কৃষ্ণলীলার ঝুলনে মিশেছে জঙ্গিঘাঁটি, তোলাবাজি!
ঝুলন-উৎসবের সাজে পুরনো দিনের মতো সবুজ গ্রাম, কৃষক, ঝর্না-পাহাড়-নদী, খেলার মাঠ উধাও। বদলে এসেছে বন্দুক, ক্ষেপণাস্ত্র। মাটির পুতুলে স্প্রিং জুড়ে ‘ঘাড় নাড়া বুড়ো’রও খোঁজ মেলে না কোথাও। তাকে সরিয়েছে বন্দুকবাজরা।
শিলচরের সঙ্গে গোটা অসমের ঝুলন উৎসবের ছবিটা এখন এমনই। আশ্রম-আখড়ার পাশাপাশি রাজ্যে সাধারণ মানুষও ঝুলনে মাতেন। পাড়ার মোড়, বাজারে অস্থায়ী মণ্ডপ তৈরি হয়। সাজানো হয় হরেক ‘থিম’। এ বার ঝুলনযাত্রা শুরু হয়েছে ২ অগস্ট। তা শেষ হবে ৭ অগস্ট, রাখি পূর্ণিমার দিন।
কালীপ্রসন্ন ভট্টাচার্য ‘শিলচরের কড়চা’ বইয়ে লিখেছিলেন— ‘কাগজের কারুকাজ দিয়ে উৎসবস্থলটিকে অপরূপ সাজে সাজানো হতো।’ ... ‘ঝুলনের ক’দিন তখন পথে নামত জনস্রোত। মহিলাদের সংখ্যাই বেশি। দলবদ্ধ ভাবে গ্রামের লোক শহরে আসতেন।’
কাগজের পর আসে পুতুলের ব্যবহার। আগে মূর্তি-কারিগররা ঝুলনের জন্য বিশেষ ধরনের পুতুল ও মূর্তি গড়তেন। মাটির বাঘ-সিংহ দিয়ে চিড়িয়াখানা সাজাত কিশোর-তরুণরা। পাহাড়, জঙ্গলও তৈরি হতো, কিন্তু সেখানে জঙ্গি দেখানোর কথা ভাবতেন না কেউ।
৮০-ছুঁইছুঁই শ্যামলাল পাল, ৬০-পেরনো প্রাণকৃষ্ণ পালের মতো শিলচরের প্রতিমাশিল্পীরা ঝুলনের আগে এখনও ঘোড়া, হাতি গড়েন। কিন্তু তা বিক্রি হয় না বললেই চলে। তাঁদের কথায়, ‘‘কিশোর-তরুণরা নয়, এখন ঝুলন করে শিশুরা। মাটির চেয়ে প্লাস্টিকের জিনিসেই তাদের বেশি আগ্রহ।’’ প্রাণকৃষ্ণবাবু জানান, আগে রথের দিন থেকে শুরু হতো ঝুলনের জন্য পুতুল কেনা। আখড়াগুলিতে চলত নাটক, পালাগানের মহড়া। সবই বদলেছে।
সে সব দিনের কথা মনে করেন রতন দত্ত, সুমিত ভুঁইয়ারাও। তাঁরা ঝুলনে বৈদ্যুতিক খেলনাও ব্যবহার করতেন। পদ্মের ভিতর থেকে কৃষ্ণ বেরিয়ে আসার সাজ এক বার খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। এক বার দেখানো হয় বজ্রপাত। জঙ্গি বা কোনও হাঙ্গামা দেখানোর কথা চিন্তা করেননি কেউ।
শিলচরের আশ্রম-আখড়ার ঝুলনে অবশ্য খুব একটা বদল আসেনি। এ বারও রাধামাধব আখড়ায় পাঁচ দিন ধরে পালাগান চলেছে। শ্যামসুন্দর আখড়া, মদনমোহন আখড়াও সেজে উঠছে পুরনো আদলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy