ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পর থেকেই ভারতের অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া বরাবরই থেকেছে সাবধানী ও সতর্ক। একই সঙ্গে ভারসাম্য রাখার চেষ্টায় রত। কখনও সন্ত্রাসবাদের নিন্দা, কখনও ইজ়রায়েলের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখার দায়, আবার কখনও প্যালেস্টাইনের প্রতি সহমর্মিতা।
তবে গাজ়া যুদ্ধবিরতি নিয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ প্রস্তাবকে একাধিকবার স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফোনেও তিনি সাধুবাদ জানিয়েছেন ট্রাম্পকে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত বন্ধ হওয়া ভারতের কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভারতের এই অবস্থান চিনের ঠিক বিপরীত। চিন ট্রাম্পের কুড়ি দফা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সাউথ ব্লক সূত্রের খবর, ভারত চেষ্টা করছে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ভারতের অবস্থানকে খাপ খাওয়াতে। প্যালেস্টাইন সঙ্কট সমাধানে নয়াদিল্লির দ্বিরাষ্ট্রীয় নীতি হল, দু’পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছনো, যেখানে নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে স্বাধীন সার্বভৌম কার্যকর প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র তৈরি করা হবে, যেখানে ইজ়রায়েলের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস সম্ভব হবে।
তবে বিষয়টি নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে মোদী সরকারকে। ইজ়রায়েল ও হামাসের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি চুক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাগত জানালেও, কেন তিনি সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র নিয়ে চুপ, তা নিয়ে কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কী ভাবে গাজ়ার নরসংহারের পরে ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বিনা শর্তে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন, তা নিয়েও কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে। বৃহস্পতিবার ইজ়রায়েল ও হামাস শান্তিচুক্তিতে সম্মত হওয়ার পরে প্রধানমন্ত্রী তাকে স্বাগত জানান। নেতানিয়াহুর ‘শক্তিশালী নেতৃত্ব’-র প্রশংসা করেন। কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর এই উৎসাহ আশ্চর্যজনক নয়। কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো, লজ্জাজনক ও নৈতিক দিক থেকে আপত্তিজনক হল, নেতানিয়াহুর বিনা শর্তে প্রশংসা, যিনি গত কুড়ি মাস ধরে গাজ়ায় নরসংহার চালাচ্ছেন।’’ রমেশ বলেন, মোদী স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও নীরব। ভারত ১৯৮৮ সালের নভেম্বরে প্যালেস্টাইনকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আজ দেড়শোর বেশি দেশ সেই স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ইজ়রায়েলের দখলদারি নিয়েও নীরব।
কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্রের কটাক্ষ, নরেন্দ্র মোদী যখন ট্রাম্পের প্রশংসা, ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলায় ব্যস্ত, তখন ট্রাম্প ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে বাণিজ্য ও শুল্ককে নিজের ব্রহ্মাস্ত্র বলে দাবি করেছেন। তা দিয়ে ‘অপারেশন সিঁদুর’ আটকে দিয়েছেন বলে ফের দাবি করেছেন। এই নিয়ে পঞ্চাশ বার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিজের এই দাবিতে অনড়। খুব শীঘ্রই সেঞ্চুরি করবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)