সুবিধা। এটাও আশা করছে পাকিস্তান যে, এর ফলে ভারতে সাম্প্রদায়িক অশান্তি শুরু হবে এবং দেশটির রাজনৈতিক মনোবল দুর্বল হয়ে পড়বে। পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্রের কথা তুলে তিনি আন্তর্জাতিক খবরদারি ডেকে আনতে পারবেন, গেল গেল রব উঠবে এবং কাশ্মীর নিয়ে সমঝোতার জন্য ভারতকে চাপ দেওয়া সম্ভব হবে।

ভারতের সামনে এক দিকে চ্যালেঞ্জ এই দ্বিজাতি তত্ত্বের ফাঁদে না পড়া এবং ঐক্য ধরে রাখা। পাশাপাশি সামরিক প্রত্যাঘাত এমন কৌশলে করা, যাতে বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের দিকে না যায়। কাশ্মীর নিয়ে আমেরিকা বা অন্য কোনও বড় রাষ্ট্র মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করুক (যেমনটা আগে পাকিস্তানের ইন্ধনে বারবার চেষ্টা করেছে ওয়াশিংটন) সেটা কিছুতেই হতে দিতে চায় না নয়াদিল্লি। পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখা হচ্ছে যে, পহেলগাম নিয়ে আন্তর্জাতিক সমবেদনা এবং সমর্থনের যে ঢেউ উঠেছে তাকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া উচিত নয়। ভারতের প্রত্যাশিত সামরিক অভিযানের পরে এবং পাকিস্তানের প্রত্যাঘাতের পরে যদি বিষয়টি বড় আকার নেয় এবং সাধারণ মানুষের উপরে তার প্রভাব পড়ে তা হলে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এক দিনে বদলে যেতে পারে।

পহেলগামের পাল্টা জবাবের ‘সময়’, ‘নিশানা’ ও ‘পন্থা’ ঠিক করার ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলিকে হিসেবের মধ্যে রাখছে সাউথ ব্লক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pahalgam Terror Attack Pahalgam Incident India-Pakistan Pakistan Army

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy