দুর্গাপুজোর বিসর্জনকে ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হল দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ)। এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ল। ছোড়া হল পাথর, দেখানো হল জুতো। অভিযোগ, জেএনইউ-এর প্রাক্তনী উমর খালিদ এবং শারজিল ইমামকে রাবণ হিসাবে চিত্রিত করে দশেরার ‘রাবণ-দহন’ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল এবিভিপি। সেখানে হামলা চালায় বাম সংগঠনগুলি। এবিভিপি-র বিরুদ্ধে তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছে। উভয় তরফেই বিবৃতি দিয়ে রাতের ঘটনা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। দাবি, সংঘর্ষে অনেক ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে জেএনইউ-এ এবিভিপি-র তরফে মা দুর্গার বিসর্জন এবং দশেরার ‘রাবণ-দহন’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বিবৃতিতে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠনটি দাবি করেছে, আইসা, এসএফআই এবং ডিএসএফ-সহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের সদস্যেরা সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সবরমতী টি-পয়েন্টের কাছে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হামলা চালায়। এতে অনেক ছাত্রছাত্রী আহত হয়েছেন। এবিভিপি-র জেএনইউ সভাপতি বলেন, ‘‘এটা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানেই হামলা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসবের ঐতিহ্যে, পড়ুয়াদের ভাবাবেগে আঘাত। এই আগ্রাসন কোনও ভাবেই সহ্য করবে না এবিভিপি।’’ অভিযোগ, বিসর্জনের শোভাযাত্রায় মহিলাদের আক্রমণ করা হয়েছে। ঢিল ছো়ড়া হয়েছে। এমনকি, বামপন্থী ছাত্রেরা প্রতিমার সামনে জুতো তুলে দেখিয়েছেন বলেও দাবি এবিভিপি-র। জেএনইউ ছাত্র সংগঠনের (জেএনইউএসইউ) যৌথ সম্পাদক বৈভব মীনাও এই ঘটনার নিন্দা করেছেন।
আরও পড়ুন:
বামপন্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছে এবিভিপি। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে আইসা, ডিএসএফ, এসএফআই-এর মতো সংগঠন। আইসা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, উমর, শারজিলদের রাবণ হিসাবে দেখিয়ে ‘রাবণ-দহন’ করছিল এবিভিপি। তাঁদের মতে, ‘‘এটা ইসলাম-বিদ্বেষের ঘৃণ্য প্রদর্শন। রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য এ ভাবে ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।’’ কেন রাবণ হিসাবে নাথুরাম গডসে, রাম রহিমদের বাছা হল না, সেই প্রশ্নও তুলেছে আইসা। তারা বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘ইসলাম-বিদ্বেষ এবং ঘৃণার রাজনীতিকে গ্রহণ করবে না জেএনইউ।’’ এর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে এখনও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সিএএ বিরোধী আন্দোলন এবং দিল্লি হিংসায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল উমর, শারজিলদের। ওই হিংসার ঘটনায় ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। উমর ও শারজিলের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) মামলা করেছিল দিল্লি পুলিশ। গত পাঁচ বছর ধরে তাঁরা জেলবন্দি।