Advertisement
E-Paper

আগেই হেরে বসে ছিল কংগ্রেস, বলছেন কর্মীরা

মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার নির্বাচনেও রক্তক্ষরণ অব্যাহত! এক টানা ১৫ বছর ধরে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস, হরিয়ানায় ১০ বছর। অথচ দুই রাজ্যেই বিজেপির এক তৃতীয়াংশ শক্তিতে পৌঁছে গেল তথাকথিত এই জাতীয় দল! দুই রাজ্যেই তৃতীয় স্থান যদিও বা পেল, মহারাষ্ট্রের বিধানসভায় ছোট শরিক এনসিপি-র সঙ্গে কার্যত আর ফারাক রইল না কংগ্রেসের! হারের মুখ দেখতে হল মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রানে-সহ কংগ্রেসের তাবড় নেতাদেরও!

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৮

মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার নির্বাচনেও রক্তক্ষরণ অব্যাহত! এক টানা ১৫ বছর ধরে মহারাষ্ট্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস, হরিয়ানায় ১০ বছর। অথচ দুই রাজ্যেই বিজেপির এক তৃতীয়াংশ শক্তিতে পৌঁছে গেল তথাকথিত এই জাতীয় দল! দুই রাজ্যেই তৃতীয় স্থান যদিও বা পেল, মহারাষ্ট্রের বিধানসভায় ছোট শরিক এনসিপি-র সঙ্গে কার্যত আর ফারাক রইল না কংগ্রেসের! হারের মুখ দেখতে হল মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রানে-সহ কংগ্রেসের তাবড় নেতাদেরও!

কিন্তু কেন?

লোকসভার ভোট ফলাফল এমনিতেই মাজা ভেঙে দিয়েছিল কংগ্রেসের। তার ওপর কংগ্রেস যেন এ বার আগে থেকে ধরেই নিয়েছিল যে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় হার অবধারিত। কারণ, প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতা! মানুষ বদল চেয়েছেন। পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ, ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা, রাহুল গাঁধীরা অন্তত এই যুক্তির আড়ালেই আজ মুখ লুকোতে চেয়েছেন! কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের মতে, সরকার-বিরোধিতার মূল বিষয় ছিল দুর্নীতি। এই এক কারণে দু’রাজ্যেই ভাবমূর্তি মলিন হয়েছিল কংগ্রেসের। আদর্শ আবাসন কেলেঙ্কারির জন্য মহারাষ্ট্রে যেমন মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে হয়েছে, তেমনই বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ ছিল শরিক এনসিপি-র মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ বলেছিলেন, আদর্শ কেলেঙ্কারি নিয়ে তিনি তদন্তের পথে এগোননি। কারণ তা হলে দলের প্রায় অর্ধেক নেতার নামই তাতে জড়িয়ে যেতে পারত। আবার হরিয়ানায় জমি কেলেঙ্কারির কালি লেগেছিল মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডার মুখে।

যদিও প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার এই চেনা যুক্তি কংগ্রেসেরই সবাই গিলতে পারছেন না। বরং ২৪ নম্বর আকবর রোডে আজ সকাল থেকে দলের একাধিক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় বা গুজরাতে তো কই প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতায় ভুগতে হয়নি বিজেপিকে! বেছে বেছে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে কেন এটা হচ্ছে! তা ছাড়া মহারাষ্ট্র-হরিয়ানায় গত দেড় দশকে উন্নয়নও কম হয়নি। শিল্পে লগ্নি থেকে শুরু করে মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচকে মোদীর গুজরাতের থেকে কমতি যাচ্ছে না এই দুই রাজ্য! আর দুর্নীতির মহামারী থেকে তো বিজেপি শাসিত রাজ্যও বাদ পড়েনি।

তা হলে ভুলটা কোথায় হল! কিছু কংগ্রেস নেতার সাফ কথা খামতি রয়েছে নেতৃত্বে! জাতীয় নেতৃত্বের অযোগ্যতা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে রাজ্যস্তরেও দুর্বল হয়েছে নেতৃত্ব। তা ছাড়া উভয় রাজ্যেই গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার দল। তার ওপর রাহুল গাঁধী ও তাঁর টিম এখনও বুঝতে পারছেন না, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নির্বাচনটা কী ভাবে লড়তে হয়! কংগ্রেসের এক প্রৌঢ় নেতার কথায়, নরেন্দ্র মোদী যখন অমিত শাহর মতো ‘কুটিল ও পোড় খাওয়া’ নেতাকে দিয়ে ভোট করাচ্ছেন, তখন রাহুল খুঁজে বার করছেন মোহন প্রকাশের মতো আনকোরা এক নেতাকে, যাঁর কাজকর্মে দলের কর্মীরাই হাসাহাসি করেন।

