আলু-পেঁয়াজের মজুত বেঁধে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে এই দুই অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম কমানোর দায় রাজ্যের ঘাড়েই ঠেলে দিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। ঘটনাচক্রে পশ্চিমবঙ্গও চেয়েছিল, এই মজুতদারির পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হোক। সেই সূত্র ধরে আজ মোদী মন্ত্রিসভা অত্যাবশ্যক পণ্যের আওতায় আলু-পেঁয়াজকে এনে তা মজুতের পরিমাণ নির্ধারণ করার দায় রাজ্যগুলির দিকেই ঠেলে দিল। এতে এক দিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্ম পালন হল, তেমনই দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার দায়ও বর্তাল রাজ্যেরই ঘাড়ে। এর আগে ইউপিএ-ও সরকারও এই একই কৌশল নিলে বিজেপি তাকে ‘দায় এড়ানোর চেষ্টা’ আখ্যা দিয়ে বিরোধিতায় মুখর হয়েছিল মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আর্থিক বিষয়ক কমিটি আজ সিদ্ধান্ত নেয়, আগামী এক বছর অত্যাবশ্যক পণ্যের আওতায় এই দুই পণ্যের মজুতদারির সর্বোচ্চ পরিমাণ স্থির করবে রাজ্যগুলিই। মজুত-সীমা মানা হচ্ছে কি না দেখা ও প্রয়োজনে শাস্তির ব্যবস্থাও করতে হবে তাদেরই। মোদী সরকারের মতে, আলু-পেঁয়াজের উৎপাদনে কোনও সমস্যা নেই। মজুত করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে। কেন্দ্র তাই আজ নীতি বেঁধে দিল, কিন্তু তা পালন করতে হবে রাজ্যকে। রাজ্য তার চাহিদা অনুযায়ী মজুতের পরিমাণ নির্ধারণ করবে। কেন্দ্র এ বিষয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।
মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে সরকারের এই ঘোষণায় আদৌ খুশি নয় বিরোধী দল কংগ্রেস। দিগ্বিজয় সিংহের মতে, “রাজ্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাওয়াই নতুন কী? ইউপিএ সরকারও তো একই কথা বলেছিল। তখন বিজেপিই তাকে ঠেস দিয়ে কথা বলেছিল।” দিগ্বিজয় বলেন, কেন্দ্র দাম কমাতে কী করছে? মূল্যবৃদ্ধির রাশ টানতে দাম নিয়ন্ত্রণ তহবিল গড়ার কথা বলেন মোদী। কোথায় সেই তহবিল? ভোট-প্রচারে মোদী ঘোষণা করেন, সরকার গড়েই মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানবেন! তা-র কী খবর?
নরেন্দ্র মোদী বুঝতে পারছেন, মজুতদারি রোখার প্রশাসনিক ক্ষমতা রাজ্যের হাতে থাকলেও বিরোধীদের নিশানা হচ্ছে তাঁর সরকারই। এর আগেও পেঁয়াজের দাম বাড়ার সময় মজুতদারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কয়েকটি জায়গায় অভিযানও হয়। কিন্তু পরিস্থিতি সামান্য বদলালেও ফের দাম বাড়ছে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক আক্রমণ সামলাতে মোদীকে এমন কিছু পদক্ষেপ করে দেখাতে হতো, যাতে বোঝা যায় কেন্দ্র দাম কমাতে উদ্যোগী। পরশু রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে সামগ্রিক ভাবে দাম কমানো নিয়ে আলোচনা করবে মোদী সরকার।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে একটি টিম। কেন্দ্রের হাতে যে ক্ষমতা রয়েছে, তার ভিত্তিতেই তৎপর হয়েছে তারা। রাজ্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে।” তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া দিল্লি, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম, ত্রিপুরাও চাইছিল, মজুতের সীমারেখা বেঁধে দেওয়া হোক। কেন্দ্র রাজ্যের হাতেই সেই অধিকার তুলে দিল।
এর পাশাপাশি সরকার আজ পেঁয়াজের রফতানির সর্বনিম্ন মূল্যের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রের আশা, এর ফলে ব্যবসায়ীরা দেশের বাজারেই পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হবে। কেন্দ্রের দাবি, এ ভাবে সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য মজুতদারি বন্ধ করতে এগিয়ে এলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy