প্রাথমিক স্কুলস্তরে প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের নিয়ে চূড়ান্ত সমস্যায় পড়েছে রাজ্য সরকার। না পারছে তাদের দায় ঝেড়ে ফেলতে, না পারছে এনসিইআরটি-র নির্দেশ মতো প্রাথমিক ও উচ্চ-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের নির্দেশ ছিল, ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত যে সব শিক্ষক বিশেষ ‘শিক্ষণ-প্রশিক্ষণ’ ছাড়াই স্কুলে নিযুক্ত হয়েছে, তাদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ত্রিপুরা-সহ দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্যকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি রাজ্য সরকারের অনুরোধে কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরাকে আরও পাঁচ বছরের ছাড় দিয়েছে। অর্থাত্ ২০২০ সালের মধ্যে সমস্ত শিক্ষককে উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এক বছরের বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হবে।
এ পর্যন্ত রাজ্যের এমন ১৬ হাজার শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ২২০০ শিক্ষক স্কুলশিক্ষা দফতরের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ পেয়েছে। এ বারও দফতর এ ধরনের প্রায় ৩২০০ জন শিক্ষককে ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইগনু) প্রশিক্ষণের জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু এ বার রাজ্যের ইগনু কর্তৃপক্ষ ২১৮৯ জনকে দু’ বছরের ‘ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন’ পাঠ্যক্রমে ভর্তি করেছে। বাকি ৮১১ জনকে ভর্তি করেনি। গোল বেধেছে এখানেই। ইগনুর আঞ্চলিক প্রধান নম্রতা হাজগির বলেন, ‘‘ইগনুর নির্দেশিকা অনুযায়ী, ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা যাঁদের রয়েছে, তাঁদেরই ভর্তি করা হয়েছে। যাঁদের নেই, তাঁদের ভর্তি করা হয়নি।’’ সাধারণ শ্রেণির প্রার্থীর ন্যূনতম শিক্ষগত যোগ্যতা হল, উচ্চ মাধ্যমিকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। আর সংরক্ষিত কোটায় যাঁরা ভর্তি হবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ নম্বর থাকলেই হবে।
এখন প্রশ্ন হল, ‘ন্যূনতম’ যোগ্যতা না থাকা এই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কে দেবে? এবং যদি তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া না যায় তবে তাঁদের চাকরি বাঁচবে কী করে? এ বিষয়ে রাজ্য স্কুলশিক্ষা দফতরের কাছে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১১ থেকে এ ধরনের প্রশিক্ষণহীন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছিল। এ বার কেন এই প্রার্থীদের ইগনুর ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছি না।’’ এ দিকে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ত্রিপুরার প্রশিক্ষণহীন শিক্ষকদের জন্য ২০২০ পর্যন্ত সময় বাড়ালেও একটি কঠোর বাস্তব কথা রাজ্য সরকারকে শুনিয়ে দিয়েছেন। রাজ্য শিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘তাঁদের চিঠিতে মন্ত্রক ত্রিপুরার এ ধরনের শিক্ষকদের ৮০ শতাংশকেই ‘অযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন।’’
এখানেও প্রশ্ন, এই অযোগ্যদের রাজ্যের শাসক দল কেন নিয়োগ করল? দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এনসিইআরটি-র নিয়ম অগ্রাহ্য করে ২০১০ সালের পরেও রাজ্য সরকার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নয়, এমন বহু প্রার্থীকে নিয়োগ করেছে।
এমনকী, প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় নম্বর নেই, এমন প্রার্থীর সংখ্যাও অনেক। উল্লেখ্য, রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থী ‘পার্টি ক্যাডার’ কিনা, সেই যোগ্যতাই খতিয়ে দেখা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy