E-Paper

মণিপুর: বীরেনের ইস্তফার পরে বাড়ছে জটিলতা

যৌথ মঞ্চ কুকি-জ়ো কাউন্সিল শনিবারও বলে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত যথাযথ রাজনৈতিক মীমাংসার পথ প্রশস্ত করবে। কিন্তু বিজেপির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সম্বিত পাত্র জানিয়েছেন, কেন্দ্র মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৪৫
এন বীরেন সিংহ।

এন বীরেন সিংহ। —ফাইল চিত্র।

মণিপুরে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি ও বীরেনের পদত্যাগের পরে রাজনৈতিক জটিলতা কাটার বদলে বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি এমন, সমাজে ক্রমে কোণঠাসা হতে থাকা বিজেপি বিধায়কেরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন। রাজ্যের কুকি-জ়ো জনজাতিরা যতই রাষ্ট্রপতি শাসনকে স্বাগত জানাচ্ছেন, ততই মেইতেই সমাজের আক্রমণের মুখে পড়তে হচ্ছে বিজেপিকে।

যৌথ মঞ্চ কুকি-জ়ো কাউন্সিল শনিবারও বলে, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত যথাযথ রাজনৈতিক মীমাংসার পথ প্রশস্ত করবে। কিন্তু বিজেপির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সম্বিত পাত্র জানিয়েছেন, কেন্দ্র মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তা নিয়ে কুকি-জ়ো কাউন্সিল বলে, “কুকি-জোরা বিচ্ছিন্নতাবাদী নয়। পাত্র হয়তো জানেন না, মেইতেইরাই ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে চলেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, গির্জাগুলি পুড়িয়ে দিয়েছে, উপত্যকা থেকে কুকিদের জোর করে তাড়িয়েছে। এন বীরেন সিংহের সরকারই জনজাতি নির্মূল অভিযান শুরু করে কুকি ও মেইতেইদের জনসংখ্যাগত এবং ভৌগোলিক দিক থেকে পৃথক করেছে।” রাজ্য বিজেপি বলছে, বীরেন শর্তসাপেক্ষে পদত্যাগ করেছিলেন। তাঁর পদত্যাগপত্রেও বলা ছিল, মণিপুরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা অক্ষুণ্ণ থাকতে হবে। রাজ্যের কোনও বিভাজন হবে না। তাই সমস্যা সমাধানের জন্য কুকিদের জন্য পৃথক প্রশাসন গড়ার প্রশ্নই নেই। দলের অন্দরের খবর, পদত্যাগ করে বীরেন কার্যত নিজের নড়বড়ে অবস্থান মজবুত করে নিতে পেরেছেন। এক দিকে তাঁর কোনও সর্বসম্মত বিকল্প বেছে নিতে না পারা ও অন্য দিকে মণিপুরের অখণ্ডতার পূর্ব শর্তসাপেক্ষে ইস্তফা দেওয়ায় তাঁর প্রতি মেইতেইদের হারানো সহানুভূতি ফিরে এসেছে। এমনকি কংগ্রেসও পরিস্থিতি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করতে পারছে না, কারণ বীরেন শিবির সফল ভাবে এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে যে, গোটা বিষয়ে কেন্দ্রের ব্যর্থতা ঢাকতেই মেইতেইদের হয়ে লড়াই চালানো বীরেনকে বলির পাঁঠা করা হল। এ দিকে, বিজেপিতে বীরেন-বিরোধী শিবির কোনও সর্বসম্মত নেতা নির্বাচন করতে না পারায় জনতার সামনে প্রমাণিত হল, তাঁরা রাজ্যের নয়, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থেই বীরেনকে সরাতে চাইছিলেন। বীরেনের পদত্যাগের আগে দলের ভিতরে নেতৃত্ব বদলের দাবি এমন জোরালো হয়েছিল, যেন বীরেন সরলেই রাজ্যের সব সমস্যার সমাধানসূত্র বেরোবে। কিন্তু বাস্তবে
তা ঘটেনি।

রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে মেইতেইদের ক্ষুব্ধ করায় কেন্দ্রের প্রতি বিজেপির নেতা-বিধায়কদের মধ্যেও বাড়ছে অসন্তোষ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখন দেখাতে চাইছেন, বীরেন-বিরোধীদের মধ্যে মতানৈক্যের ফলেই মুখ্যমন্ত্রী বাছাই হয়নি। কিন্তু বিধায়কেরা দাবি করছেন, হাইকমান্ডই বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন বজায় রাখতে চাইছে। বীরেন-বিরোধী শিবিরের এক বিধায়ক বলেন, “আমরা নেতৃত্বকে বলে আসছি যে দলের অভ্যন্তরে এবং সমাজে ঐক্যমত্য তৈরির জন্য কে সবচেয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি, তা
নিজস্ব মূল্যায়নের ভিত্তিতে বেছে নিন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কিন্তু তা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করব। তার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী বাছাই না হলে ফের দিল্লি যাব।” সেনা সূত্রে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে খুব বেশি বলপ্রয়োগ না করে ‘‘সমাজকে নিরস্ত্র’’ করতে হবে। এই প্রক্রিয়া কমপক্ষে তিন মাস সময় নেবে। কিন্তু বিদ্রোহী বিধায়করা গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য এত দিন অপেক্ষা করতে রাজি নন। তাঁরা বলছেন রাষ্ট্রপতি শাসন দীর্ঘায়িত করলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। তাঁদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত ‘‘ফ্লাশ-আউট’’ অভিযানের সময়ে যদি বড় সংঘর্ষ বা প্রাণহানি ঘটে, তবে জনমত পুরোপুরি বিজেপির বিরুদ্ধে যাবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

N. Biren Singh Manipur President Rule

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy