রাজ্য স্তরে আলোচনার পরে কংগ্রেস-বাম সমঝোতার বল ফের গড়াল দিল্লিতে। আসন-রফার সূত্র নিয়ে দিল্লিতে সংসদ অধিবেশনের ফাঁকেই কথা বলে নিলেন সিপিএম ও কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। কংগ্রেসের বার্তা মাথায় রেখে কলকাতায় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীও বৈঠকে বসে ঘর গুছিয়ে রাখার চেষ্টা করল। দিনের শেষে দুই শিবিরের তরফেই বলা হয়েছে, কথাবার্তার অগ্রগতি আপাতত ‘ইতিবাচক’।
কে কাকে কতগুলি আসন ছাড়তে তৈরি, তা নিয়ে রবিবার কলকাতায় এক প্রস্ত আলোচনা সেরেছিলেন রাজ্য সিপিএমের এক শীর্ষ নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেসের দুই জোটপন্থী নেতা। কংগ্রেসের দাবিমতো আসন ছেড়ে দেওয়া যে অসুবিধাজনক, সিপিএমের তরফে তা-ই জানানো হয়েছিল সেই বৈঠকে। তার পরেই দু’দলের তরফে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট দেওয়া হয় এবং বলও গড়ায় দ্রুত। রাতেই এআইসিসি-র সবুজ সঙ্কেত নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী সিপিএমের মতোই বিবৃতি জারি করে জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কংগ্রেসও গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সব শক্তিকে একজোট হতে আহ্বান করছে। কংগ্রেস কেন বিবৃতি দিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করছে না, তা নিয়ে প্রাথমিক সংশয় কাটার পরে সোমবার দিল্লিতে কংগ্রেসের অহমেদ পটেল এবং সি পি জোশীর সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ ঘরোয়া ভাবে আলোচনা সেরেছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে অধীরেরও।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে গিয়ে পাঁচ বছর আগে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি ঘটলে সমঝোতা যে সম্ভব নয়— এই যুক্তি বোঝানো গিয়েছে সিপিএম নেতৃত্বকে। আবার সিপিএমও বুঝিয়েছে, বামফ্রন্টের শরিকদের কথা মাথায় রেখে অনেক বিবেচনা করেই তাদের এগোতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কংগ্রেস তাদের ১০৪ আসনের দাবি থেকে খানিকটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে, সিপিএমও আবার ৬৫-৭০ আসনের সূত্রই আঁকড়ে না থেকে পাল্টা নমনীয় হওয়ার বার্তা দিয়েছে। সিপিএমের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘আসন সমঝোতা তো এক কথায় সেরে ফেলা সম্ভব নয়! আসন ধরে ধরে আলোচনাই স্বাভাবিক।’’
আলিমুদ্দিনে এ দিন রাতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীও জেলাভিত্তিক আসন বণ্টনের জটিলতা নিয়ে আলোচনা করেছে। ঠিক হয়েছে, প্রাথমিক একটা হিসেব খাড়া করে আজ, মঙ্গলবার থেকেই শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। এখনও যা অবস্থা, তাতে মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহারের কিছু আসন নিয়েই জট বেশি। বামেদের জেতা কয়েকটি আসনও কংগ্রেস দাবি করছে।
এই পরিস্থিতিতে এ দিন দু’টি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে প্রদেশ কংগ্রেসে। সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রদেশ সভাপতির যে বিবৃতির প্রতিবাদে দলের সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ (মিঠু) রায়। তিনি বলেন, ‘‘সনিয়াজিকে বলেছি, এটা অনৈতিক জোট। আমি ওই জোটের প্রার্থী হয়ে দাঁড়াব না।’’ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কংগ্রেস-বামেদের ‘অনৈতিক জোটে’র কথা বলছেন। আর দেবপ্রসাদবাবুর তৃণমূলে যাওয়া নিয়ে জল্পনাও অনেক দিনের। যদিও প্রশ্নের জবাবে তিনি এ দিন মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি বাজারের পণ্য নই! আমি ৫৩ বছর ধরে কংগ্রেসে নানা স্তরে সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছি।’’ আর প্রবীণ বিধায়কের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অধীর বলেছেন, ‘‘উনি না দাঁড়ালে কী আর করা যাবে! আমি তো স্বেচ্ছায় কিছু করিনি!’’
সনিয়ার কাছে এ দিনই আবার সবংয়ের বিধায়ক মানস ভুঁইয়া চিঠি পাঠিয়ে দক্ষিণবঙ্গের কংগ্রেস কর্মী-নেতাদের মর্যাদা রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন। এসএমএসে তাঁর ওই বক্তব্য জানিয়েছেন অধীরকেও। যার থেকে মনে করা হচ্ছে, ‘একলা চলা’র অবস্থান ছেড়ে মানসবাবু এখন দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেসের টিকিট রক্ষায় মনোনিবেশ করেছেন! মানসবাবুর যুক্তি, ২০০৬ বাদ দিয়ে ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে, দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মর্যাদা দেওয়া হয়নি। মানসবাবুর কথায়, ‘‘আমি গত ৭ দিনে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, কলকাতায় কর্মিসভা করেছি। কর্মীরাই অনুরোধ করেছেন, এ বার তাঁদের যেন বঞ্চিত না করা হয়।’’ উত্তরবঙ্গেও ৭৬টি আসনের সুষম বণ্টন চেয়েছেন মানসবাবু। যার প্রেক্ষিতে অধীরের মন্তব্য, ‘‘খুব ভাল কথা! মানসবাবুর মতো আমিও সারা বাংলার কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের কথা ভেবেই জোটের পক্ষে মত দিয়েছি। বাস্তব বোধ ও আন্তরিকতা নিয়েই জোট হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy