E-Paper

ইউএসএড: বাগ্‌যুদ্ধ কংগ্রেস-বিজেপির

বিজেপি দাবি তুলেছে, ট্রাম্পের মন্তব্যে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, কেন রাহুল গান্ধী ভোটে জিততে না পেরে বিদেশি সাহায্য চাইছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩২
কংগ্রেস বনাম বিজেপির মধ্যে নতুন করে বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

কংগ্রেস বনাম বিজেপির মধ্যে নতুন করে বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হয়েছে। —প্রতীকী চিত্র।

জো বাইডেনের আমলে আমেরিকা কি ভারতের নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছিল?

নতুন করে এই প্রশ্ন তুলে দিয়ে এ বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মন্তব্য করলেন, ‘‘আমার আন্দাজ, ওরা (বাইডেন প্রশাসন) অন্য কাউকে নির্বাচিত করার চেষ্টা করছিল।’’ তাঁর প্রশ্ন, জো বাইডেনের আমলে আমেরিকার ইউএসএড সংস্থা কেন ভারতে ভোটের হার বাড়াতে ২.১০ কোটি ডলার খরচ করেছিল!

ট্রাম্পের এই মন্তব্য নিয়ে বিজেপি বনাম কংগ্রেসের মধ্যে নতুন করে বাগ্‌যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বিজেপি দাবি তুলেছে, ট্রাম্পের মন্তব্যে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে, কেন রাহুল গান্ধী ভোটে জিততে না পেরে বিদেশি সাহায্য চাইছিলেন। বিজেপি সূত্র মনে করিয়ে দিচ্ছে, বাইডেন-জমানায় ভারতের মানবাধিকার ও বাক্‌স্বাধীনতার লঙ্ঘন, সংখ্যালঘুদের অবস্থা, গণতন্ত্রের মতো বিষয়গুলি নিয়ে বারবার নয়াদিল্লিকে বিঁধেছে ওয়াশিংটন।

অন্য দিকে কংগ্রেস দাবি তুলেছে, ইউএসএডের ভারতে কাজকারবার নিয়ে মোদী সরকার সংসদে শ্বেতপত্র পেশ করুক। ‘ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ বা ইউএসএড আমেরিকা সরকারেরই একটি স্বাধীন সংস্থা, যারা বিভিন্ন দেশকে উন্নয়নে সাহায্য করে। ইউপিএ জমানায় ইউএসএড একাধিক অসরকারি সংস্থাকে আর্থিক মদত করেছে। নরেন্দ্র মোদী জমানাতেও ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে একাধিকবার ইউএসএডের উল্লেখ রয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর থেকে পীযূষ গয়াল, স্মৃতি ইরানিদের ইউএসএডের সঙ্গে যোগাযোগ মিলেছে।

ট্রাম্প নতুন করে ক্ষমতায় আসার পরে বিভিন্ন দেশে ইউএসএডের পক্ষ থেকে দেওয়া আর্থিক অনুদান বন্ধ করে দেন। ইলন মাস্কের নেতৃত্বে তৈরি ডিওজিই (ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি) জানায়, ইউএসএড ভারতে ভোটের হার বাড়ানোর ডন্য ২.১০ কোটি ডলার ঢেলেছিল। ট্রাম্প বুধবার এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার পরে বৃহস্পতিবার মায়ামিতে ফের এ নিয়ে মুখ খুলেছেন।

বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে এ নিয়ে সংসদে আগেই হইচই করেছিলেন। আজ বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ থেকে অমিত মালব্য বলেন, রাহুল গান্ধী লোকসভা ভোটের আগে ব্রিটেনে গিয়ে আমেরিকা ও ইউরোপকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অনুরোধ করেছিলেন। ভারতের নির্বাচনে যে সত্যিই প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হয়েছিল, মোদী বাদে অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসানোর চেষ্টা হয়েছিল, তাতে ট্রাম্প সিলমোহর দিয়েছেন।

কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র জয়রাম রমেশ ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘অর্থহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়ে দাবি তুলেছেন, এ নিয়ে সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক মোদী সরকার। ১৯৬১ সালে তৈরি হওয়া ইউএসএড গত কয়েক দশক ধরে ইউএসএড কোন কোন সরকারি, অসরকারি সংস্থাকে সাহায্য করেছে, তা খোলসা করুক সরকার। ন্যাশনাল কনফারেন্স-সহ একাধিক বিজেপি-বিরোধী দলও এই দাবি তুলেছে।

কংগ্রেসের যুক্তি, স্মৃতি ইউএসএডের স্বাস্থ্য প্রকল্পের দূত হিসেবে কাজ করেছেন। জয়শঙ্কর ইউএসএডের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইউএসএড মোদী সরকারের স্বচ্ছ ভারত অভিযান থেকে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর উদ্যোগে কাজ করেছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কিছু দিন আগে পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদী বিভিন্ন সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতিতে ইউএসএড থেকে প্রাপ্ত অনুদানকে স্বাগত জানিয়েছেন। গত বছর ৫ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ইউএসএডের সঙ্গে রেলের দূষণ নিয়ন্ত্রণের চুক্তিতে অনুমোদন দিয়েছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদীর প্রথম আমেরিকা সফরে ইউএসএডের মাধ্যমে শহরের জল নিকাশি ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নতুন অংশীদারির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল যৌথ বিবৃতিতে। তার পরের বছর, ২০১৫ সালের জুনে, মোদী-ওবামা যৌথ বিবৃতিতে ভারতের শক্তি মন্ত্রককে ইউএসএডের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে ইউএসএড-এর সাহায্যপ্রাপ্ত একটি স্কুলে গিয়েছিলেন। সে জন্য ইউএসএড সমাজমাধ্যমে মোদীকে ধন্যবাদও জানিয়েছিল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump USD

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy