কোনও মহিলার হাত ধরে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলা তাঁর সম্ভ্রমহানির সমান। সম্প্রতি এক মামলায় এমনটাই জানিয়েছে ছত্তীসগঢ় হাই কোর্ট। আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কোনও মেয়ের সঙ্গে কোনও তরুণের এমন আচরণ ‘অত্যন্ত আপত্তিকর’ হিসাবে দেখা হয়।
ছত্তীসগঢ়ের এই ঘটনার সময়ে অভিযুক্তের বয়স ছিল ১৯ বছর। এক কিশোরী স্কুল থেকে ফেরার সময়ে অভিযুক্ত তাকে প্রেম নিবেদন করেন। ওই সময়ে কিশোরীর সঙ্গে তার বোন এবং এক বন্ধুও ছিল। অভিযোগ, ওই তরুণ কিশোরীর হাত ধরে তাকে নিজের দিকে টেনে বলেছিলেন ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পকসো আইনে মামলা হয় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। নিম্ন আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্তও করে।
অভিযুক্তকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত। সরকারি আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, নিম্ন আদালতের ওই সাজা ঘোষণার নেপথ্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে। উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলা খারিজ করার জন্য হাই কোর্টে সওয়াল করেন সরকারি আইনজীবী। যদিও অভিযুক্তের আইনজীবীর সওয়াল, কাউকে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলা পকসো আইনের আওতায় যৌন হেনস্থা হিসাবে বিবেচনা হয় না। পাশাপাশি অভিযুক্ত যে ‘যৌন অভিপ্রায়’ নিয়েই কিশোরের হাত ধরিয়েছিলেন, তা-ও সন্দেহাতীত ভাবে বলা যায় না।
আরও পড়ুন:
তবে দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে হাই কোর্টও দোষী সাব্যস্ত করেছে অভিযুক্তকে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, কোনও মহিলার হাত ধরে টেনে ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলা ওই মহিলার সম্ভ্রমহানির সমান। গ্রামের দিকে কোনও মহিলার সঙ্গে কোনও তরুণের এমন আচরণকে খুবই আপত্তিকর হিসাবে দেখা হয় বলেও মনে করছে আদালত।
হাই কোর্টের মন্তব্য, “অভিযুক্ত যে আচরণ করেছেন, তা ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারা অনুসারে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কারণ, তিনি ওই কিশোরীর সম্ভ্রমহানির উদ্দেশ্যেই কাজটি করেছেন।” বস্তুত, সাবেক ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় কোনও মহিলার সম্ভ্রমহানির উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগে শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে।
হাই কোর্ট এই মামলায় অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করলেও তাঁর শাস্তির মেয়াদ কমিয়েছে। তিন বছরের কারাদণ্ড কমিয়ে এক বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। আদালত এ-ও জানিয়েছে, ওই কিশোরীর হাত ধরে টানা এবং ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলা ছাড়া আর কোনও আপত্তিকর কাজ করেননি অভিযুক্ত।