ফের মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানে বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ড। দেহরাদূন-সহ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় সোমবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি চলছে। আচমকা বেড়ে গিয়েছে তমসা, গঙ্গা, যমুনা-সহ একাধিক নদীর জলস্তর। কোথাও কোথাও হড়পা বানও দেখা দিয়েছে। একই পরিস্থিতি হিমাচলেও। প্রশাসন সূত্রে খবর, সাম্প্রতিকতম দুর্যোগে এখনও পর্যন্ত দুই রাজ্য মিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন মোট ১৮ জন। অন্তত ২০ জনের কোনও খোঁজ মিলছে না। এ ছাড়াও, দুই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়েছেন কয়েকশো মানুষ। তাঁদের উদ্ধার করার চেষ্টা চলছে।
উত্তরাখণ্ডের রাজধানী দেহরাদূনে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সেখানে এখনও পর্যন্ত অন্তত ১৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এঁদের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের আট জন শ্রমিক রয়েছেন। দেহরাদূনের বিকাশনগরে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে উঠেছিল টন্স তথা তমসা নদী। তার মাঝে আটকে পড়ে একটি ট্র্যাক্টর। নিহত শ্রমিকেরা সেই ট্র্যাক্টরেই ছিলেন। নদীর স্রোতে ট্র্যাক্টরটি ভেসে যায়। মৃত্যু হয় সকলের। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। নৈনিতাল ও পিথোড়া জেলা থেকেও দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
অন্য দিকে, ধস নেমে দেহরাদূন-সহ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় নানা ভবন ভেঙে পড়েছে। ধসে গিয়েছে রাস্তা, সেতু। বেশির ভাগ জায়গায় বন্ধ স্কুল, কলেজ, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। দেহরাদূনে পৌন্ধার দেবভূমি ইনস্টিটিউটে আটকে পড়েছিলেন প্রায় ৪০০-৫০০ পড়ুয়া। ইতিমধ্যে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তৎপরতায় ওই এলাকা থেকে তাঁদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে দুর্যোগ এখনই থামছে না। বুধবারও উত্তরাখণ্ডের বেশ কিছু জেলায় প্রবল বৃষ্টির লাল সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। দেহরাদূন, চম্পাবত এবং উধম সিংহ নগরে ভারী বৃষ্টি চলবে শনিবার পর্যন্ত।
আরও পড়ুন:
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী জানিয়েছেন, দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন এবং যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য রাজ্যের জরুরি অপারেশন সেন্টার (এসইওসি) থেকে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, রাজ্যে মোট ১৩টি সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকা। অন্তত ১২টি কৃষিজমি ও ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে রাজস্বে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২.৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া, ২১টি রাস্তা ধসে গিয়েছে। কোথাও ভেঙে গিয়েছে বাঁধ।
একই পরিস্থিতি হিমাচলেও। মন্ডী জেলায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে বহু বাড়ি, গাড়ি। ধরমপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি বাস বন্যার জলে খড়কুটোর মতো ভেসে গিয়েছে। মন্ডীরই ব্রাগতা গ্রামে বিশাল ভূমিধসের জেরে বাড়ি ধসে পড়ে মৃত্যু হয় একই পরিবারের তিন সদস্যের। নিহতদের মধ্যে এক শিশু এবং দুই মহিলা রয়েছেন। প্রসঙ্গত, চলতি মরসুমে একাধিক বার মেঘভাঙা বৃষ্টি আর হড়পা বানে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলের বিস্তীর্ণ অংশ। গত ২০ জুন থেকে এখনও পর্যন্ত হিমাচলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু হয়েছে ২৩৬ জনের।