বুধবার থেকে পটনায় শুরু হল কংগ্রেসের কার্যকরী সমিতি (ওয়ার্কিং কমিটি)-র বর্ধিত বৈঠক। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী-সহ দলের প্রায় সমস্ত প্রথম সারির নেতাই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। তবে শারীরিক কারণে বিহারের রাজধানীতে যাননি সনিয়া গান্ধী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, বিহারে আসন্ন বিধানসভা ভোটের রণনীতি, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ-সহ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন এবং ‘ভোট চুরি’ নিয়ে কী ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের সুর চড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হবে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে।
গত মাসে রাহুলের ১৬ দিনের ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ ঘিরে বিহারে কিছুটা উজ্জীবিত হয়েছে কংগ্রেস। বুধবার খড়্গেদের স্বাগত জানাতে পটনা বিমানবন্দরেও ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। কংগ্রেস সূত্রের খবর, অতি অনগ্রসরদের (ইবিসি) অধিকারকেও ভোট চুরির সঙ্গে জুড়ে রাহুল কংগ্রেস কার্যকরী কমিটির বৈঠকের পরে পটনা থেকে ‘অতি পিছড়া ন্যায় সঙ্কল্প’ অভিযান শুরু করবেন। বুধবার স্বাধীনতা সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী বিহার প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর সদাগত আশ্রমে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে রাহুল বলেন, ‘‘নীতীশ কুমারের সরকার বিহারের অতি অনগ্রসরদের জন্য কিছুই করেনি। শুধু তাদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করেছে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা এলজেপি (রামবিলাস)-এর নেতা চিরাগ পাসোয়ান কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক উপলক্ষে বিহারের প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার উপস্থিতিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘উনি বিহারে এসেছেন। ওঁকে স্বাগত জানাই। আরও আগে আসা উচিত ছিল।’’
অন্য দিকে, ভোটমুখী বিহারের সীমাঞ্চল এলাকায় (উত্তরবঙ্গ লাগোয়া জেলাগুলি নিয়ে গঠিত) বুধবার থেকে ‘সীমাঞ্চল ন্যায় যাত্রা’ শুরু করেছেন মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম)-এর প্রধান তথা তেলঙ্গানার হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। তার আগে আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদকে চিঠি লিখে ওয়েইসি জানিয়েছেন, বিহারের বিধানসভা ভোটে ছ’টি আসনে লড়ার সুযোগ পেলে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ (বিহারে যে জোটের পোশাকি নাম ‘মহাগঠবন্ধন’)-য় যোগ দিতে তিনি প্রস্তুত।
আরও পড়ুন:
২০২০ সালের বিহার বিধানসভা ভোটে মায়াবতীর বিএসপি এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহারা রাষ্ট্রীয় লোকসমতা পার্টি (আরএলএসপি)-র সঙ্গে সমঝোতা করে ওয়েইসির দল ২০টি আসনে লড়ে পাঁচটি দখল করেছিল। সবগুলিই পশ্চিমবঙ্গের গা-ঘেঁষা সীমাঞ্চল এলাকার কিষাণগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রে। আরও অনেক বেশি আসনে এমআইএম ‘মহাগঠবন্ধন’-এর মুসলিম ভোটে ভাগ বসানোয় বিজেপির সুবিধা হয়ে গিয়েছিল। ওই আসনগুলিতে সামগ্রিক ভাবে ‘মিম’ প্রার্থীরা ১৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে মিমের পাঁচ বিধায়কের চার জনই লালুর দল আরজেডিতে যোগ দিয়েছেন। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কিষাণগঞ্জে মিম প্রার্থী আখতারউল তৃতীয় হয়েছিলেন। কিন্তু পেয়েছিলেন তিন লক্ষেরও বেশি ভোট (প্রায় ২৭ শতাংশ)। কিষাণগঞ্জের পাশাপাশি সীমাঞ্চল এলাকায় পূর্ণিয়া, কাটিহারের মতো জেলাতেও ওয়েইসির দলের ভাল প্রভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আলাদা লড়লে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত দু’ডজনের বেশি আসনে তারা মহাগঠবন্ধন প্রার্থীদের জয়ের পথে ‘কাঁটা’ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। সে ক্ষেত্রে লাভবান হতে পারে ক্ষমতাসীন জেডিইউ-বিজেপি জোট।