সাত বছর পরে উত্তপ্ত ভূকৌশলগত পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই চিনে পৌঁছচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ৩১ অগস্ট এসসিও সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে তিনি মুখোমুখি হবেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে।
মে মাসে অপারেশন সিঁদুরের সময় পাকিস্তানকে ব্যাপক সামরিক সাহায্য করেছিল চিন। যে সব ক্ষেপণাস্ত্র উড়ে এসেছে সীমান্তের ওপার থেকে, তা চিনের তৈরি। কিন্তু তার তিন মাসের মধ্যেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতির তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে ভারত ও চিন দুই দেশই। ভারত-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আমেরিকার শুল্ক-যুদ্ধ গোটা অঞ্চলে চিনের অর্থব্যবস্থা এবং কৌশলগত পরিসর ও সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। ভারত-চিন সম্পর্কের অধুনা উন্নতিতে তারই ছায়া পড়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
প্রসঙ্গত দু’দেশের মধ্যে সরাসরি উড়ান চালু করা বা কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা চালু করার মতো বিষয়গুলির পাশাপাশি স্পর্শকাতর সীমান্ত সমস্যাগুলির জট ছাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে দু’দেশ। সম্প্রতি চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। চিন যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন করে উজ্জীবিত করতে চাইছে, তার পিছনে তাদের নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট স্বার্থ জড়িত বলেই কূটনৈতিক সূত্রের খবর। চিনের দাবি, গলওয়ানের পর থেকে ভারতে চিনের বিনিয়োগে সাউথ ব্লক যে লাল ফিতের ফাঁস পরিয়ে রেখেছে, তাকে আলগা করা হোক। ২০২০-র জুনের পর কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, চিন থেকে বিনিয়োগ এলে পুরোপুরি সরকারি অনুমোদন নিতে হবে। অর্থাৎ প্রতিটি বিনিয়োগের সব দিক যাচাই করে তার পর ছাড়পত্র দেওয়া হবে। স্বাভাবিক ভাবেই তাতে চিনা বিনিয়োগ ধাক্কা খায়। এ বার প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময়ে এই নিয়মে বদল আনা হচ্ছে বলে খবর। এর ফলে লাভ চিনের। তাদের বিনিয়োগ সহজেই ভারতে আসতে পারবে। খুব স্পর্শকাতর এবং কৌশলগত ক্ষেত্র ছাড়া এ বিষয়ে বিশেষ কোনও বাধা থাকবে না। প্রসঙ্গত ভারতের কারখানা ক্ষেত্রও এই একই আবেদন করে চলেছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে।
এ দিন চিন ও জাপান সফরের আগে এক বার্তায় মোদী জানান, জাপান সফরে তিনি সে দেশের সঙ্গে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সেমিকন্ডাক্টর-সহ নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর জন্য আলোচনা করবেন। চিন সফরে শি এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনার কথাও ওই বার্তায় জানিয়েছেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফরের ঠিক আগে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে লেখা শি জিনপিং-এর একটি ‘গোপন’ চিঠি সংবাদসংস্থার মাধ্যমে প্রকাশ্যে চলে এসেছে। চিঠিটি যদিও মার্চ মাসের, কিন্তু বর্তমান ভূকৌশলগত পরিস্থিতির একটি প্রেক্ষিত তাতে স্পষ্ট। ওই চিঠিটিতে আমেরিকার বিভিন্ন নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শি। সেই প্রসঙ্গেই চিনা প্রেসিডেন্ট লেখেন, ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের দ্রুত উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ চিন ও ভারত দু’দেশেরই সামনে অভিন্ন চ্যালেঞ্জ— ট্রাম্প প্রশাসন। পরবর্তীতে অবশ্য চিনের উপর থেকে শুল্কের জুজু হঠিয়ে ভারতকেই নিশানা করেছেন ট্রাম্প। কারণ চিনও পাল্টা দুর্লভ খনিজ, চুম্বকের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলি আমেরিকায় রফতানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ভারতের কাছে এ ভাবে চাপ তৈরি করার কোনও অস্ত্র ছিল না।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)