কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ ফাইল চিত্র।
উৎসবের মরসুমে ঘরে থাকুন বলে ফের আজ দেশবাসীকে সতর্ক করে দিল কেন্দ্র। তা না হলে কেরলে ওনাম উৎসবের পরে যে ভাবে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়েছে, এ ক্ষেত্রেও গোটা দেশে সংক্রমণ ফের লাগামছাড়া হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনও দেশের বেশ কিছু প্রান্তে সক্রিয় রয়েছে। সংক্রমণের গ্রাফও প্রায় প্রতি দিন ওঠা-নামা করছে। আজ যেমন দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার ছাড়িয়েছে। যা গত কয়েক দিনে সর্বোচ্চ। সংক্রমিতের ওই সংখ্যা নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে কেন্দ্রের। এই আবহে আগামী দু’মাসে দেশের নানা প্রান্তে পরপর একাধিক উৎসব (গণেশ পুজো, নবরাত্রি, দুর্গাপুজো, ইদ) পালন হওয়ার কথা। এ যাত্রায় সে সব উৎসব থেকে দূরে থাকারই পরামর্শ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। তাঁর কথায়, ‘‘দ্বিতীয় ধাক্কার প্রভাব এখনও যায়নি। তাই এ বছর বাড়িতে থেকেই উৎসব পালন করুন। একান্তই প্রয়োজন না পড়লে উৎসবের দিনগুলিতে বাড়ি থেকে বেরোবেন না। উৎসবের দিনে ভিড় এড়িয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। একান্তই যদি ভিড়ের মধ্যে যেতে হয়, তা হলে তার আগে টিকার দু’টি ডোজ নেওয়া নিশ্চিত করুন।’’ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, গত বার উৎসবের মরসুমের পরে দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা এক লাফে বেড়ে গিয়েছিল। এ বার সেই চিত্রের পুনরাবৃত্তি হোক, তা মোটেই কাম্য নয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে। বিশেষ করে যেখানে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা পূর্ণমাত্রায় রয়েছে। সেখানে উৎসবের ভিড়কে কাজে লাগিয়ে করোনা নিজের শক্তি বৃদ্ধি করুক, তা চাইছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
তা ছাড়া উৎসবের মরসুমে যে করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কেরলের ওনাম। গোড়া থেকেই কেরলে সংক্রমণের সংখ্যা বেশি ছিল। তারই মধ্যে ওনামের মতো উৎসবের সময় প্রশাসনের গা-ছাড়া মনোভাবে ওই রাজ্যে সংক্রমণ উত্তরোত্তর বেড়েছে। কেন্দ্র জানিয়েছে, ২৭ জুলাইয়ের পর থেকেকেরলে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কুড়ি হাজারের কাছাকাছি ছিল। কিন্তু ওনামের পরে সেই সংখ্যা এক লাফে গড়ে ত্রিশ হাজারে পৌঁছে যায়। কোনও ভাবেই রোখা যাচ্ছে না সে রাজ্যের সংক্রমণকে, আর সেটিই বেশি চিন্তায় রেখেছে দেশের শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তাদের। ঠিক কেরলের ধাঁচেই গণেশ পুজোয় মহারাষ্ট্র ও দু্র্গা পুজোর কারণে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই কেন্দ্র চাইছে, গত বারে যেমন মানুষ বাড়ি থেকেই উৎসব পালন করেছিলেন, বৃহত্তর স্বার্থে এ বারও যেন তা-ই করা হয়। প্রয়োজনে ওই রাজ্যগুলিকে আলাদা করে বিধিনিষেধ জারি করার পরামর্শ দেওয়ার কথা ভেবেছে কেন্দ্র।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিনিয়ত চরিত্র পাল্টে চলেছে করোনাভাইরাস। সেই পাল্টে যাওয়া ভাইরাস সংক্রমণের প্রশ্নে কতটা শক্তিশালী, তা গোড়ায় বোঝা অনেকটাই কঠিন। ভাল করে বুঝে ওঠার আগেই অনেক সময় বিদেশ থেকে আসা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে। সেই হঠাৎ আক্রমণ রুখতে বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম পাল্টানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এ যাবৎ বিদেশ থেকে আসা অধিকাংশ যাত্রীর কাছে তিন দিন আগের করানো নেগেটিভ আরটি পিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট থাকাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু সম্প্রতি ‘মিউ’ বলে করোনার একটি নয়া প্রজাতি দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপের একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ায় ওই নিয়মে পরিবর্তন করল কেন্দ্র। গত কাল দেশের সমস্ত মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়েছেন, এখন থেকে ব্রিটেন, ইউরোপের দেশগুলি ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, চিন, মরিশাস, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবোয়ে, বতসোয়ানার মতো দেশগুলি থেকে আগত যাত্রীদের নেগেটিভ আরটি পিসিআর যেমন থাকতে হবে, তেমনই তাদের ভারতে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরেই ফের একবার আরটি পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে। এটি এখন আবশ্যিক। মূলত মিউ-য়ের মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পর্যবেক্ষণে থাকা প্রজাতি (ভ্যারিয়েন্ট অব ইনটারেস্ট)-র ভারতে প্রবেশ রুখতেই ওই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy