মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রে শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড় পড়ে গিয়েছে। ‘বিষাক্ত’ কাশির সিরাপ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে বলেই প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ করা হচ্ছে। পর পর শিশুমৃত্যু এবং বহু শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। এই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনার করতে সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্যকর্তা এবং দেশের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলির সঙ্গে রবিবার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সূত্রের খবর, বৈঠকে মূলত দু’টি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হতে পারে। একটি হল, কাশির সিরাপের প্রয়োজনমতো ব্যবহার এবং দ্বিতীয়টি হল, ওষুধের গুণমান।
সূত্রের খবর, কাশির সিরাপের মতো ওষুধগুলি যাতে যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহার না করা হয়, যথেচ্ছ ভাবে ‘প্রেসক্রাইব’ না করা হয়, দেশে ওষুধের গুণগত মান, ওষুধ কতটা নিরাপদ— সেই সব বিষয়গুলিও এই বৈঠকে উঠে আসতে পারে। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং মহারাষ্ট্রে কাশির সিরাপ খেয়ে পর পর শিশুমৃত্যুর ঘটনায় দেশ জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে শুধু মধ্যপ্রদেশেই ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহারাষ্ট্রে ২ জনের এবং এবং রাজস্থানে মৃতের সংখ্যা এক। পর পর শিশুমৃত্যু নিয়ে যখন দেশ জুড়ে তোলপাড় চলছে, কেন্দ্র থেকে নির্দেশিকা জারি করে শুক্রবার জানানো হয়, দু’বছর বয়সের নীচে কোনও শিশুকে কাশির সিরাপ ‘প্রেসক্রাইব’ করা যাবে না।
যে কাশির সিরাপ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সেই ‘কোল্ডরিফ’ সিরাপের উৎপাদন এবং বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে এক চিকিৎসককেও। অভিযোগ, যে সমস্ত শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তাদের অধিকাংশই এই চিকিৎসকের লিখে দেওয়া ওষুধ খেয়েছিল।
ঘটনার সূত্রপাত মধ্যপ্রদেশ থেকেই। রাজ্যের ছিন্দোয়াড়া জেলায় পর পর শিশুমৃত্যু হওয়ায় কারণ খুঁজতে গিয়ে কাশির সিরাপের বিষয়টি উঠে আসে। সন্দেহ করা হয় এই সিরাপে বিষাক্ত কোনও রাসায়নিকের কারণেই শিশুমৃত্যু হয়েছে। পরীক্ষাগারে পাঠানো হয় সিরাপ। শুক্রবার সেই পরীক্ষার রিপোর্ট আসে। দেখা গিয়েছে, ওই সিরাপে রয়েছে ৪৮.৬ শতাংশ ডাই-ইথাইল গ্লাইকল (ডিইজি)। এটি একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ, যা কিডনি বিকল করে দিতে পারে। ঘটাতে পারে মৃত্যুও। মধ্যপ্রদেশের শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার এ বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
রাজস্থান সরকারও পদক্ষেপ করেছে। কেসন ফার্মা নামের ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার সরবরাহ করা কাশির সিরাপ-সহ ১৯টি ওষুধ বিক্রি আপাতত স্থগিত রেখেছে সে রাজ্যের সরকার। রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের পর কেরলও বিতর্কিত কাশির সিরাপ ‘কোল্ডরিফ’ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ জানিয়েছেন, যে ব্যাচের সিরাপ খেয়ে অন্য দুটি রাজ্যে শিশুমৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তা কেরলে এখনও বিক্রি করা হয়নি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই শনিবার এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।
তামিলনাড়ু সরকারও ওই সিরাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। ওই বিষাক্ত ওষুধে ৪৮.৬ শতাংশ ডাইইথিলিন গ্লাইকল নামে একটি বিষাক্ত শিল্প দ্রাবকের উপস্থিতি রয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ওই সিরাপ নির্মাতা স্রেসন ফার্মা তামিলনাড়ুরই। তাদের কারখানা সিল করে দেওয়া হয়েছে। ওই সিরাপের একটি উপাদানের জন্য কিডনি এবং যকৃতের সমস্যা হতে পারে বলে পরীক্ষায় ধরা পড়েছে।