Advertisement
E-Paper

পদ্মাবত নামেই ওঁদের আতঙ্ক

নাহারগড় কেল্লার কার্নিসে ঝোলা চেতনের মৃতদেহের পাশে লেখা ছিল ‘পদ্মাবতীর প্রতিবাদে।’

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৫৫
নাহারগ়ড়ে এ ভাবেই মিলেছিল চেতন সাইনির দেহ। —ফাইল চিত্র।

নাহারগ়ড়ে এ ভাবেই মিলেছিল চেতন সাইনির দেহ। —ফাইল চিত্র।

রাজেন্দ্র সাইনি ‘পদ্মাবত’ দেখবেন না।

সঞ্জয় লীলা ভন্সালীর ছবিকে ঘিরে করণী সেনার হাঁকডাক কিছুমাত্র কমেনি। জয়পুরের সাইনি পরিবার কিন্তু এ সব থেকে অনেক দূরে। দু’মাস আগে জয়পুরের নাহারগড়ে উদ্ধার হয়েছিল চেতন সাইনি নামে এক ব্যক্তির মৃতদেহ। ঘটনাচক্রে আগামিকাল, অর্থাৎ ‘পদ্মাবতে’র মুক্তির দিনই চেতনের মৃত্যুর ঠিক দু’মাস পূর্ণ হতে চলেছে। রাজেন্দ্র সম্পর্কে চেতনেরই মামা।

নাহারগড় কেল্লার কার্নিসে ঝোলা চেতনের মৃতদেহের পাশে লেখা ছিল ‘পদ্মাবতীর প্রতিবাদে।’ সঞ্জয়ের ছবির নাম তখনও ‘পদ্মাবতী’ই ছিল। পদ্মাবতীর বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরাই চেতনকে হত্যা করেছে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছিল তখন। রহস্যের সমাধান হয়নি। ‘পদ্মাবতী’ বা ‘পদ্মাবত’ কোনও নামই শুনতে এখন নারাজ সাইনি পরিবার।

প্রথমে পুলিশ ভেবেছিল আত্মহত্যাই বুঝি! কিন্তু পরে নজরে আসে দেহটির আশেপাশে একাধিক পাথরে কয়লা দিয়ে কিছু লেখা। কোনওটিতে লেখা, ‘‘পদ্মাবতীর প্রতিবাদে।’’ কোনওটায়, ‘‘আমরা শুধু পুতুল ঝোলাই না পদ্মাবতী।’’

পদ্মাবতীর সঙ্গে চেতনের কী সম্পর্ক? তিনি পদ্মাবতীর সমর্থনে বা বিরোধিতায় পথে নেমেছিলেন, এমন নয়। তা হলে কারা কেন তাঁকে মারল? পাথরের দেওয়ালে লেখা ছিল ‘চেতন তান্ত্রিক মর গয়া!’ চেতন কি তন্ত্রসাধনা করতেন? পরিবারের দাবি, কস্মিন কালেও না। কিন্তু স্থানীয় লোককথা অনুসারে পদ্মাবতীর স্বামী রতন সিংহের ঘনিষ্ঠ ছিলেন চেতন তান্ত্রিক। তিনি আলাউদ্দিনের শিবিরে যোগ দেন। কথিত আছে, পদ্মাবতীর ছবি দেখিয়ে আলাউদ্দিনকে চিতোর আক্রমণে প্রলুব্ধ করেছিলেন তিনিই। তবে কি চেতনকে মেরে পদ্মাবতী ইউনিটকে কোনও বার্তা দেওয়া হল? কারণ করণী সেনা তো মনে করে, এই ছবি পদ্মাবতীকে অসম্মান করেছে!

অথচ ঘটনা হল, চেতনের মৃত্যুর পিছনে করণী সেনার হাত আছে, এমন প্রমাণ কিন্তু পায়নি পুলিশ। আবার দুর্গের দেয়ালে এও তো লেখা ছিল, ‘‘কাফিরদের অবস্থা এমনই হয়!’’ সেটা তো করণী সেনার লেখার কথা নয়! তবে? রাজেন্দ্র সাইনির নিশ্চিত বিশ্বাস, ‘‘ভাগ্নেকে ব্যবসায়িক কারণে খুন করা হয়েছে। তার পর পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে পদ্মাবতীর নাম নেওয়া হয়েছে।’’ পরিবারের মতে, যে ভাবে চেতন ঝুলে ছিলেন তা কারও নিজের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রাথমিক ভাবে চেতনের ব্যবসার অংশীদার আনোয়ার বলে এক ব্যক্তির নাম পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছু না-পাওয়ায় ক’দিন পরে তাঁকেও ছেড়ে দেয় পুলিশ।

দু’মাস হয়েছে বাবা নেই। চেতনের ১৭ বছরের বড় মেয়ে কোমল নিজের স্কুল নিয়ে অনেকটাই ব্যস্ত। কিন্তু গুম মেরে গিয়েছে ছোট ছেলে যশ। রাজেন্দ্র বলেন, ‘‘প্রায়ই বিকেলে ছেলেকে স্কুটারে বসিয়ে ঘুরতে বেরোত চেতন। ছুটিছাটায় নাহারগড় কেল্লাতেও কত বার নিয়ে গিয়েছে।’’ মূর্তি পালিশের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শ্বশুর-শাশুড়ি ও দুই ভাশুরের একান্নবর্তী সংসারে কোনও রকমে প্রতিপালিত হচ্ছেন চেতনের স্ত্রী-সন্তানেরা।

তার মধ্যেই পদ্মাবত হয়ে পর্দায় আসছেন পদ্মাবতী। করণী সেনার হুঙ্কার অব্যাহত। একটা ছবিকে ঘিরে এত রক্তারক্তি কেন, চেতনের মতো মানুষের মৃত্যু কেন— কিছুই থই পান না রাজেন্দ্র। তাঁর একটাই প্রশ্ন, ‘‘সিনেমা দেখে তো মানুষ মনোরঞ্জনের জন্য। তাই নিয়ে এত মারামারি কেন?’’

Chetan saini Padmavaat Shri Rajput Karni Sena চেতন সাইনি পদ্মাবত করণী সেনা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy