পহেলগামে জঙ্গি হামলার জবাবে পাকিস্তানকে প্রত্যাঘাতের প্রশ্নে কংগ্রেস মোদী সরকারের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল। কিন্তু দশ দিন কেটে যাওয়ার পরেও কেন্দ্র প্রত্যাঘাত বা হামলায় জড়িত সন্ত্রাসবাদীদের সন্ধান না পাওয়ায় আজ কংগ্রেস মোদী সরকারের ‘পারদর্শিতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলল। মোদী সরকারকে নিশানা করে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের অভিযোগ, পহেলগামের ঘটনার অনেক দিন পরেও সরকারের তরফ থেকে কোনও স্পষ্ট রণনীতি দেখা যায়নি।
আজ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে পাকিস্তানকে পহেলগামের জবাব নিয়ে মোদী সরকারের উপরে চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কংগ্রেস নেতা চরণজিৎ সিংহ চন্নী এক কদম এগিয়ে বলেছেন, ‘‘উরির হামলার জবাবে সার্জিকাল স্ট্রাইকের এখনও কোনও প্রমাণ মেলেনি। পুলওয়ামার জবাবে বালাকোটে বায়ুসেনা বোমা ফেলেছিল বলে যে দাবি, তা-ও কেউ জানতে পারেনি। আমাদের দেশে বোমা পড়লে আমরা কি জানতে পারতাম না?” কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বঘেল নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন
তুলেছেন, ‘‘হামলায় ২৮ জনের প্রাণহানির দায় কে নেবেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? প্রতিরক্ষামন্ত্রী? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কি এই ঘটনার পরে ইস্তফা দেওয়া উচিত ছিল না?”
পহেলগামের ঘটনার প্রত্যাঘাত কবে হবে, দেশ জুড়ে সেই নিয়ে প্রশ্নের মুখে আচমকা মোদী সরকারের জাতগণনার সিদ্ধান্ত নিয়েও কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, পহেলগামের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং তার পরে প্রত্যাঘাত করতে দেরি হওয়া থেকে নজর ঘোরাতেই কি আচমকা জাতগণনার সিদ্ধান্ত? গত ১১ বছর ধরে বিজেপি যে জাতগণনার বিরোধিতা করে আসছে? কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের গোড়াতেই দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘এত দিন বিরোধিতা করার পরে জাতগণনার সিদ্ধান্তের জন্য এই সময়কে বেছে নেওয়ায় আমরা আশ্চর্য হয়েছি। এ নিয়ে অনেক সন্দেহ আমাদের মনে তৈরি হয়েছে।’’
ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে রাহুল গান্ধী বলেন, জাতগণনা প্রথম ধাপ। তফসিলি জাতি, জনজাতির সঙ্গে ওবিসি-দের সংখ্যা গণনা করলেই হবে না। দলিত, আদিবাসী, অনগ্রসরদের চাকরি, রোজগার, শিক্ষা, সামাজিক অবস্থানের কথা জানতে জাতগণনার সময় সঠিক প্রশ্ন করতে হবে। রাহুল গান্ধীর জাতগণনার দাবিই মোদী সরকার মেনে নিয়েছে বলে বৈঠকে কংগ্রেস নেতারা তাঁকে অভিনন্দন জানান। কংগ্রেসের দাবি, তেলঙ্গানায় কংগ্রেস সরকার জাতগণনার সময় ৫৬টি প্রশ্ন নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতগণনার কাজ শেষ করে জনসংখ্যায় ভাগ অনুযায়ী তফসিলি জাতি, জনজাতি, ওবিসিদের সংরক্ষণ দিতে হবে। তার জন্য সংরক্ষণে ৫০ শতাংশের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সংরক্ষণ চালু করতে হবে।
কংগ্রেস নেতা সচিন পাইলট বলেন, ‘‘জাতগণনাকে এত দিন বিজেপি ভোটের বিভাজন বলে দাবি করছিল। বিজেপির এক বড় নেতা (যোগী আদিত্যনাথ) বলেছিলেন, বাঁটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়। জাতগণনাকে শহুরে নকশালদের ভাবনা বলেছিলেন তিনি।’’ ভূপেশ বঘেল বলেন, ‘‘নিতিন গডকড়ী বলেছিলেন, জাতের কথা বললে লাথি খেতে হবে। এখন সেই বিজেপিই জাতগণনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাক পেটাচ্ছে। রং বদলানোর প্রতিযোগিতায় বিজেপি গিরগিটিকেও লজ্জায় ফেলে দেবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)