এজলাসে আইনজীবীর ‘জুতো’ ছুড়ে মারার চেষ্টা নিয়ে ফের মন্তব্য করলেন দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই। বৃহস্পতিবার একটি মামলার শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি জানান, গত সোমবারের ঘটনায় তিনি এবং বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন চমকে গিয়েছিলেন। তবে এখন তাঁরা বিষয়টি মাথা থেকে মুছে দিয়েছেন। যদিও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূয়ানের মতে, ওই ঘটনার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করা উচিত ছিল।
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতির দিকে ‘জুতো’ ছুড়ে মারার চেষ্টা করেন রাকেশ কিশোর নামে ৭১ বছর বয়সি এক আইনজীবী। ওই সময়ে বেঞ্চে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি চন্দ্রন। ওই ঘটনা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি বলেন, “সোমবার যা ঘটেছে, তাতে আমরা (প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি চন্দ্রন) চমকে গিয়েছিলাম। তবে এখন আমরা তা মাথা থেকে বার করে দিয়েছি।”
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি যখন এ কথা জানান, তখন তাঁর সঙ্গে বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি ভূয়ান। তিনি অবশ্য এ বিষয়ে নিজস্ব মতামত জানান। সংবাদ সংস্থা পিটিআই অনুসারে, বিচারপতি ভূয়ান বলেন, “এ বিষয়ে আমার নিজস্ব মতামত রয়েছে। তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি। এটা কোনও তামাশার বিষয় নয়।” তাঁর মতে, ওই আক্রমণের ঘটনা সুপ্রিম কোর্টের প্রতি অবমাননাকর। এর জন্য যথাযথ পদক্ষেপ করা উচিত ছিল বলে জানান তিনি।
সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাও এই ঘটনাকে ক্ষমার অযোগ্য বলে ব্যাখ্যা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি সেখানেই থামিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “আমরা বিষয়টি মাথা থেকে বার করে দিয়েছি।” এ কথা বলে তিনি আদালতের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন সকলকে।
গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুনানি চলাকালীন আচমকাই সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁর দিকে একটি বস্তু ছোড়ার চেষ্টা করেন রাকেশ। আইনি খবর পরিবেশনকারী ওয়েবসাইট ‘লাইভ ল’ অনুসারে, প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই বলছেন, প্রধান বিচারপতির দিকে জুতো ছুড়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন ওই ব্যক্তি। আবার কারও বক্তব্য, একটি কাগজের বান্ডিল ছুড়ে মারার চেষ্টা হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
নিরাপত্তাকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরে অন্য আইনজীবীদের নিজেদের সওয়াল চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন প্রধান বিচারপতি। এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “এই সব দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। আমরা বিভ্রান্ত নই। এ সব ঘটনা আমার উপর প্রভাব ফেলতে পারে না।” আইনজীবীর এমন কাণ্ডের জেরে কিছুক্ষণের জন্য বিঘ্নিত হয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির এজলাসের কাজকর্ম। পরে সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তাকর্মীরা ওই ব্যক্তিকে ধরে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেন। সেই দিন প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জেরা করার পরে তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল পুলিশ। দিল্লি পুলিশ ওই সময় জানায়, সুপ্রিম কোর্ট থেকে কোনও রকম অভিযোগ না পাওয়ার কারণেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পরে সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে বিভিন্ন মন্তব্যও করেন ওই ব্যক্তি।
সোমবারের ঘটনার জেরে রাকেশর ওকালতির লাইসেন্স নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করে দেয় বার কাউন্সিল। ইতিমধ্যে বেঙ্গালুরুতে তাঁর বিরুদ্ধে একটি এফআইআরও রুজু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশন তাঁর সদস্যপদ বাতিল করে দিয়েছে।