তবে মহারাষ্ট্রের পরাজয়ই আজ বেশি ভাবাচ্ছে কংগ্রেসকে। এক সময়ে কংগ্রেসের পত্তন হয়েছিল এই মরাঠা মুলুকেই। মাঝে দুই মেয়াদ ছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে বরাবর কংগ্রেসি রাজ্য বলে পরিচিত ছিল মহারাষ্ট্র। রাজ্য নেতারা তো বটেই, কংগ্রেসের জেলা নেতারাও এক-এক জন ছিলেন এক-এক জন সামন্ত প্রভুর মতো। সমবায়, সরকারি দফতর, বেসরকারি শিল্প সর্বত্র তাঁরা কত মানুষকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। অথচ সেই মহারাষ্ট্রেই কংগ্রেসের আজ এই দীর্ণ দশা নেতৃত্বের ঘুম কেড়ে নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

কংগ্রেস নেতাদের মতে, বিলাস রাও দেশমুখের মৃত্যুর পর থেকেই মহারাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই শূন্যতা তৈরি হয়েছে। পৃথ্বীরাজের ভাবমূর্তি স্বচ্ছ হলেও মরাঠা রাজনীতির মারপ্যাঁচ ছিল তাঁর হাতের বাইরে। এমনকী দলেও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বিশেষ ছিল না। ভোটের দু’মাস আগে পর্যন্ত তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরাতে সনিয়ার দরবারে হত্যে দিয়েছিলেন রাজ্য নেতারা। আবার দশ বছর ক্ষমতায় থেকে হরিয়ানায় হুডার ‘দর্প’ ছিল সবারই বিরক্তির বিষয়। তাঁর সঙ্গে মনোমালিন্যে একের পর এক নেতা দল ছেড়েছেন।

কর্মীদের অভিযোগ, সবার ওপর রাহুল গাঁধীর ভূমিকা ছিল অতিথি শিল্পীর। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেও নরেন্দ্র মোদী মহারাষ্ট্রে যখন ২৭টি জনসভা করেছেন, তখন রাহুল সেখানে চার বার দেখা দিয়ে গিয়েছেন মাত্র। আর দিল্লির গা-ঘেঁষা হরিয়ানায় প্রচার করেছেন তিন দিন।

অতীতের সব বিপর্যয়ের মতোই রাহুলকে আড়ালের চেষ্টা হয়েছে আজও। পৃথ্বীরাজ ও হুডা উভয়েই পরাজয়ের দায় স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে পৃথ্বীরাজের বক্তব্য, লোকসভার ফলাফল থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে কংগ্রেসের। লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে মাত্র ১৬টি বিধানসভা আসনে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস। কিন্তু বিধানসভা ভোটে তারা পেয়েছে ৪২টি আসন।

অন্য দিকে, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতো কংগ্রেসের জাতীয় স্তরের নেতাদের কথায়, এনসিপি-র সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়াই মহারাষ্ট্রে ভরাডুবির কারণ। কংগ্রেস-এনসিপি মিলে আশিটির বেশি আসন পেয়েছে। তার মানে জোট অটুট থাকলে আরও অন্তত তিরিশ শতাংশ আসন বেশি পেতে পারত কংগ্রেস ও এনসিপি। স্বাভাবিক ভাবেই জোট ভাঙার দায় শরদ পওয়ারের ওপরেই চাপাচ্ছে কংগ্রেস। কংগ্রেস নেতা বি কে হরিপ্রসাদ বলেন, “মহারাষ্ট্রে সরকার গড়তে এনসিপি বাইরে থেকে বিজেপিকে সমর্থনের যে ঘোষণা আজ করেছে, এতেই পওয়ারের খেলা ধরা পড়ছে। তিনি যে জোট ভাঙবেন তা আগেই মোদীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন পওয়ার। সেই আশ্বাস পেয়েই শিবসেনার সঙ্গে জোট ভাঙার ঝুঁকি নেন মোদী।”

তবে মোদ্দা বিষয় হল, কংগ্রেসে এখন ভরা দুর্যোগ। আশির দশকে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা হারিয়েছে কংগ্রেস। তার পর থেকে তিন দশকের বেশি সময় কেটে গেলেও সে রাজ্যে আর ক্ষমতায় ফেরেনি তারা। তার পর এক এক করে বিহার, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে গদি হারিয়েছে দল। রাহুল গাঁধী নেতৃত্বে আসার পর অন্ধ্রপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের মতো কংগ্রেসের চিরাচরিত দুর্গও এখন হাতছাড়া হয়ে গেল। প্রশ্ন হল, ভবিষ্যতে আদৌ কি সেখানে ক্ষমতায় ফিরতে পারবে কংগ্রেস?

সত্যি কথা বলতে কি, কংগ্রেস সদর দফতরে দাঁড়িয়ে আজ সেই প্রত্যয় দেখাতে পারেননি কোনও নেতাই।

sankhadeep das assembly election congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy