গত মার্চ মাসে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে চিঠি লিখেছিলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’-এর একটি প্রতিবেদনে এমনই দাবি করা হয়েছে। ভারতের এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিঠি লিখে আসলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কতটা উন্নত করা যায়, তা যাচাই করে দেখতে চেয়েছিলেন চিনের সরকার এবং সে দেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান জিনপিং।
‘ব্লুমবার্গ’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরে ওই চিঠি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে পৌঁছোয়। ঘটনাচক্রে, তারও তিন মাস পরে জুনে সংঘাতপূর্ণ অতীত পিছনে ফেলে বেজিঙের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া শুরু করে ভারত। সীমান্ত সংঘাত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয় দুই তরফ থেকেই। আর এই সব কিছুর নেপথ্যে ট্রাম্পের শুল্কনীতি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শুল্ক নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়়ে তুলতে দুই পড়শির কাছাকাছি আসা যে প্রয়োজন, সেই বার্তাই জিনপিং ওই চিঠিতে দিতে চেয়েছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বেজিঙের বার্তা স্পষ্ট। তা হল, ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের দ্রুত উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। কারণ, চিন ও ভারত দু’দেশেরই সামনে অভিন্ন চ্যালেঞ্জ— ট্রাম্প প্রশাসন।
ঘটনাচক্রে, এই চিঠির বিষয়টি যখন প্রকাশ্যে এল, তার কয়েক দিন পরেই এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে চিনে যাচ্ছেন মোদী। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এসসিও সম্মেলনের পাশাপাশি চিনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেরও আয়োজন করা হয়েছে। রবিবার এই বৈঠকটি হতে পারে। দু’দিনের সফরে শুক্রবার জাপানে গিয়েছেন মোদী। সেখান থেকেই তিনি সরাসরি পৌঁছোবেন চিনে।
মার্চ থেকে অগস্ট পর্যন্ত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেক বদলে গিয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করার জন্য ভারতের অধিকাংশ পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অথচ, তুলনায় চিন রাশিয়া থেকে অনেক বেশি পরিমাণ তেল কিনলেও আপাতত শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ হয়নি, তাদের উপরে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আমেরিকার অধুনা বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি। কারণ, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের ‘আগ্রাসন’ রুখতেই ভারতের সঙ্গে কৌশলগত বোঝাপড়া গত দু’দশকে আরও মজবুত করেছে আমেরিকা। এখন সেই চিনকে ছাড় দিয়েই কেন কৌশলগত মিত্র ভারতকে কোণঠাসা করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
চিন অবশ্য তাদের প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকার ‘দাদাগিরি’ নিয়ে বার বারই সরব হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত এবং চিন দু’দেশের মধ্যে সরাসরি উড়ান চালু করা বা কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা চালু করার মতো বিষয়গুলির পাশাপাশি স্পর্শকাতর সীমান্ত সমস্যাগুলির জট ছাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে দু’দেশ। কয়েক দিন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই ভারতে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদী, বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। চিন যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন করে উজ্জীবিত করতে চাইছে, তার পিছনে তাদের নির্দিষ্ট ও স্পষ্ট স্বার্থ জড়িত বলেই কূটনৈতিক সূত্রের খবর।
পাল্টা দুর্লভ খনিজ, চুম্বকের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যগুলি আমেরিকায় রফতানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে চিন অবশ্য ট্রাম্পকে চাপে রাখতে পেরেছে। ভারতের কাছে এ ভাবে চাপ তৈরি করার কোনও অস্ত্র নেই। তবে তা সত্ত্বেও গুমর ভেঙে চিনের পড়শি ভারতের দিকে এই হাত বাড়ানোর কৌশলকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।