Advertisement
E-Paper

গা-ঢাকা তছরুপে অভিযুক্ত কর্মীরা

পুলিশের ভয়ে অফিসে আসছেন না সরকারি তহবিল তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত কর্মী-অফিসাররা। আর তাঁদের লাগাতার অনুপস্থিতিতে লাটে উঠেছে হাইলাকান্দি ব্লকের কাজকর্ম। চরম দুর্ভোগের পড়েছেন বার্ধক্য ভাতার প্রাপকরা, ইন্দিরা আবাস যোজনার উপভোক্তা-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা।

অমিত দাস

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০৩:৩৬

পুলিশের ভয়ে অফিসে আসছেন না সরকারি তহবিল তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত কর্মী-অফিসাররা। আর তাঁদের লাগাতার অনুপস্থিতিতে লাটে উঠেছে হাইলাকান্দি ব্লকের কাজকর্ম। চরম দুর্ভোগের পড়েছেন বার্ধক্য ভাতার প্রাপকরা, ইন্দিরা আবাস যোজনার উপভোক্তা-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা।

ব্লক অফিসের অ্যাকাউন্টেন্ট, সহকারী অ্যাকাউন্টেন্ট, ছ’জন জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার-সহ মোট দশজনের বিরুদ্ধে গ্রামোন্নোয়নের ৭০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দায়ের
হয়েছে থানায়। অভিযোগকারী আর কেউ নন, স্বয়ং হাইলাকান্দির জেলাশাসক। গত ১৮ এপ্রিল হাইলাকান্দির জেলাশাসকের নির্দেশে মামলা দায়ের করার পর থেকেই পুলিশ যেমন তাঁদের গ্রেফতার
করতে তত্পর, তেমনই তাঁরাও পুলিশকে ফাঁকি দিতে ব্যস্ত। আর এই লুকোচুরির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কারণ এক সঙ্গে এত জন কর্মী ব্লক অফিসে না আসায় কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে।

এই ব্লকের অধীনের ১৪ টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে পঞ্চায়েতের যাবতীয় উন্নয়নমূলক কাজ। হাইলাকান্দি পঢ্চায়েত পরিষদের উপ-সভাপতি রাজু রবিদাশ উদ্বিগ্ন। তাঁর কথায়, ‘‘ব্লকের কাজকর্ম কার্যত বন্ধ হয়ে আছে। অথচ তা নিয়ে প্রশাসনের কোনও মাথা ব্যাথা নেই। ব্লকের যাবতীয় আর্থিক লেনদেন বন্ধ থাকায় বার্ধক্য ভাতা প্রাপক এবং ইন্দিরা আবাস যোজনার উপভোক্তাদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে।’’ তাঁর বক্তব্য, ব্লকের তহবিলে টাকা জমা রয়েছে। কিন্তু অ্যাকাউন্টেন্ট অনুপস্থিত থাকায় বকেয়া টাকা বিতরণ করা যাচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষদের জন্য মাসে ১৫০ টাকা করে বার্ধক্য ভাতা দেওয়া হয়। কয়েক মাস পর পর ভাতার টাকা আসে। ভাতার টাকা ব্লকের অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে। কিন্তু তা বিতরণ করা যাচ্ছে না।

ব্লকে কর্মী নেই বলে কোনও ফাইলই নড়ছে না। ফলে উন্নয়নের যাবতীয় কাজই বন্ধ। কবে এই অচলাবস্থা কাটবে তা কেউই বলতে পারছেন না। দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন ইন্দিরা আবাসের উপভোক্তারাও। হাইলাকান্দি ব্লকের কাঞ্চনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাখি মিয়াকে এখন খোলা আকাশের নিচে দিন গুজরান করতে হচ্ছে। ইন্দিরা আবাসের গৃহ নির্মাণের জন্য প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছিলেন তিনি। টাকা পেয়ে পুরনো ঘর ভেঙ্গে নতুন আবাস নির্মাণ শুরুও করেছিলেন। প্রথম কিস্তির ১৬ হাজার টাকা শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আর হাতে পাননি। ফলে ঘর আর্ধেক তৈরি হয়ে পড়ে আছে। টাকা না পাওয়ায় টিন-সহ বাড়ি তৈরির অন্যান্য সামগ্রীও কিনতে পারছেন না। বর্ষাও আসছে। এই পরিস্থিতিতে প্রায় দিনই ব্লক অফিসের বারান্দায় ধর্না দিয়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে পাখিকে। একই অবস্থা ময়না মিয়া লস্করেরও। তার কথায়, ‘‘বৃষ্টি তো এসেই গিয়েছে। আধা তৈরি বাড়িতে পলিথিনের ছাউনি দিয়েই আপাতত সপরিবারে মাথা বাঁচাচ্ছি।’’

পঞ্চায়েত সদস্যরা জানান, ব্লকের ফাইল চলাচল বন্ধ থাকায় ডিডিপি, ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ অর্থ কমিশন, বিআরজিএফ ইত্যাদি খাতের যাবতীয় প্রকল্পের কাজই বন্ধ হয়ে আছে। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিআরজিএফ খাতে ৫৬ লক্ষ, ডিডিপি খাতে ১৭ লক্ষ, চতুর্দশ অর্থ কমিশন খাতে ৩৬ লক্ষ এবং ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন খাতে ২২ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্কে জমা পড়ে রয়েছে। জমা পড়ে রয়েছে একশো দিনের কাজের প্রকল্পের টাকাও। কর্মীরা মজুরি পাচ্ছেন না। তাঁদের নানা প্রশ্নের মুখে পড়ে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে নির্বাচিত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিরা আজ জেলাশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপিও জমা দেন। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তাঁরা এলাকার মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছেন। তবে
ব্লকের কাজকর্ম নিয়ে বিডিও মইনুল হক চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘আপাতত
কিছু সমস্যা হলেও শীঘ্রই সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ কী ভাবে তা অবশ্য তিনি স্পষ্ট করেননি।

amit das Defalcation accused hailakandi hailakandi block
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy