Advertisement
E-Paper

‘বাবা’র সঙ্গিনীরা গ্রেফতার! গুরুজির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করতে ছাত্রীদের জোর করতেন তাঁরা, স্বীকারোক্তি পুলিশের কাছে

ধৃতেরা ম্যানেজমেন্ট কলেজের নানা পদে কর্মরত ছিলেন। ছাত্রীদের প্ররোচনা দেওয়া, ভয় দেখানোয় তাঁদের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এ জন্য অ্যাসোসিয়েট ডিন শ্বেতা শর্মা, এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর ভাবনা কপিল এবং সিনিয়র ফ্যাকল্টি কাজলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৫ ২০:০০
Delhi Baba

অশ্লীলতার দায়ে ‘বাবা’ চৈতন্যানন্দ। —ফাইল চিত্র।

দিল্লি শ্লীলতাহানিকাণ্ডে এ বার ‘বাবা’র ‘সঙ্গিনী’দের গ্রেফতার করল পুলিশ। টানা জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা সকলেই স্বীকার করেছেন যে ‘গুরুজি’র হয়ে ম্যানেজমেন্ট কলেজের ছাত্রীদের কাছে দরবার করতেন। ‘বাবা’র সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য জোর করতেন ছাত্রীদের। না শুনলে ভয় দেখাতেন, হুমকিও দিতেন। বৃহস্পতিবার ‘বাবা’ অর্থাৎ, স্বামী চৈতন্যানন্দ ওরফে পার্থসারথির ওই ‘সঙ্গিনী’দের গ্রেফতারির খবর জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।

দিল্লির শ্রীসারদা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট কলেজের ডিরেক্টর ছিলেন পার্থসারথি। তাঁর বিরুদ্ধে ১৭ জন ছাত্রী শ্লীলতাহানি এবং ভয় দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ করেন পুলিশের কাছে। ঘটনাক্রমে পলাতক ‘বাবা’কে আগরার একটি হোটেল থেকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। তার আগে বিভিন্ন ছাত্রীকে পাঠানো হোয়াট্‌সঅ্যাপ মেসেজ উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। সেখানে দেখা যায়, কোনও ছাত্রীকে বিদেশে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন চৈতন্যানন্দ। কাউকে ‘ঘনিষ্ঠ কথাবার্তা’ বলতে আকুতি জানাচ্ছেন। এক ছাত্রীকে আবার লিখেছেন, রাতে তাঁর বড্ড একা লাগছে। ছাত্রীটি যেন মেসেজ পাওয়ামাত্র আশ্রমে তাঁর ঘরে চলে যান। অভিযোগকারিণীরা দাবি করেছিলেন, ‘বাবা’র দেখভালের জন্য থাকা মহিলাকর্মী বা সঙ্গিনীরা তাঁদের জোর করতেন ‘গুরুজি’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জন্য। তাঁদের কথা না শুনলে নানা ভাবে হেনস্থা করা হত। হুমকি দেওয়া হত। আগেই ওই তিন মহিলা সঙ্গীকে ডেকে তাঁদের বয়ান রেকর্ড করেছিল পুলিশ। এ বার ধৃত ‘বাবা’কে জেরা তিন মহিলাকে পাকড়াও করা হল। তদন্তের প্রয়োজনে সকলকেই নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হবে।

ধৃত তিন মহিলা ম্যানেজমেন্ট কলেজের নানা পদে কর্মরত ছিলেন। ছাত্রীদের প্ররোচনা দেওয়া, ভয় দেখানো এবং প্রমাণ নষ্ট করার জন্য তাঁদের ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি পুলিশের। সে জন্য কলেজের অ্যাসোসিয়েট ডিন শ্বেতা শর্মা, এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর ভাবনা কপিল এবং সিনিয়র ফ্যাকল্টি কাজল— এই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাঁরা স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা ‘বাবা’র নির্দেশে কাজ করতেন এবং শৃঙ্খলা ও অন্যান্য বিষয়ের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, দিল্লির ‘বাবা’ ওড়িশার আদি বাসিন্দা। দক্ষিণ ভারতের একটি ধর্মীয় সংগঠনের দিল্লির মুখ ছিলেন তিনি। থাকতেন বসন্তকুঞ্জে সংগঠনের আশ্রমে। তা ছাড়া একটি নাম করা ম্যানেজমেন্ট কলেজের ডিরেক্টর ছিলেন। ওই পদের অপব্যবহার করে তিনি ছাত্রীদের যৌন হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। গ্রেফতারির পরে আশ্রমের যে ঘরে ‘বাবা’ থাকতেন, সেখানে অভিযান চালানো হয়েছিল। ঘর থেকে পাওয়া গিয়েছে অশ্লীল ভিডিয়ো, ছবি, সেক্স টয় ইত্যাদি। এ ছাড়া বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বানানো বেশ কিছু ছবি ছিল। কোনওটিতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা। কোনও ছবিতে আবার আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ড বারাক ওবামার সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন।

তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওই ছবিগুলো ভুয়ো। নিজে কতটা প্রভাবশালী, সেটা জাহির করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবিগুলো বানিয়েছিলেন ‘বাবা।’ তা ছাড়া ভুয়ো দূতাবাসের নম্বরপ্লেট ব্যবহার করার জন্য চৈতন্যানন্দের একটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে ৬২ বছর বয়সি ‘বাবা’ তাঁর কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নন। তাঁর মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে নানা তথ্য পাওয়া গিয়েছে। যা এই মামলার জন্য জরুরি তথ্যপ্রমাণ হতে পারে। এক পুলিশকর্তা জানান, কিছু ছাত্রীর যোগব্যায়ামের ছবিতে অশালীন মন্তব্য করেছেন বাবা, এমন ‘দৃষ্টান্ত’ও রয়েছে। অন্য দিকে, যে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘বাবা’ যুক্ত ছিলেন, তাঁরা সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে জানিয়েছেন আইন অনুযায়ী যেন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়। ‘বাবা’র একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং স্থায়ী আমানত ‘ফ্রিজ়’ করে দিয়েছে পুলিশ। সব মিলিয়ে ৮ কোটি টাকা রয়েছে ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে।

Delhi Police arrest Sexual Harassment Crime
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy