Advertisement
E-Paper

‘বিদ্যুতের শক দিয়ে স্বামীকে খুনের অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে’! বিচারপতির প্রশ্নে রসায়নের অধ্যাপিকার ব্যাখ্যায় থ আদালত

বছর ষাটের মমতা পাঠকের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামী নীরজ পাঠককে বিদ্যুতের শক দিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে ২০২১ সালে। সেই মামলাটির সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে শুনানি হয়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৫ ১৪:৩৯
অভিযুক্ত অধ্যাপিকা মমতা পাঠক। ছবি: সংগৃহীত।

অভিযুক্ত অধ্যাপিকা মমতা পাঠক। ছবি: সংগৃহীত।

বিচারপতি: স্বামীকে খুনের অভিযোগ রয়েছে আপনার বিরুদ্ধে। বিদ্যুতের শক দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অন্তত সেটাই বলছে। এ বিষয়ে কিছু বলার আছে আপনার?

অভিযুক্ত: আমার বিরুদ্ধে ভুল অভিযোগ তোলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টও ভুল রয়েছে। কোনটা ‘থার্মাল বার্ন’ আর কোনটা ‘ইলেকট্রিক বার্ন’, ময়নাতদন্তের ঘরে তা আলাদা করে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।

বিচারপতি: কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট তো তা-ই বলছে!

অভিযুক্ত: ওটা বিদ্যুতের শকে মৃত্যু নয়, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যেটা উল্লেখ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ, এটি চিহ্নিত করতে গেলে ল্যাব টেস্টের প্রয়োজন।

এর পরই অভিযুক্ত পুরো বিষয়টি ব্যাখ্যা করে দাবি করেন, কেন এই মৃত্যুকে ‘ইলেকট্রিক বার্ন’ বলা যাবে না। রসায়নের ভাষায় ব্যাখ্যা করে সেটি বিচারপতিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। আর তাঁর এই ব্যাখ্যা শুনে বিচারপতিও স্তম্ভিত হয়ে যান। পাল্টা তিনি বলেন, ‘‘আপনি রসায়নের অধ্যাপক, তাই না?’’ এ কথা শুনে অভিযুক্তের উত্তর, ‘‘হ্যাঁ, হুজুর।’’

ঘটনাটি মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের। সেখানে বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল এবং বিচারপতি দেবনারায়ণ মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলাটির শুনানি চলছিল। বছর ষাটের মমতা পাঠকের বিরুদ্ধে তাঁর স্বামী নীরজ পাঠককে বিদ্যুতের শক দিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে ২০২১ সালে। সেই মামলাটির সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে শুনানি হয়। সেখানেই মমতা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সাপেক্ষে তাঁর রসায়নের জ্ঞানের ভান্ডার তুলে ধরে আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে, সেটিকে বিদ্যুতের শক দিয়ে খুন বলা যাবে না। টিস্যুর মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ গেলে কী হয়, সে বিষয়ে একটি জটিল ব্যাখ্যা দিয়েছেন অভিযুক্ত। সেখানে তিনি জমে থাকা ধাতব কণার পরিমাণ, ল্যাব পরীক্ষায় অ্যাসিডভিত্তিক পৃথকীকরণের খুঁটিনাটি এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার উল্লেখ করেছেন। তাঁর দাবি, এগুলি কেবল পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণের পরে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। অধ্যাপকের সেই ব্যাখ্যা শুনে গোটা আদালত স্তম্ভিত হয়ে যায়।

মধ্যপ্রদেশের ছতরপুরের বাসিন্দা মমতা। তাঁর বিরুদ্ধে স্বামী নীরজ পাঠককে প্রথমে কড়া ডোজ়ের ঘুমের ওষুধ খাইয়ে, তার পর বিদ্যুতের শক দিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে ২০২১ সালের ২৯ এপ্রিল। তার পর ছেলেকে নিয়ে ঝাঁসীতে পালিয়ে যান মমতা। মমতা পুলিশি তদন্তে দাবি করেন, ১ মে ঝাঁসী থেকে বাড়ি ফিরে দেখেন স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তার পরই পুলিশের হাতে একটি ভয়েস রেকর্ডিং আসে, সেখানে নীরজ দাবি করেন, স্ত্রী মমতা তাঁর উপর অত্যাচার করেন। আরও কিছু তথ্য পুলিশের হাতে আসে, যেগুলি মমতার বিরুদ্ধেই গিয়েছে। নিম্ন আদালত মমতাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবনের নির্দেশ দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে যান মমতা। গত বছর জামিনও পেয়েছেন তিনি। গত ২৯ এপ্রিল শুনানি হয়। সেখানে ডিভিশন বেঞ্চ রায় সংরক্ষিত রাখে। সেই শুনানিতেই মমতা ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে যা বলা হয়েছে, সেটি সঠিক নয়। কেন সঠিক নয়, তার পরই তার ব্যাখ্যা দেন রসায়নের এই অধ্যাপিকা।

Madhya Pradesh High Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy