Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
National News

প্রবীণরা কী করবেন, কী করবেন না, জেনে নিন কেন্দ্রের পরামর্শ

৬০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের অ্যাজমা, সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষা-পরবর্তী অসুখ, ফুসফুসের অসুখ থাকলে এখন আগের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে।

বাড়িতে প্রবীণদের এখন আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। না হলে বিপদ বাড়বে। ছবি-আইস্টকের সৌজন্যে।

বাড়িতে প্রবীণদের এখন আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। না হলে বিপদ বাড়বে। ছবি-আইস্টকের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ১২:১০
Share: Save:

উহানের ঘটনার পর গত ৫ মাসে দেখা গিয়েছে, নোভেল করোনাভাইরাস কোভিড-১৯-এ যাঁরা সংক্রমিত হচ্ছেন বা যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগই প্রবীণ। বয়স ৬০ বছর বা তারও বেশি। ফলে, করোনা সংক্রমণ রুখতে তাঁদের কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। না হলে, ভারত-সহ গোটা বিশ্বেই আরও বেশি সংখ্যায় আক্রান্ত হবেন প্রবীণরা। আরও বেশি সংখ্যায় তাঁদের মৃত্যু হবে। তাই এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে দেশের প্রবীণদের সুস্থ রাখতে কী কী করণীয় আর তাঁদের কী কী করা উচিত নয়, সে সব নিয়ে একটি অ্যাডভাইসরি দিয়েছে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় মন্ত্রক এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক।

জনসংখ্যার নিরিখে ভারতে প্রবীণের সংখ্যা খুব কম নয়। ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রবীণদের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। এঁদের মধ্যে ৬০ থেকে ৬৯ বছর বয়সিদের সংখ্যা ৮ কোটি ৮০ লক্ষ। আর ৭০ থেকে ৭৯ বছর বয়সিদের সংখ্যা ৬ কোটি ৪০ লক্ষ। আর ৮০-র বেশি বয়স যাঁদের, মূলত বাঁচতে হয় অন্যদের উপর নির্ভর করেই, এমন প্রবীণদের সংখ্যা ২ কোটি ৮০ লক্ষ। আর যাঁদের ঘরবাড়ি নেই, কোনও আত্মীয়, পরিজন নেই বা পরিবারের লোকজন বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন, দেশে এমন প্রবীণের সংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ।

কোন কোন রোগীদের নিতে হবে বাড়তি সতর্কতা?

এই পরিস্থিতিতে প্রবীণদের কী কী করা উচিত আর কী কী করা উচিত নয়, তা খতিয়ে দেখার আগে জেনে নেওয়া দরকার, কোন কোন রোগে দীর্ঘ দিন ধরে ভুগলে এখন বাড়তি সতর্কতা নেওয়া উচিত প্রবীণদের। কারণ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। ফলে, সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের তাই অনেক দিনের শ্বাসকষ্টজনিত অসুখ থাকলে এখন আগের চেয়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। সেই রোগগুলির মধ্যে রয়েছে, অ্যাজমা, সিওপিডি, ব্রঙ্কাইটিস, যক্ষা-পরবর্তী অসুখ, ফুসফুসের অসুখ। অনেক দিনের হৃদরোগ, অনেক দিনের কিডনির অসুখ। হেপাটাইটিস বা মদ্যপানের জন্য অনেক দিনের লিভারের অসুখ। পক্ষাঘাত বা পারকিনসন্স ডিজিজের মতো অনেক দিনের অসুখ। এ ছাড়াও রয়েছে ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন এবং ক্যানসার।প্রবীণরা যদি এই সব অসুখে দীর্ঘ দিন ধরে ভোগেন, তা হলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, নিয়মিত ভাবে তাঁদের ওষুধগুলি খেয়ে যেতে হবে। নিয়মে কোনও ব্যাতিক্রম ঘটানো চলবে না। বাড়তি ‘ডোজ’-এর ওষুধ খাওয়াও উচিত হবে না। কারণ, তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

এ বার দেখে নেওয়া যাক, বাড়িতে থাকার সময় প্রবীণরা কী ভাবে চলবেন? প্রবীণদের অনেকেই নিয়মিত হাঁটাচলা করেন। তাঁদের নিয়মিত বাজারে যাওয়ারও অভ্যাস রয়েছে। আবার এমন অনেক প্রবীণ রয়েছেন, যাঁরা অন্যের উপর নির্ভর না করে এক পা-ও হাঁটতে পারেন না।

হাঁটাচলা করতে পারেন এমন প্রবীণদের কী কী করণীয়?

যাঁরা হাঁটাচলা করতে পারেন, এমন প্রবীণরা এই পরিস্থিতিতে সারা দিনই বাড়িতে থাকুন। বাড়িতে অতিথি না ডাকলেই ভাল। তবে বাইরে থেকে কেউ এলে, তাঁদের এড়িয়ে চলুন। কোনও অতিথির সঙ্গে যদি কথা বলতেই হয়, দূরত্ব রাখুন অন্তত ১ মিটার। আর একটু বেশি দূরত্ব রাখতে পারলে আরও ভাল। একা থাকলে সুস্থ প্রতিবেশীকে প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে যেতে বলুন। নিজে বাইরে বেরবেন না। বাড়িতেও ছোট বা বড় জটলা এড়িয়ে চলুন। বাড়িতে কাজ করুন যতটা সম্ভব, হাঁটাচলা করুন। হাল্কা ব্যায়াম বা যোগাভ্যাস করতে পারেন। খাওয়ার আগে, পরে খুব ভাল ভাবে দু’হাত ধুয়ে ফেলুন।

