গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
বিভিন্ন জনমত সমীক্ষা আর সাট্টা বাজারের ইঙ্গিত, পাঁচ বছর আগের তুলনায় আসন কমলেও দিল্লিতে টানা তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসতে চলেছে অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি (আপ)। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতাদের পাল্টা দাবি, ২৮ বছর পরে আবার দেশের রাজধানীর দখল নিতে চলেছেন তাঁরা। এই দাবি, পাল্টা দাবির মধ্যের বুধবার ৭০টি বিধানসভা আসনে তাঁদের রায় দেবেন দিল্লিবাসী।
দিল্লির ভোটে পরীক্ষা রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের কংগ্রেসেরও। তবে ক্ষমতা দখলের নয়, এক দশক পরে ৭০ আসনের বিধানসভায় খাতা খোলার। সেই সঙ্গে ১৯৯৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত দিল্লির শাসন ক্ষমতায় থাকা শতাব্দী প্রাচীন দলের নেতারা আশা করছেন, শেষবেলায় আপ-বিজেপি লড়াইয়ে তাঁরাই ‘নির্ণায়ক’ হয়ে উঠবেন। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনে শর্তসাপেক্ষে সমর্থন করবেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র আর এক শরিক আপকে। কোন দলের আশা শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হবে, তা বোঝা যাবে আগামী শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্রের সিলমোহর ভাঙার পরে।
কোন দল, কত প্রার্থী
বুধবার দিল্লির ৫৮টি অসংরক্ষিত এবং ১২টি সংরক্ষিত (তফসিলি জাতি) বিধানসভা আসনে ৬৯৯ জন প্রার্থীর ‘ভাগ্য’ নির্ধারণ করবেন ১ কোটি ৫৬ লক্ষ ভোটার। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, মোট ১৩ হাজার ৭৬৬টি বুথে হবে ভোটগ্রহণ। দিল্লিতে আপ, কংগ্রেস এবং মায়াবতীর বিএসপি (বহুজন সমাজ পার্টি) ৭০টি আসনেই লড়ছে। অন্য দিকে, বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৬৮টি আসনে। একটি করে আসন ছেড়েছে এনডিএ’র দুই সহযোগী, জেডিইউ এবং এলজেপি (রামবিলাস)-কে।
তিন বাম দল পৃথক ভাবে আটটি আসনে লড়ছে। সিপিআই ছয়, সিপিএম দুই এবং সিপিআইএমএল লিবারেশন দু’টিতে। সংখ্যালঘুপ্রধান দু’টি আসন, ওখলা এবং মুস্তাফাবাদে লড়ছে তেলঙ্গানার হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম)। আলাদা ভাবে ৩০টি আসনে লড়ছে বিজেপির সহযোগী অজিত পওয়ারের এনসিপি!
গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী কারা
দিল্লির দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার চমকপ্রদ লড়াই হতে চলেছে। নয়াদিল্লি কেন্দ্রে আপ প্রধান কেজরীওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সাহিব সিংহ বর্মার পুত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ প্রবেশকে। ওই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী করেছে আর এক প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র তথা প্রাক্তন সাংসদ সন্দীপকে। অন্য দিকে, কালকাজি কেন্দ্রে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনার বিরুদ্ধে বিজেপির টিকিটে লড়বেন আর এক প্রাক্তন সাংসদ রমেশ বিধুরি। সেখানে কংগ্রেসের প্রার্থী প্রাক্তন আপ বিধায়ক তথা বর্তমানে মহিলা কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী অলকা লাম্বা।
প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে তাঁর পুরনো আসন পটপরগঞ্জের বদলে এ বার জঙ্গপুরায় দাঁড় করিয়েছে আপ। সেখানে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী দিল্লির প্রাক্তন মেয়র কংগ্রেসের ফারহাদ সুরি এবং প্রাক্তন বিধায়ক বিজেপির তারবিন্দর সিংহ মারওয়াহা। কেরলের রাজ্যপাল তথা প্রাক্তন বিজেপি নেতা আরিফ মহম্মদ খানের ভাইঝি আরিবা এ বার ওখলায় কংগ্রেসের প্রার্থী। এই কেন্দ্রের অন্তর্গত শাহিনবাগ থেকে তিনি পুরভোটে জয়ী হয়েছিলেন।
আতিশী মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সৌরভ ভরদ্বাজ (গ্রেটার কৈলাস), মুকেশ কুমার (সুলতানপুর মাজ়রা), ইমরান হুসেন (বল্লিমারন) এ বার ভোটে লড়ছেন। দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রাক্তন মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন (শাকুর বস্তি) এবং প্রভাবশালী বিধায়ক সোমনাথ ভারতী (মালবীয় নগর) ও গোপাল রাই (বাবরপুর)-ও রয়েছেন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। বিজেপির টিকিটে লড়ছেন, বিদায়ী বিধানসভা বিরোধী বীজেন্দ্র গুপ্ত (রোহিণী), দলত্যাগী প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অরবিন্দর সিংহ লাভলি (গান্ধীনগর)। অন্য দিকে, কংগ্রেস প্রার্থী করেছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৃষ্ণা তীরথের (পটেলনগর) মতো প্রবীণ নেত্রীকে।
