মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথের সঙ্গে ফোনে কথা হল ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। গত বুধবার আমেরিকার বিদেশসচিব মার্কো রুবিওর সঙ্গে কথা হয়েছে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করেরও। স্বাভাবিক ভাবেই দুই ফোনালাপেই উঠে এসেছে পহেলগাঁও কাণ্ডের প্রসঙ্গ। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকারকে মার্কিন প্রশাসন সমর্থন জানালেও ভারত এবং পাকিস্তানের উত্তেজনার প্রসঙ্গে নিরপেক্ষই থাকছে আমেরিকা।
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি হয়েছে। দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবার গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে পাকিস্তানি সেনা। জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনাও। উদ্ভূত এই পরিস্থিতির মাঝে বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানা নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিব হেগসেথের সঙ্গে কথা হয়েছে রাজনাথের। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, ওই সময়ে হেগসেথ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছে আমেরিকা।
বৃহস্পতিবারের ওই ফোনালাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছেন রাজনাথ। হেগসেথকে তিনি জানিয়েছেন, জঙ্গি সংগঠনগুলিকে অতীতেও সমর্থন, প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সাহায্য করেছে পাকিস্তান। তবে সে প্রসঙ্গে আমেরিকার কী অবস্থান, তা প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিবৃতিতে উল্লেখ নেই।
ঘটনাচক্রে, রাজনাথের সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষাসচিবের ফোনালাপের আগে বুধবার মার্কিন বিদেশসচিব রুবিওর সঙ্গে কথা হয় ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের। ওই আলোচনার পরে মার্কিন বিদেশ দফতরের বিবৃতিতে জানানো হয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতকে সহযোগিতার কথা বলেছেন রুবিও। তবে একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তেজনা প্রশমিত করতে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বজায় রাখতে পাকিস্তানের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এগোনোর জন্যও ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছেন মার্কিন বিদেশসচিব।
গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গিহানায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়, যাঁদের মধ্যে ২৫ জনই ছিলেন পর্যটক। ওই ঘটনায় সীমান্তপারের যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে ভারত। যদিও পাকিস্তান সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে। পহেলগাঁও জঙ্গিহানার পর থেকে গত এক সপ্তাহে ভারত-পাক সম্পর্ক আরও তলানিতে গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে প্রতি রাতেই নিয়ন্ত্রণরেখায় গুলিবর্ষণ শুরু করেছে পাকিস্তানি সেনা। প্রয়োজন মতো জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনাও।
আরও পড়ুন:
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশ। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অভিযোগ নিয়ে কোনও দেশই এখনও ঘোষিত ভাবে নয়াদিল্লিকে সমর্থন জানায়নি।
দু’দেশের সম্পর্কে এই উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানও যোগাযোগ রাখছে আমেরিকার সঙ্গে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ‘ডন’-এর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা প্রশমিত করতে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছে পাকিস্তান। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ়উইক’-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আমেরিকায় পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত রিজ়ওয়ান সৈয়দ শেখ সেই আর্জি জানিয়েছেন আমেরিকার কাছে।
ঘটনাচক্রে, গত ২২ এপ্রিল যখন কাশ্মীর উপত্যকায় জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছিল, তখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স সপরিবারে ভারত সফরে ছিলেন। পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পরে জঙ্গি হামলার নিন্দা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ভারত এবং পাকিস্তান নিজেরাই কোনও না কোনও ভাবে এই সমস্যার সমাধান করবে।