গত বছর শীতকালীন অধিবেশনে উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন জগদীপ ধনখড়ের বিরুদ্ধে বিরোধীরা এককাট্টা হয়ে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন। নামের বানানে ভুলের যুক্তি দিয়ে সেই প্রস্তাব খারিজ করা হয়। ঠিক ছিল, বাজেট অধিবেশনে ফের অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। কিন্তু তখন উপরাষ্ট্রপতি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ায় বিরোধীরা মানবিক কারণে অনাস্থা প্রস্তাব আনেননি। বিরোধী শিবির সূত্রের খবর, জুলাই থেকে শুরু বাদল অধিবেশনে উপরাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে আর অনাস্থা প্রস্তাব আনার পরিকল্পনা নেই। যদি না, সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ বাদ দেওয়ায় দাবি ধনখড় তোলার পরে নতুন করে ভাবনাচিন্তা হয়!
আরএসএস ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সহ বিজেপি নেতারা দাবি তুলেছেন, জরুরি অবস্থার সময়েই সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ যোগ করা হয়েছিল। তাই সেগুলো বাদ দেওয়া উচিত। একই সুরে ধনখড়ও দাবি তুলেছেন, ওই দু’টি শব্দ ঢুকিয়ে সংবিধানের প্রস্তাবনাকে অপবিত্র করা হয়েছে। বিরোধী শিবির সূত্রের খবর, এত দিন কংগ্রেস ও অন্য বিরোধী দলের বেশ কিছু নেতার মত ছিল— রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন হিসেবে ধনখড় আগে যে রকম কাজকর্ম করতেন, নিরপেক্ষতা বজায় রাখতেন না, বিরোধীদের সম্পর্কে কঠোর অবস্থান প্রস্তাব নিতেন, অনাস্থা প্রস্তাবের পরে তিনি সুর নরম করে ফেলেছেন। ফলে আর অনাস্থা প্রস্তাবের প্রয়োজন নেই। তৃণমূল শিবিরের অবস্থান ছিল, তাঁরা এখন বিধানসভা নির্বাচন ও নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের মোকাবিলা নিয়ে ব্যস্ত। উপরাষ্ট্রপতিকে নিশানা করে তাঁরা শক্তিক্ষয় করতে চান না।
শনিবার উপরাষ্ট্রপতি ফের আরএসএসের সরকার্যবাহ দত্তাত্রেয় হোসবলের সুরে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ নিয়ে আপত্তি তোলায় বিরোধী শিবিরের একাংশ নতুন করে ক্ষুব্ধ। তাঁদের মতে, উপরাষ্ট্রপতির পদে বসে এই ধরনের রাজনৈতিক বিতর্কে নাক গলানো মানায় না। কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সৈয়দ নাসির হুসেন বলেন, “এই প্রথম দেখছি সাংবিধানিক পদে বসে কেউ রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু করছেন অথবা সরাসরি রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে ঢুকে পড়ছেন। শাসক ও বিরোধী দলের বাগবিতণ্ডায় ঢুকে পড়া সাংবিধানিক পদে আসীন ব্যক্তির পক্ষে সমীচীন নয়।” আরজেডি-র রাজ্যসভা সাংসদ মনোজ ঝা-র প্রশ্ন, “ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দ প্রস্তাবনায় ঢোকানো নিয়ে আপত্তি? না কি ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়েই আপত্তি? সংবিধানের ১৪ ও ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলা হয়েছে। সংবিধান পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য রাষ্ট্র ও ধর্ম আলাদা রাখার পক্ষে ছিলেন। ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে আপত্তি থাকলে সরাসরি বলছেন না কেন?”
তৃণমূল নেতাদের একাংশও মনে করছেন, জরুরি অবস্থার সময় সংবিধানের প্রস্তাবনার পরিবর্তন করা হয়নি, সংশোধন করে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘সমাজতান্ত্রিক’ শব্দ ঢোকানো হয়েছিল। জরুরি অবস্থার পরে জনতা পার্টির সরকার ক্ষমতায় এসে ওই দুই শব্দ বাদ দেয়নি। সুপ্রিম কোর্টও ওই দুই শব্দে সিলমোহর দিয়ে এসেছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)