এ এক মহাসঙ্কট।
বাড়িটায় এখন যাঁর থাকার কথা, তিনি আদপে থাকেন না। থাকেন তিনি, আগে যিনি সরকারি বাসিন্দা ছিলেন এই বাড়ির। উত্তরসূরি (যিনি আবার পূর্বসূরিও) তাঁকে উৎখাত করেননি। যদিও অফিস করতে উত্তরসূরি এই বাড়িতে আসেন। আবার চলেও যান।
তবু গোল বেধেছে। অভিযোগ, বাড়ি-ছাড়া না করলেও উত্তরসূরি নাকি অন্য দিকে বড্ড নাজেহাল করছেন পূর্বসূরিকে। বলতে গেলে, একদা বেসুর গাওয়ার ‘ফল’ ভোগাচ্ছেন হাতেনাতে।
বিশাল এলাকা জুড়ে বাড়ি। সেই চৌহদ্দির মধ্যে গাছগুলোয় পেকে টুসটুস করছে আম আর লিচু। অথচ বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা ও তাঁর লোকজনকে নাকি সেগুলো ছুঁতেও দেওয়া হচ্ছে না। এমনকী মাটিতে পড়ে গেলেও না। রীতিমতো গাছ পাহারা দিচ্ছে পুলিশ। অভিযোগ, ‘অনুগ্রহ’ করে যিনি থাকতে দিয়েছেন, কলকাঠি নাড়ছেন সেই নীতীশ কুমারই। সোজা হিসেব— ‘এই বাড়ি আর আপনার নয় শ্রী জিতনরাম মাঁজি। তবু থাকছেন থাকুন। ও সব আম-টাম ভুলে যান।’
পটনার ১, অ্যানে মার্গ ঠিকানার বাড়িটা এমনিতে বিখ্যাত। লালু প্রসাদ-রাবড়ি দেবী এক সময়ে এই বাড়িতে থেকেছেন শ’দুয়েক গরু নিয়ে। ভোটে নীতীশ-বাহিনীর কাছে পর্যুদস্ত হয়েও সেই বাড়ি নাকি ছাড়তে চাইছিলেন না যাদব দম্পতি। তখন এক প্রস্ত নাটক হয়েছিল। এ বার নয়া নাটক। এ বারেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বনাম বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের দায় নিয়ে গত বছর মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন নীতীশ। কুর্সিতে বসানো হয় তাঁর সেই সময়ের অনুগত জিতনরামকে। মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি নিবাস ১ অ্যানে মার্গ ছেড়ে তখনই চলে গিয়েছিলেন নীতীশ। জিতনরাম আসেন সেই ঠিকানায়। কিন্তু বছর ঘোরার আগেই বিদ্রোহ করেন জিতনরাম। জেডিইউ নেতৃত্ব তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে মুখ্যমন্ত্রী পদে ফিরিয়ে আনেন নীতীশকে। তবে এ বার সার্কুলার রোডে নিজের বাড়ি থেকে নীতীশ আর ফেরেননি মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে নিয়মিত যান তিনি। আগের মতোই জনতা দরবারও বসে সেই অ্যানে মার্গের বাড়িতেই। জোর করে জিতনরামকে সরাননি নীতীশ। সম্ভবত ভোট সামনে ভেবেই।
কিন্তু গোল বাধাল সোমবার দুপুরের ঝড়-বৃষ্টি। অ্যানে মার্গের গাছ থেকে কিছু পাকা আম-লিচু ঝড়ের দাপটে পড়ল মাটিতে। জিতনরাম-ঘনিষ্ঠদের দাবি, তাঁরা সেই ফল কুড়োতে গিয়েছিলেন। তখনই নাকি বাধা দেয় বাড়িতে মোতায়েন পুলিশ। একপ্রস্ত বচসা হয়। কিন্তু ব্যাপারটা সেখানে মেটেনি। এর পরেই নাকি অষ্টপ্রহর পুলিশি পাহারা বসেছে বাড়ির বাগানে। এবং জিতনরামের দাবি, সেটা নীতীশেরই অঙ্গুলিহেলনে। ক্ষুব্ধ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নীতীশ কুমারই এই ধরনের নোংরা রাজনীতি করতে পারেন। আসন্ন বিহার নির্বাচনে আমদের একমাত্র লক্ষ্য নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো।’’ এ নিয়ে নীতীশের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে জেডিইউ মুখপাত্র সঞ্জয় সিংহ বলেন, ‘‘মিথ্যা অভিযোগ। এমন হয় নাকি! রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তো লোক থাকবেই। তাতেই ওঁর সমস্যা হচ্ছে হয়তো।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ অফিসার অবশ্য বললেন, ‘‘আম-লিচু যাতে চুরি না যায়, তার জন্য ১৫ জন কনস্টেবল মোতায়েন করা হয়েছে। এর বেশি কিছু বলব না। বাকিটা বুঝে নিন!’’