আরও পড়ুন: ভয় কিসের? বেলগাছিয়া বস্তিতে করোনা-যুদ্ধে বলছেন ওঁরা

আরও পড়ুন: ডাক্তারদের সুরক্ষায় ‘ফেস শিল্ড’ দিলেন শল্য চিকিৎসক

বাথরুমের পর ভাল ভাবে দু’হাত ধুয়ে ফেলুন। সাবান, জল দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিন। চশমা ও মোবাইলের মতো যে সব জিনিস সব সময় ব্যবহার করেন, ভাল ভাবে সেই সব ধুয়ে নিন। হাঁচি, কাশির সময় টিস্যু পেপার/রুমাল ব্যবহার করুন। হাঁচি, কাশির পর ব্যবহৃত টিস্যু পেপার মুখবন্ধ পাত্রে ফেলে দিন। সেই পাত্রটিও নিয়মিত পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতনতা প্রয়োজন। হাঁচি, কাশির পর রুমাল ধুয়ে ফেলুন, হাতও ধুয়ে নিন। বাসি খাবার খাবেন না, গরম করে খাবেন। খুব জল খান, ফলের রস খান বার বার। যে ওষুধগুলি খান, নিয়মিত খেয়ে যান। জ্বর, সর্দি, কাশি, কফ হলেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিঃসঙ্গতা কাটাতে দূরে থাকা আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবীদের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলুন, যতটা সম্ভব। তার জন্য পরিবারের কারও সাহায্য প্রয়োজন হলে, নিন। গরমে ডিহাইড্রেশন এড়াতে খুব জল খান। তবে হৃদরোগ/কি়ডনির অসুখ থাকলে মেপে জল খাবেন।

হাঁটাচলা করতে পারেন এমন প্রবীণরা কী কী করবেন না?

জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশি হয়েছে, এমন কারও কাছে যাবেন না। ঘনিষ্ঠ বা বন্ধুদের সঙ্গে করমর্দন করবেন না। ঘনিষ্ঠ বা বন্ধুদের আবেগে জড়িয়ে ধরবেন না। পার্ক, বাজার, ধর্মস্থানে যাবেন না। হাঁচি, কাশির সময় হাত দিয়ে নাক, মুখ মুছবেন না। চোখ, মুখ, নাকে হাত ছোঁয়াবেন না, দস্তানা ব্যবহারই শ্রেয়। নিজে বেছে নিয়ে বাক্স খুলে ওষুধ খাবেন না। কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে তার নামধাম ও ডোজ ডাক্তারকে ফোন করে জেনে নিন। হাসপাতালে রুটিন চেক-আপে যাবেন না, টেলিফোন পরামর্শ নিন ডাক্তারের। সময় কাটাতে আত্মীয়, বন্ধুদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাবেন না।

যে প্রবীণরা অন্যের উপর নির্ভরশীল, তাঁদের কী কী করণীয়?

বাড়ির অন্য প্রবীণকে কোনও কাজে সাহায্য করতে গেলে তাঁরা হাত ভাল ভাবে ধুয়ে নেবেন। অন্য প্রবীণের কাছে যাওয়ার সময় কাপড়/টিস্যু পেপার দিয়ে নাক, মুখ ঢেকে রাখুন। ওয়াকার, ওয়াকিং কেন, হুইলচেয়ার, বেডপ্যান ভাল ভাবে পরিষ্কার রাখুন। হাত ধুতে বাড়ির আরও প্রবীণদের সাহায্য করুন। জল ও খাবার মেপে খান, শরীর বুঝে খান। বাড়ির অন্য প্রবীণের উপরেও নজর রাখুন। কিন্তু বাড়ির অন্য প্রবীণ জ্বর, সর্দি, কাশিতে ভুগলে তাঁর কাছে যাবেন না। অন্য প্রবীণদের শুধুই বিছানায় শুইয়ে রাখবেন না। হাত না ধুয়ে বাড়ির অন্য প্রবীণদের ছোঁবেন না।

গৃহবন্দি হওয়ায় মানসিক অবসাদ কাটাতে কী কী করবেন?

বাড়ির ল‌োকজনের সময় সময় কাটান যতটা সম্ভব। টেলিফোনে বা ভিডিয়ো কনফারেন্সে দূরের আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যতটা পারেন কথা বলুন। বাড়িতে কেউ এলে তাঁদের থেকে অন্তত ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন। সব রকমের জটলা এড়িয়ে চলুন। নিজেকে আলাদা করে রাখবেন না। একটা ঘরে নিজেকে বন্দি করে রাখবেন না। বাড়িতে শান্তি বজায় রাখুন। এই সময় ছবি আঁকা, বই পড়া বা গান শোনার মতো পুরনো শখগুলি নিয়ে মেতে থাকতে পারেন। উত্তেজনা সৃষ্টি করে এমন খবর বা সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট এড়িয়ে চলুন। নিজেও সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও বিভ্রান্তিকর খবর ছড়াবেন না। খবরাখবর পাওয়ার জন্য একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের উপরেই ভরসা রাখবেন। অবসাদ বা একাকীত্ব কাটাতে ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য কোনও মাদক সেবন করবেন না। অনেক দিন ধরে আপনার কোনও মানসিক অসুস্থতা থাকলে হেল্পলাইন নম্বরে (০৮০৪৬১১০০০৭) ফোন করুন।

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE