দেশে হঠাৎই করোনা রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে, আপাতত এই নিয়ে চিন্তার কারণ নেই বলেই জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। গত কয়েক দিনে যাঁরা সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের শরীরে সংক্রমণের বহিঃপ্রকাশ মৃদু এবং তাতে প্রাণহানির আশঙ্কা কম বলেই আজ দাবি করেছেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর ডিজি রাজীব বহেল। যাঁরা কোমর্বিডিটি (দীর্ঘ দিন ধরে কোনও রোগের শিকার)-তে ভুগছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য মন্ত্রক সতর্ক থাকার পরামর্শ দিলেও, আশু ভয়ের কোনও কারণ নেই বলেই জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
গত এক মাসের কাছাকাছি চিন ও এশিয়ার বিভিন্ন অংশে নতুন করে করোনা সংক্রমণের তথ্য সামনে আসছিল। ভারতেও গত চব্বিশ ঘণ্টায় সক্রিয় কোভিড রোগীর সংখ্যা ২৭৫ থেকে প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১০১১ হয়েছে। রাজ্যগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে কেরল (৪৩০), মহারাষ্ট্র (২০৯), দিল্লি (১০৪), তামিলনাড়ু (৬৯) ও পশ্চিমবঙ্গে (১২)। তবে নমুনা পরীক্ষা আরও বৃদ্ধি পেলে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। যদিও, যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁরা বাড়িতেই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ারও প্রয়োজন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বতর্মানে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জিনোম পরীক্ষা করে মূলত করোনা ভাইরাসের ওমিক্রন শাখার আওতায় এনবি.১.৮.১, এলএফ.৭, এক্সএফজি, জেএন.১ উপশাখার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ভারতে। তাৎপর্যপূর্ণ হল ইতিমধ্যেই এনবি.১.৮.১ এবং এলএফ.৭ দুই উপশাখাকে নজরদারি (ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার মনিটিরিং)-এর আওতায় নিয়ে এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বিবর্তনের মাধ্যমে এগিয়ে চলা এনবি.১.৮.১ উপশাখার সংক্রমণ ক্ষমতা আগের প্রজাতির থেকে অনেকটাই বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই প্রজাতির মানব কোষের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষমতা বেশি হওয়া ছাড়াও, দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে এড়িয়ে যাওয়ার বৈশিষ্ট্য থাকায়, ওই প্রজাতির সংক্রমণ ক্ষমতাও বেশি। এর মধ্যে ভারত ছাড়াও ২২টি দেশে ওই প্রজাতির নমুনা পাওয়া গিয়েছে।
তবে আপাতত দেশে করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি দেখে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আইসিএমআর ডিজি রাজীব বলেন, ‘‘হু’র তথ্যভান্ডার বলছে, নতুন প্রজাতির কারণে বিশ্বের কোথাও তেমন গুরুতর আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই।’’ তাই এই মুহূর্তে নতুন করে বুস্টার ডোজ় নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই, মনে করছেন তিনি। রাজীবের কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে নতুন করে টিকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, ভারতের যা ক্ষমতা রয়েছে, তাতে অল্প সময়েই প্রয়োজনমাফিক টিকা বানিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।’’
যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে কোমর্বিডিটি বা মধুমেহ, কর্কট, কিডনি বা হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজীব। তিনি বলেন, ‘‘যদি কেউ কর্কট রোগী হন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে, তা হলে কোনও সংক্রমণ যাতে না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, যাঁদের কোমর্বিডিটি রয়েছে, তাঁদের যে নিয়ম দেশবাসী করোনা সংক্রমণের গোড়ার দিনগুলিতে মেনে চলেছিল, যেমন মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, সেই সব নিয়ম মেনে চলাই উচিত। আমজনতাও চাইল এই সব নিয়ম মানতে পারে। এতে সংক্রমণ ছড়াবে কম।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)