পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালিয়েছে ভারতীয় সেনা। এই অভিযান ঘিরে দেশে-বিদেশে হয়েছে বিস্তর কথাবার্তা। বিশেষত, পাকিস্তান বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম দাবি করেছে। তাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ। এই আবহে ভারতীয় সেনার সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহান জানালেন, অভিযানের ১৫ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে ‘ভুয়ো গল্প’-এর মোকাবিলায়। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই ‘ভুয়ো তথ্য’ মোকাবিলায় বার বার জোর দিয়েছেন তিনি।
সিঙ্গাপুরে চলছে ‘সাংগ্রি-লা’ বৈঠক। শুক্রবার শুরু হয়ে চলবে রবিবার পর্যন্ত। মূলত প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হয় এই বৈঠকে। চলতি বছর ৪৭টি দেশের প্রতিনিধি যোগদান করেছেন সেখানে। এই বৈঠকের ফাঁকে ‘সিঁদুর’ অভিযান নিয়ে শুক্রবার বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন জেনারেল চৌহান। সেখানেই তিনি জানান, যুদ্ধ নিয়ে ভুয়ো তথ্য মোকাবিলা কতটা গুরুত্বপূ্র্ণ। জেনারেল চৌহান জানান, অভিযানের ১৫ শতাংশ সময় খরচ হয়েছে ‘ভুয়ো গল্প’-এর মোকাবিলায়। এর থেকেই স্পষ্ট যে, শুধু যুদ্ধক্ষেত্র নিয়ে তথ্য দেওয়ার জন্যই নির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। তবে সত্যের ভিত্তিতেই সেই তথ্য প্রচার করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘ভুয়ো খবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা লাগাতার চলে। সুচিন্তিত উপায়েই আমরা জনসংযোগের কৌশল স্থির করেছি। আমরা পরিমিত পদক্ষেপ করেছি। প্রতিক্রিয়া জানাইনি। কারণ অভিযান নিয়ে মানুষের ভাবনাচিন্তায় আঘাত হানতে পারে ভুয়ো তথ্য।’’
জেনারেল চৌহান বলেন, ‘‘দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েই ভারত নিজের বক্তব্য প্রকাশ করেছে। কখনও কখনও তার জন্য ধীরে ধীরে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেছে ভারত। যেমন, প্রথম তিন দিন দুই মহিলা অফিসার (কর্নেল সোফিয়া কুরেশি, উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ) আমাদের মুখপাত্র হয়েছিলেন। কারণ, তখন সেনাকর্তারা অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন। ১০ তারিখের পরে ডিজিএমও তথ্য প্রচারের জন্য সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন।’’
সিঁদুর অভিযান ঠিক কী ভাবে হয়েছে, কেমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়েও বিভিন্ন তথ্য দেন ভারতীয় সেনা সর্বাধিনায়ক (সিডিএস) জেনারেল চৌহান। তিনি জানান, এই অভিযানে সংযোগ (নন কনট্যাক্ট) ছাড়াই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে। যুদ্ধের প্রযুক্তির বিষয়ে বিশদে বলতে গিয়ে জেনারেল চৌহান বলেন, ‘‘পাকিস্তান চিনের বাণিজ্যিক উপগ্রহ চিত্রের উপর হয়তো অনেকটাই নির্ভরশীল ছিল। সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা তারা পেয়েছিল কি না, তার প্রমাণ নেই। অন্য দিকে, ভারত দেশীয় প্রযুক্তির উপর ভরসা রেখেছে। দেশি এবং বিদেশি র্যাডারের মিলিত নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করে কাজ করেছে।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে ইন্টারনেটের সংযোগ নেই। সে কারণে সেগুলি আরও বেশি নিরাপদ। সরকারি কিছু ওয়েবসাইট, যেমন স্কুল, কলেজের ওয়েবসাইটে সাইবার হানা হয়। কিন্তু তাতে যুদ্ধ অভিযানের কোনও ক্ষতি হয় না।
ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কতটা আধুনিক, তা-ও বৈঠকে জানিয়েছেন জেনারেল চৌহান। তিনি আরও জানান, সমুদ্র, আকাশ, স্থলবাহিনীর মধ্যে সংযোগরক্ষারও প্রয়োজন রয়েছে। তবে সফল ভাবে আঘাত হানা সম্ভব। সিঁদুর অভিযানে একই সঙ্গে একাধিক এলাকায় অভিযান করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যুদ্ধক্ষেত্রে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা)-র ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করেন জেনারেল চৌহান। ওই বৈঠকে যোগদান করতে গিয়ে শনিবার ব্লুমবার্গ টিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দেন তিনি। সেখানেই তিনি মেনে নেন যে, পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। এই প্রথম ভারতের তরফে যুদ্ধবিমান ধ্বংসের কথা মেনে নেওয়া হল।