গোড়া থেকেই নয়াদিল্লি স্টেশনে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল রেলের বিরুদ্ধে। এ বার সমাজমাধ্যম এক্সে ওই দুর্ঘটনার যে তিনশোর কাছাকাছি ভিডিয়ো রয়েছে, নরেন্দ্র মোদী সরকার তা-ও মুছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলল বিরোধীরা। এই প্রসঙ্গে ঘরোয়া ভাবে রেল মন্ত্রকের দাবি, নৈতিক কারণেই
ওই ভিডিয়োগুলি মুছে ফেলতে বলা হয়েছে।
গত শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে কুম্ভমুখী ভিড় লাগামছাড়া হওয়ার কারণে পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। মারা যান ১৮ জন। বিরোধীদের অভিযোগ, সমাজমাধ্যমে প্রত্যক্ষদর্শীদের পোস্ট করা ভিডিয়ো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় এবং সে রাতে দিল্লির উপরাজ্যপাল মৃতদের সমাবেদনা জানিয়ে সমাজমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে ফেলায় শেষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারেনি রেল। বিপর্যয়ের প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পরে যাত্রীদের স্টেশনে পদপিষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করে বিবৃতি দেয় অশ্বিনী বৈষ্ণবের রেল মন্ত্রক।
বিরোধীদের অভিযোগ, ওই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের আপলোড করা যে ২৮৫টি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যম এক্সে রয়েছে, তা মুছে ফেলার জন্য এ বার এক্স কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে রেল মন্ত্রক। ঘটনাচক্রে, অশ্বিনীই ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের কথায়, ‘‘ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পরে ওই ভিডিয়ো মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া যথেষ্ট সন্দেহজনক। ঘটনার রাতে পদপিষ্ট হয়ে আরও অনেক মানুষের মৃত্যুকে চাপা দিতেই সম্ভবত ওই ভিডিয়োগুলি মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও ঘরোয়া ভাবে রেলের যুক্তি, নৈতিক কারণেই ওই ভিডিয়োগুলি মুছে ফেলতে বলা হয়েছে। রেল জানিয়েছে, কুম্ভের জন্য যখন এখনও বিভিন্ন স্টেশনে পুণ্যার্থীদের ভিড় হচ্ছে, তখন এই ধরনের ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে থেকে গেলে অহেতুক বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তা ছাড়া প্রতিটি স্টেশনের যে ‘কনটেন্ট নীতি’ রয়েছে, এটি তারও পরিপন্থী।
ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ গত রবিবার সন্ধ্যায় রেল বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, মৃত ব্যক্তি-পিছু ১০ লক্ষ টাকা করে অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১.৮০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুতর আহত ও আহতদেরও ক্ষতিপূরণ দিয়েছে রেল মন্ত্রক। এ ক্ষেত্রে রেল কেন নগদে প্রায় দু’কোটি টাকা মৃত ও আহতদের পরিবারের হাতে তুলে দিল, কেন তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানো হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার আর এক সাংসদ সাকেত গোখলে। এ নিয়ে রেলের ব্যাখ্যা, রেল দুর্ঘটনায় মৃত বা আহতদের নগদে অর্থ দেওয়াই রীতি। কারণ অতীতে দেখা গিয়েছে, আহত ও মৃতদের অনেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকে না। ফলে তাঁদের ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে সমস্যা হয়। সেই কারণে মৃত বা আহতদের পরিবারের সদস্যদের চিহ্নিত করার পরে তাঁদের হাতে মূলত নগদেই অর্থ তুলে দেওয়া হয়। তবে ইচ্ছুক ব্যক্তি চাইলে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোরও ব্যবস্থা থাকে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)