বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর ঢাকা সফরের পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সাউথ ব্লকের বার্তা, প্রতিহিংসার নীতি ত্যাগ করে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত দেশের অর্থনীতির হাল ফেরাতে গঠনমূলক এবং ইতিবাচক পদক্ষেপ করা। বিভাজনের রাজনীতিকে পিছনে সরিয়ে, উন্নয়নের রাজনীতিতে মন দেওয়া। তাহলেই সাধারণ মানুষ এবং অংশীদার রাষ্ট্রের আস্থা ফিরবে। সরকারি সূত্রে এ কথা জানা গিয়েছে। এই প্রসঙ্গে সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতা আল জোলানির উদাহরণকে সামনে আনছে নয়াদিল্লি। বলা হচ্ছে, জোলানির মতো চরমপন্থী ইসলামিক নেতা শেষ পর্যন্ত সবাইকে নিয়ে চলা ও সহিষ্ণুতার নীতিকেই মান্যতা দিয়েছেন। অথচ মুহাম্মদ ইউনূসের মতো প্রগতিশীল মানুষ এখন বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত।
বিদেশসচিব গত কাল সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ও বিদেশসচিব মহম্মদ জসীম উদ্দিনের সঙ্গে আলোচনায় সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও কল্যাণের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। এটাও জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ ভাবে কাজ করতে আগ্রহী মোদী সরকার। আলোচনার টেবিলে উল্টো দিকে বসা অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্য, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে হিংসার ঘটনা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। যেখানে যা ঘটছে, তার বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভারতের মাটি থেকে করা শেখ হাসিনার মন্তব্য যে ঢাকা সুনজরে দেখছে না তাও দ্ব্যর্থহীন ভাবে বলা হয়েছে ভারতীয় কূটনৈতিক দূতকে।
আজ সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ‘‘ভারতীয় বিদেশসচিবের সোমবারের বৈঠক বাংলাদেশে জমানা পরিবর্তনের পরে প্রথম শীর্ষ পর্যায়ের আদানপ্রদান। এই সফর প্রমাণ করেছে, দু’দেশ একে অন্যের স্বার্থ এবং বড় মাপের উদ্বেগগুলিকে কমানোর জন্য কাজ শুরু করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের উচিত ভারতের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করা। এই সফরের পরে বাংলাদেশের সামনে সুযোগ এসেছে নিজেদের অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য ভারতের সঙ্গে ইতিবাচক আদানপ্রদান শুরুর।’’
হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে গোড়া থেকেই অসন্তুষ্ট ইউনূস সরকার। তাঁকে প্রত্যর্পণের দাবি করা হয়েছে। ইন্টারপোলে তাঁকে ফেরানোর জন্য রেড কর্নার নোটিস জারির আর্জিও পেশ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর মামলা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে হাসিনা নিয়মিত ভাবে ভিডিয়ো মাধ্যমে তুলোধোনা করছেন বাংলাদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠীকে। সে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলছেন, জঙ্গিদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়েও সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, “সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী যা বলছেন, সেই একই কথা তো ভারতও বলছে। ফলে এতে অস্বস্তি বাড়ার কোনও প্রশ্ন নেই।”
পাল্টা আজ বাংলাদেশের তরফে বলা হয়েছে, ৪ থেকে ২০ অগস্ট পর্যন্ত হামলা ও হিংসার ঘটনায় বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান পরিষদের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই ৬২টি মামলা করেছে পুলিশ। এ সব মামলায় ৩৫ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। ৫ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত পুজো মণ্ডপ ও ধর্মীয় স্থলে হামলার ঘটনায় ২৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ ৩৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
আজ সরকারের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, ‘‘চার মাস পার হয়ে গিয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত এ বার নিজেদের লক্ষ্য গঠনমূলক এবং ইতিবাচক কর্মসূচি এবং উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়া শুধুমাত্র আগের জমানাকে দায়ী করে না করে। পাশাপাশি আগের জমানার প্রতি নেওয়া প্রতিহিংসার নীতিকে পিছনে সরিয়ে রাখা প্রয়োজন। কারণ এতে মূল্যবান শক্তি এবং সরকারি সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। তা না করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে না। প্রতিহিংসার চক্রেই ঘুরপাক খাবে। এমন ভাষ্য তৈরি করা প্রয়োজন যাতে সাধারণ মানুষ এবং অংশীদার রাষ্ট্রের আস্থা জন্মায়।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)