পাকিস্তানকে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরুর আগে আগাম খবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত কে নিয়েছিলেন? এই গোপন খবর ফাঁস হওয়ার ফলে ভারতীয় বায়ুসেনাকে কতগুলি যুদ্ধবিমান হারাতে হয়েছে? আগাম খবর পেয়েই কি জইশ-ই-মহম্মদের ঘাঁটি থেকে মাসুদ আজহার সরে পড়েছিল? রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে গোটা কংগ্রেস আজ ফের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে প্রশ্নের তিরনিক্ষেপ করল।
গত বৃহস্পতিবার বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “অপারেশন সিঁদুর শুরুর আগে আমরা পাকিস্তানে বার্তা পাঠিয়েছিলাম যে, আমরা সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে আঘাত করতে চলেছি। আমরা কোনও সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত করছি না। ফলে পাকিস্তানের সামনে বিকল্প রয়েছে, তারা দূরে থেকে এর মধ্যে হস্তক্ষেপ না-ও করতে পারে। ওঁরা এই সুপরামর্শ শোনেননি।”
এর পরেই রাহুল গান্ধী একে ‘অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কে এর অনুমতি দিয়েছিল? এর ফলে ভারতকে কতগুলি যুদ্ধবিমান হারাতে হয়েছে? বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছিল, রাহুল গান্ধী বিদেশমন্ত্রীর কথা বিকৃত করছেন। বিদেশমন্ত্রী বলেছিলেন, অপারেশন সিঁদুর শুরুর পরে গোড়ার দিকে পাকিস্তানকে সতর্ক করা হয়েছিল। বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর অবশ্য এ নিয়ে মুখ খোলেননি।
আজ লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল ফের অভিযোগ তুলেছেন, “বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের নীরবতা শুধু অর্থপূর্ণ নয়, নিন্দাজনকও। আমি আবার প্রশ্ন করছি, পাকিস্তান আগেভাগে সামরিক অভিযানে কথা জানত বলে আমাদের কতগুলি যুদ্ধবিমান হারাতে হয়েছে? এটা কোনও খামতি নয়। এটা অপরাধ। গোটা দেশ সত্যটা জানতে চায়।” কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদী সরকার কী ভাবে পাকিস্তানকে এতখানি ভরসা করল যে পাকিস্তান ভারতের হানার খবর সন্ত্রাসবাদীদের জানিয়ে দেবে না?
এ নিয়ে আজ বিদেশ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রশ্ন তুলেছেন কংগ্রেস সাংসদরা। জবাবে বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রী জবাবে বলেছেন, হামলার আগে নয়। হামলার পরে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল। পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলার জবাবে গত ৭ মে গভীর রাতে সামরিক বাহিনী পাকিস্তানের ন’টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছিল। তার জবাবে পাকিস্তানের সেনা ভারতের উপরে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালে ভারতও পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা বলার চেষ্টা করছেন, জয়শঙ্করের কথার ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। জয়শঙ্কর সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে হামলার পরে পাকিস্তানকে সেই তথ্য জানানোর কথা বলেছিলেন।
মোদী সরকারের মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর যুক্তি, “সেনার ডিজিএমও নিজেই ১১ মে বলেছিলেন, তাঁর স্তরে পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হয়েছিল। বায়ুসেনা, বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, আমাদের কোনও যুদ্ধাস্ত্রের লোকসান হয়নি। কংগ্রেস কি দেশের পক্ষে?” কংগ্রেসের মুখপাত্র পবন খেরা পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেছেন, “বিদেশমন্ত্রী নিজে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, হামলার আগে পাকিস্তানকে জানানো হয়েছিল। বিদেশমন্ত্রীর কি পাকিস্তানের উপর এতই ভরসা? হামলার খবর আগে পেয়েও সন্ত্রাসবাদীরা ঘাঁটিতে বসে থাকবে? এই গোপন তথ্য ফাঁস করে কি মাসুদ আজহারকে আবার বাঁচানো হল? মাসুদ আজহারকে এর আগে কন্দহর বিমান ছিনতাইয়ের পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী, বিদেশমন্ত্রীকে এর জবাব দিতে হবে।” পবন অতীতের উদাহরণ টেনে আরও দাবি করেন, মোরারজি দেশাই প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর রিপোর্টের কথা জেনারেল জিয়াউল হককে জানিয়ে দিয়েছিলেন। তার ফলে ‘র’-এর বহু গুপ্তচর হারাতে হয়েছিল। তবে মোরারজিকে ইসলামাবাদ ‘নিশান-এ-পাকিস্তান’ সম্মান দিয়েছিল। জয়শঙ্করও সেই শ্রেণিতে পড়ছেন।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)