E-Paper

সচ্ছলের উপরে কর বসিয়ে গরিবকে সেবা, প্রস্তাব বিজয়নদের

রাজ্যে ভবিষ্যতের উন্নয়নের রূপরেখা পেশ করতে গিয়ে এ বার ক্ষেত্রবিশেষে কর বসানোর প্রস্তাব দিল কেরল সিপিএম।

সন্দীপন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৫ ১৩:০৩
CPM proposes cess & surcharges to sustain development in Kerala, policy paper presented in conference

কোল্লমে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনে (বাঁ দিক থেকে) কে এন বালগোপাল, বৃন্দা কারাট, এম ভি গােবিন্দন, পিনারাই বিজয়ন এবং প্রকাশ কারাট। —ফাইল ছবি।

আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত রাজ্য। কেন্দ্রের ‘অসহযোগিতা’র দিকে আঙুল তুলে বিস্তর আন্দোলন হয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে শাসক ফ্রন্টের মন্ত্রী ও বিধায়কেরা দিল্লিতে যন্তর মন্তরে গিয়ে ধর্না দিয়ে এসেছেন। তাতেও সুরাহা হয়নি। রাজ্যে ভবিষ্যতের উন্নয়নের রূপরেখা পেশ করতে গিয়ে এ বার ক্ষেত্রবিশেষে কর বসানোর প্রস্তাব দিল কেরল সিপিএম। তাদের যুক্তি, রাজ্যের নিজস্ব তহবিলের জোর না বাড়লে জনতার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

কোল্লমে চলছে সিপিএমের কেরল রাজ্য সম্মেলন। সেখানেই ‘নতুন কেরলের জন্য নতুন পথ’ শীর্ষক ৪১ পাতার নীতি-পত্র পেশ করেছেন দেশের একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। সেই প্রতিবেদনে প্রস্তাব রয়েছে, আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে সচ্ছল অংশের মানুষের উপরে কিছু কর আরোপ করা হোক। রাজ্য সড়কে টোল-সহ কিছু ক্ষেত্রে সেস ও সারচার্জের মাধ্যমে রাজ্যের আয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, গত কয়েক বছরে নানা জনকল্যাণমূলক প্রকল্প চালু হয়েছে কেরলে। সেই সঙ্গে চলছে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ। কিন্তু কেন্দ্রের ‘অসহযোগিতা’য় নানা কাজ আটকে থাকছে, রাজ্যের ঋণ নেওয়ার ঊর্ধ্বসীমাও বাড়ানো হচ্ছে না। এর মাসুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকেই। নীতি-পত্রের বক্তব্য, বাম সরকারের অগ্রাধিকার থাকবে গরিব ও প্রান্তিক মানুষই। তাঁদের পরিষেবা পাওয়া নিশ্চিত করতেই বিত্তবান অংশের উপরে ‘যুক্তিসম্মত হারে’ কর বসানোর কথা বলা হয়েছে।

আর্থিক সঙ্কটের নিরিখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলার সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে বিজয়নের কেরলের। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে মমতার দলও সরব। তবে নীতিগত ভাবে মমতা কর আদায়ের বিরুদ্ধে। কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা বা ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা কেন্দ্র না-দেওয়ায় রাজ্যের সরকার নিজেরাই তা মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আবগারি ও আবাসন থেকে রাজস্ব এবং বাজার থেকে ঋণই বাংলার সরকারের তহবিলের মূল সূত্র। এই ক্ষেত্রে কেরলের সিপিএম সরকার তাদের ‘শ্রেণি অভিমুখ’ ঠিক রেখে সচ্ছল অংশের উপরে কিছু কর বসিয়ে প্রান্তিক মানুষের জন্য পরিষেবা চালিয়ে যেতে চাইছে। চার দিনের রাজ্য সম্মেলনে এই নীতি-পত্র নিয়ে বির্তকের পরে দলের অবস্থান চূড়ান্ত হবে।

কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ‘অসহযোগিতা’র প্রচার চালিয়ে দক্ষিণী এই রাজ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি শাসক দল। সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা, এখন বাধ্য হয়েই বিকল্প পথ ভাবতে হচ্ছে। সম্মেলনের বিরতির ফাঁকে কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক এম ভি গোবিন্দন বলেছেন, ‘‘কেন্দ্র যে ভাবে গলা টিপে ধরতে চাইছে, এই পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে কেরলের সব কাজ বন্ধ হয়ে যাবে! উন্নয়ন তো থেমে থাকতে পারে না, তার জন্য টাকাও চাই। আমাদের তাই নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর রাস্তা খুঁজতেই হবে।’’ তাঁর সংযোজন, প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে কর আদায়ের সম্ভাব্য ক্ষেত্র সমীক্ষা করে দেখা হবে। ‘অন্যায্য’ ভাবে কোনও কর চাপানো হবে না। তবে অভিমুখ থাকবে দুর্বল অংশকে সরকারি সহযোগিতায় অগ্রাধিকার দেওয়ায়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে গোবিন্দন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘জওহরলাল নেহরু অনেক দিন আগে বলেছিলেন, সমবায় সংস্থাগুলো স্থানীয় প্রশাসনের ক্ষেত্রে অর্থের সংস্থান করতে পারে। সেই ভাবনা এখনও প্রাসঙ্গিক।’’

শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহণ-সহ সার্বিক উন্নয়নের পরিকল্পনা পেশ করা হয়েছে নীতি-পত্রে। তবে সূত্রের খবর, দলের রাজ্য সম্পাদকের পেশ করা সাংগঠনিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী সব রকম চেষ্টা চালালেও মন্ত্রীদের অনেকের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। স্থানীয় স্তরে ‘ক্ষমতার অহঙ্কারে’ থাকা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মানুষের সংযোগে ঘাটতির কথাও বলা হয়েছে। কোল্লমের স্থানীয় বিধায়ক তথা অভিনেতা এম মুকেশকে অবশ্য সম্মেলনে দেখা যাচ্ছে না। তাঁর বিরুদ্ধে আগে ওঠা যৌন হেনস্থার অভিযোগই এই অনুপস্থিতির কারণ কি না, সেই প্রশ্নে মুখ খোলেননি দলের নেতারা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pinarayi Vijayan Kerala

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy