মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রী বিজয় শাহের কঠোর শাস্তির দাবি জানাল ভারতীয় সেনা অফিসার কর্নেল সোফিয়া কুরেশির পরিবার। ওই মন্ত্রী সোফিয়া সম্পর্কে কুমন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। বলেছিলেন সোফিয়া ‘সন্ত্রাসবাদীদের বোন’। এই মন্তব্যের পর দেশ জুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপিও। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীকে সরানোর দাবি তুলেছে সোফিয়ার পরিবার। তাঁর আত্মীয়েরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। দাবি, মন্ত্রীর মন্তব্যে দেশের প্রতি সোফিয়ার কর্তব্যকে অসম্মান করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশের মন্ত্রিত্ব থেকেই বিজয়ের অপসারণ চেয়েছে সোফিয়ার পরিবার।
সোফিয়ার এক ভাই বান্টি সুলেমন বলেন, ‘‘সোফিয়া শুধু আমাদের কন্যা নয়, ও দেশের কন্যা, ভারতীয় সেনার কন্যা। ও দেশের জন্যেই বাঁচে। মন্ত্রী বিজয় শাহের মন্তব্যের কোনও ক্ষমা হয় না।’’ সুলেমন চান, তাঁর আর্জি মোদী, শাহ এবং রাজনাথের কাছে পৌঁছে যাক এবং তাঁরা উপযুক্ত পদক্ষেপ করুন। মধ্যপ্রদেশের ছতরপুরের বাসিন্দা সোফিয়া। স্থানীয় বিজেপি তাঁর পরিবারের পাশেই আছে। সেখানে তাঁদের বাড়িতে ইতিমধ্যে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব গিয়েছেন এবং পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা পরিবারটিকে আশ্বস্ত করেছেন যে, বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য ওই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করবে ভারত সরকার। সুলেমন বলেন, ‘‘বিজেপির অনেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ভারত সরকার ওই মন্ত্রীর মন্তব্যের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে। সোফিয়া দেশের কন্যা, ওঁরাও তা মেনে নিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন:
উল্লেখ্য, ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে পর পর কয়েক দিন ভারতীয় সেনা ও বিদেশ মন্ত্রক যৌথ ভাবে সাংবাদিক বৈঠক করেছিল। প্রত্যেক বৈঠকেই বিদেশসচিব বিক্রম মিস্রীর পাশে উপস্থিত ছিলেন কর্নেল সোফিয়া এবং বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ। সাংবাদিক বৈঠকে ভারতীয় সেনার প্রতিনিধিত্ব করেন তাঁরা। সীমান্তে সংঘর্ষ চলাকালীন কোন দিন কী কী হচ্ছে, ভারত কী পদক্ষেপ করছে, পাকিস্তানই বা কী ভাবে আক্রমণের চেষ্টা চালাচ্ছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা দিতেন এই দু’জন। সোফিয়া প্রথমে হিন্দিতে বলতেন, পরে ব্যোমিকা ইংরেজিতে ওই একই কথা বলতেন। পরে বিদেশসচিব নিজের বক্তব্য জানাতেন। এই যৌথ সাংবাদিক বৈঠকগুলি সাড়া ফেলে দিয়েছিল সারা দেশে। ভারতীয় সেনার সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক্স অভিযান সহায়ক শাখা সিগন্যাল কর্পসের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক ৩৫ বছরের সোফিয়া। তাঁর উদ্দেেশেই বিতর্কিত মন্তব্যটি করেন বিজেপির মন্ত্রী। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছিল মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। এই মন্তব্যের জন্য বিজয়কে ভর্ৎসনা করেছে সুপ্রিম কোর্টও। প্রধান বিচারপতি বিআর গবইয়ের পর্যবেক্ষণ, মন্ত্রীর মন্তব্য একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা অসংবেদনশীল। বিজয়কে ধমক দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘কী ধরনের মন্তব্য করছেন? আপনার অন্তত একটু সংবেদনশীলতা দেখানো উচিত। যান, গিয়ে হাই কোর্টে ক্ষমা চান।’’ এর পরেও অবশ্য বিতর্ক থামেনি। বিরোধীরা একযোগে আক্রমণ করেছে ওই মন্ত্রীকে।