বিচার বিভাগ না আইনসভা— সবার উপরে কে রয়েছে? তা নিয়ে বিতর্কের মাঝে এ বার স্পষ্ট বার্তা দিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই। শীর্ষ আদালতের নতুন প্রধান বিচারপতি জানান, বিচার বিভাগ বা আইনসভা নয়, সকলের উপরে রয়েছে দেশের সংবিধান। সংবিধানের অধীনে থাকা প্রতিটি স্তম্ভকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সম্প্রতি তামিলনাড়ু সরকারের একটি মামলায় রাষ্ট্রপতিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের ওই মন্তব্যের পর থেকেই বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। অসন্তোষ প্রকাশ করেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি তথা সংসদের উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড়। বিজেপি নেতা তথা ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবেও সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন। এই আবহে শীর্ষ আদালতের নতুন প্রধান বিচারপতির মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
রবিবার মুম্বইয়ে মহারাষ্ট্র এবং গোয়া বার কাউন্সিলের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছিলেন প্রধান বিচারপতি গবই। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘লাইভ ল’ অনুসারে, ওই অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিচার বিভাগ, না সংসদ, না নির্বাহী বিভাগ, সর্বোচ্চ স্থানে কে রয়েছে? যদি এই প্রশ্ন করা হয়, তবে আমি বলব শুধুমাত্র দেশের সংবিধানই সকলের উপরে রয়েছে। দেশের তিনটি স্তম্ভ— বিচার বিভাগ, সংসদ এবং নির্বাহী বিভাগকে সংবিধানের জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
শীর্ষ আদালতের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার সময়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং সংসদকে ঘিরে এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছিল। তিনিও বিতর্কের আবহে এই একই অবস্থান জানিয়েছিলেন। তৎকালীন প্রধান বিচারপতিও জানিয়েছিলেন, সকলের উপরে রয়েছে সংবিধানই। বস্তুত, বিজেপি সাংসদ নিশিকান্তের মন্তব্যের জন্য সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপের আর্জিতে একটি জনস্বার্থ মামলাও দায়ের হয়েছিল। তবে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খন্না সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছিলেন।
রবিবার মুম্বইয়ের ওই অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতা আছে সংসদের। কিন্তু সংবিধানের মৌলিক কাঠামোয় হাত দিতে পারে না সংসদ। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, তিনি জানান, মৌলিক কাঠামো বলতে বোঝানো হচ্ছে সংবিধানের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য, যেমন সংবিধানের সর্বোচ্চ স্থান, আইনের শাসন এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা— এগুলিকে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারে না সংসদ। প্রধান বিচারপতি বলেন, “সংবিধানের তিনটি স্তম্ভ— আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ প্রতিটিই সমান। সংবিধানের প্রতিটি স্তম্ভকে অবশ্যই একে অন্যের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে।”
আরও পড়ুন:
সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুসারে, রবিবারের ওই অনুষ্ঠানে মহারাষ্ট্রের মুখ্যসচিব, মহারাষ্ট্র পুলিশের ডিজি এবং মুম্বইয়ের পুলিশ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের অনুপস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করার সময়েই সংবিধানের প্রতিটি স্তম্ভের একে অন্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।