পুরনো ফল ‘আপে’ বাড়ে
৭০ আসনের দিল্লিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদু সংখ্যা’ ৩৬। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আপ প্রায় সাড়ে ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৬২টি আসন জিতেছিল। বিজেপি জিতেছিল ৮টিতে। পেয়েছিল সাড়ে ৩৮ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস শূন্য হাতে ফিরেছিল মাত্র ৪.২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে।
তার আগে ২০১৫-র বিধানসভা ভোটে আপ ৫৪ শতংশের বেশি ভোট পেয়ে ৬৭টি আসনে জেতে। বিজেপি ৩২ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেয়ে তিনটিতে। কংগ্রেস সে বারই শূন্যে নেমে গেলেও সাড়ে ন’শতাংশের বেশি ভোট গিয়েছিল তাদের ঝুলিতে। ২০১৩ সালের যে ভোটে কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল তাতে সাড়ে ২৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল তারা। জিতেছিল আটটি বিধানসভা কেন্দ্রে। ওই ভোটে কেজরীর দল প্রথমবার লড়তে নেমেই সাড়ে ২৯ শতাংশ ভোট পেয়ে ২৮টি আসন জেতে! বিজেপি ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়ে ৩২টি আসনে জিতে প্রথম হয়। সে সময় কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। ২০১৪ সাল থেকে টানা তিনটি লোকসভা ভোটে দিল্লির সাতটি আসনে জিতলেও মোদী জমানায় দিল্লির বিধানসভা ভোটে জয়ের মুখ দেখেনি বিজেপি।
‘ডরনা মানা হ্যায়’
ঘটনাচক্রে, এ বারের বিধানসভা ভোটে যুযুধান তিন শিবিরই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভীতিপ্রদর্শনের অভিযোগ তুলেছে। পাশাপাশি, আপ এবং কংগ্রেসের আশঙ্কা কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারের। নিজেদের সমর্থক এবং কর্মীদের প্রতি তিন দলেরই বার্তা— ভয় পাবেন না।
সোমবার প্রচারের শেষ দিনে দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান কেজরীওয়াল অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাতে কমিশনের একাংশের মদতে ‘হোম ভোটিং’-এর নামে কারচুপি করতে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি। কী সেই কারচুপি? কেজরীর দাবি, মঙ্গলবার দিল্লির বিভিন্ন বস্তির গরিব ভোটারদের কাছে (যাঁদের বড় অংশই আপের সমর্থক) কমিশনের নাম করে বিজেপির কর্মীরা নকল ইভিএম নিয়ে হাজির হবে। তার পর সেই নকল ইভিএমের বোতাম টিপিয়ে আঙুলে ‘আসল’ কালি লাগিয়ে দেওয়া হবে! এর ফলে পর দিন (বুধবার) কারচুপির ঘটনা জানতে পারলেও ওই ভোটারদের ভোটদানে অংশ নেওয়া সম্ভব হবে না।
পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নিয়ন্ত্রিত দিল্লি পুলিশের মদতে বিজেপি গুন্ডামি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কেজরী। সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপের মুখেই ভোটের পাঁচ দিন আগে আট জন বিদায়ী আপ বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। অন্য দিকে, কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধী অভিযোগ করেন, বিজেপি এবং আপ দু’পক্ষই দিল্লিতে ভোটের আগে ‘ভয়ের বাতাবরণ’ তৈরি করতে সক্রিয় হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, মূলত বস্তিবাসীদের এলাকায় (যেখানে আপের সমর্থনভিত্তি মজবুত) কেজরীর দলের কর্মীরা ভীতিপ্রদর্শন করছে। বিজেপির দাবি, কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত ক্ষমতায় থাকাকালীন চতুরতার সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিম দিল্লির বেশ কিছু আসনে পুন্যর্বিন্যাস ঘটিয়েছিলেন। এতে গেরুয়া ভোট ছত্রভঙ্গ হওয়ায় নির্ণায়ক কেন্দ্রগুলিতে দুর্বল হয়ে পড়ে বিজেপি। পরবর্তী সময়ে সেই কেন্দ্রের ভোটারদের কার্যত কিনে রেখেছিলেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। কিন্তু এ বারে আপের সমীকরণ সফল হবে না বলে আশায় শাহের দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy