Advertisement
E-Paper

‘তিন প্রজন্ম শেষ’, দাদার পরিবারকে ভূমিধসে হারিয়ে কান্না ভাইয়ের, হিমাচলের দিকে দিকে অসহায়তার ছবি

শিমলার সামার হিলের শিব মন্দিরের ভাঙা অংশের কাছে দাঁড়িয়ে এখনও অনেকে। কেউ বাবা-মাকে হারিয়েছেন, তো কেউ পুত্র-কন্যাকে। বর্ষার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হিমাচলের বিভিন্ন জায়গায় স্বজনহারাদের কান্নার রোল।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৮
Condition worsen due to heavy rain in Himachal Pradesh

বর্ষার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হিমাচলের বিভিন্ন এলাকা। —ফাইল চিত্র ।

গত সোমবার স্ত্রী, পুত্র, নাতি, নাতনিদের নিয়ে শিমলার সামার হিলের শিব বাওয়ারি মন্দিরে এসেছিলেন বৃদ্ধ পবন। মন্দিরে পুজো করার সময়ই ঘটে যায় সেই দুর্ঘটনা। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে মাটির নীচে ধসে যায় মন্দিরের একাংশ। পবনের পরিবারের তিন প্রজন্মও সেই ধ্বংসাবশেষের নীচে চাপা পড়ে। পুজো করতে এসে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তাঁদের। তার পর থেকে দুর্ঘটনাস্থলের কাছে ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছেন পবনের ভাই বিনোদ। দাদার পরিবারের পাঁচ সদস্যের দেহ উদ্ধার করা গেলেও এখনও দু’জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁরা যে এখনও বেঁচে আছেন, সেই আশা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর শুধু একটাই প্রার্থনা—যেন নিখোঁজ দু’জনের দেহও উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। দাদার পরিবারের সকলের শেষকৃত্য যেন ভাল ভাবে করতে পারেন তিনি। আর তাই ধ্বংসাবশেষ থেকে কোনও মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে খবর পেলেই দৌড়ে যাচ্ছেন বিনোদ। কখনও চোখে জল নিয়ে ফিরছেন। কখনও ফিরছেন নিরাশ হয়ে।

বিনোদ কাঁদতে কাঁদতে জানান, সোমবার মেঘভাঙা বৃষ্টিতে শিমলার ওই মন্দিরে ভূমিধসের কারণে তিন শিশু-সহ তাঁর দাদার পরিবারের সাত জন সদস্য ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েন। ‘এনডিটিভি’কে তিনি বলেন, ‘‘তিন শিশু-সহ আমার দাদার পরিবারের পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। উদ্ধারকারীরা বাকি দু’জনের দেহ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। আমি আমার দাদা এবং ওর পরিবারের শেষকৃত্য ভাল ভাবে করতে চাই।’’ পবনদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তাঁদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ভূমিধসের কারণে শিমলার বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। তাই দাদার মৃত্যুর খবর পেয়েও বাড়ি আসতে পারেননি পবনের ছোট বোন। ফোনে পবনের বোন বলেন, ‘‘এই যন্ত্রণা আমি সহ্য করতে পারছি না। এই যন্ত্রণা সারাজীবন থাকবে। আমাদের পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল। আমি দাদা এবং ওর পরিবারের সদস্যদের দেহ শেষ বারের মতো দেখতে চাই। দাদা আমাকেও মন্দিরে যেতে বলেছিল। কিন্তু আমি যায়নি। হয়তো আমার মৃত্যু এখনও নির্ধারিত ছিল না।’’

বিনোদের মতোই ওই মন্দিরের ভাঙা অংশের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্বজনহারা আরও অনেকে। কেউ বাবা-মাকে হারিয়েছেন, তো কেউ পুত্র-কন্যাকে। বর্ষার তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হিমাচলের বিভিন্ন জায়গায় এখন শুধু স্বজনহারাদের কান্নার রোল। বৃষ্টির জেরে হড়পা বান আর ধসের তাণ্ডব চলছে গোটা হিমাচল প্রদেশ জুড়ে। রাজধানী শিমলায় গত কয়েক দিনে মুহুর্মুহু ধস নেমেছে একাধিক জায়গায়। সেই ধসে চাপা পড়ে কেউ নিখোঁজ, কারও দেহ উদ্ধার হয়েছে। কেউ পরিজনদের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে শিউরে ওঠা ছবি ভেসে উঠেছে শিমলা-সহ হিমাচলের বেশির ভাগ অংশে। বর্ষার মরসুম শুরুর ভারী বর্ষণজনিত দুর্ঘটনায় হিমাচলে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিগত কয়েক দিনেই মৃত্যু হয়েছে ৭৪ জনের। হিমাচলের চারিদিকে এখন শুধুই হাহাকার, মৃত্যু যন্ত্রণা।

বিগত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হিমাচল প্রদেশের শিমলা, কাংড়া এবং মান্ডি জেলার বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত। একের পর এক ঘরবাড়ি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে। ভেসে গিয়েছে বহু গ্রাম, চাষের জমি। এমনকি, বদ্রীনাথ, কেদারনাথ যাওয়ার রাস্তাও ধসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সে রাজ্যের ৭০০-র বেশি রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জল এবং খাদ্যাভাব দেখা গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। বিপদের মুখে পড়েছে হিমাচলের জনজীবন।

রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সূত্রে খবর, হিমাচল প্রদেশের বহু জায়গায় পর্যটক এবং স্থানীয়েরা আটকে রয়েছেন। উদ্ধারকাজ চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর মোট ২৯টি দলকে মোতায়েন করা হয়েছে, যার মধ্যে ১৪টি দল ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বাকি ১৫টি দলও ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বায়ুসেনা এবং স্থানীয় প্রশাসনও সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। হেলিকপ্টার এবং মোটর বোটের মাধ্যমেও উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু।

সুখু জানিয়েছেন, বর্ষার তাণ্ডবে হিমাচলের যা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি। যা মেরামত করতে সময় লাগবে এক বছরেরও বেশি।

Rain in Himachal Pradesh himachal pradesh Disaster
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy