E-Paper

কাশ্মীরে জঙ্গি-দমন অভিযানে গিয়ে দুর্যোগে মৃত বঙ্গের ২ প্যারা কমান্ডো

সেনাবাহিনীর সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশতোয়ার রেঞ্জের দুর্গম উঁচু পাহাড়ি এলাকায় বিদেশি জঙ্গিদের উপস্থিতির খবর ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৩০
(বাঁ দিকে) সুজয় ঘোষ, পলাশ ঘোষ (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) সুজয় ঘোষ, পলাশ ঘোষ (ডান দিকে)।

কাশ্মীরের গভীর পাহাড়ি জঙ্গল থেকে উদ্ধার হল পশ্চিমবঙ্গের দুই প্যারা কমান্ডোর দেহ। সপ্তাহের শুরুতে অভিযানে বেরিয়ে পীর পঞ্জল পর্বতশ্রেণির অনেক উঁচুতে প্রতিকূল আবহাওয়ায় নিখোঁজ হয়ে যান এলিট প্যারা ৭ স্পেশাল ফোর্সের হাবিলদার পলাশ ঘোষ এবং ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ। গত কাল এবং আজ কোকেরনাগের গাডোল জঙ্গলের দুর্গম এলাকা থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ তল্লাশি-দল। সুজয়ের বাড়ি বীরভূমে, পলাশ মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা।

সেনাবাহিনীর সূত্রে জানা গিয়েছে, কিশতোয়ার রেঞ্জের দুর্গম উঁচু পাহাড়ি এলাকায় বিদেশি জঙ্গিদের উপস্থিতির খবর ছিল। ভারী তুষরপাত পুরো শীতকালের জন্য পথ বন্ধ করে দেওয়ার আগে তাই অভিযান চালানো হয়। গত সোম ও মঙ্গলবারের মাঝের রাতে প্যারা কমান্ডোদের দলটি প্রবল তুষারঝড় অথবা তুষারধসের মুখে পড়ে অভিযানের মাঝে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সুজয় এবং পলাশের সঙ্গে। প্রতিকূল আবহাওয়ায় বরফের পুরু আস্তরণের মধ্যে উদ্ধারের কাজে বাধা ছিল প্রতি পদে। তারই মধ্যে চার দিনের টানা তল্লাশির শেষে দু’জনেরই দেহ মিলল।

বীরভূমের রাজনগর ব্লকেরকুণ্ডীরা গ্রামে বাড়ি বছর সাতাশের সুজয়ের। পরিবারে বাবা, মা, ঠাকুরদা, দাদা এবং ভাই আছেন। কৃষিজীবী পরিবার। বছর সাতেক আগে বাড়ির মেজো ছেলে সুজয় সেনায় যোগ দিয়েছিলেন। আজ দুপুরে দাদা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষের কাছে বাহিনীর থেকে ফোন আসে। প্রথমে তাঁদের বলা হয়েছিল, সুজয়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, তবে পরিস্থিতি ভালনয়। মৃত্যুর খবর আসে পরে। সেই কথা রাত পর্যন্ত জানানো হয়নিবৃদ্ধ ঠাকুরদাকে।

বছর আটত্রিশের পলাশের বাড়ি মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়ার রুকুনপুর গ্রামে। তাঁর বাবা প্রশান্ত ঘোষ জানান, আজ সন্ধ্যায় পরিবারের কাছে ছেলের মৃত্যুর খবর এসেছে। সন্ধ্যায় সেনার চিনার কোরের এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘কোকেরনাগের কিশতোয়ার রেঞ্জে প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে নিরলস সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানোর সময় বীর ল্যান্স হাবিলদার পলাশ ঘোষ এবং ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষের আত্মবলিদানকে কুর্নিশ জানায় চিনার ওয়ারিয়র্স। তাঁদের সাহস এবং নিষ্ঠা আমাদের চিরকাল অনুপ্রাণিত করবে।’ সুজয় ও পলাশের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়েছে বাহিনীর তরফে।

গত কয়েক বছরে দক্ষিণ কাশ্মীরের এই দুর্গম এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি নিয়ে ঘাঁটি গাড়তে লক্ষ করা যাচ্ছে জঙ্গিদের। গাডোলের গভীর জঙ্গল এবং খাড়া ঢালের সুযোগ নিয়ে থাকে তারা। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি প্রায় এক সপ্তাহ ধরে অনন্তনাগ জেলার এই জঙ্গলেই যৌথ বাহিনী ‘অপারেশন গাডোল’ চালায়। দুই সেনাকর্তা, এক পুলিশকর্তা ও এক সেনা জওয়ান জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন তখন। আফগানিস্তানে আমেরিকার বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র এবং রাত-চশমা ছিল জঙ্গিদের কাছে। বুলেট-প্রতিরোধী জ্যাকেট ফুঁড়ে গুলি তাঁদের বিদ্ধ করেছিল। সেই অভিযানেও প্যারা কমান্ডোদের ব্যবহার করেছিল সেনা। নিহত হয় ওই দলটির মাথা, লস্কর-ই-তইবার ছায়া সংগঠন টিআরএফ (দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট)-এর কমান্ডার উজ়ির খান-সহ দুই জঙ্গি। যে টিআরএফ গত এপ্রিলে পহেলগামে পর্যটকদের উপরে হামলার দায় স্বীকার করেছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Kashmir

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy